০১:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০১ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বৌদ্ধ পন্ডিত সুনীতিকুমার পাঠক

  • ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট সময় ০২:৪৪:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৫৯০ বার পড়া হয়েছে

প্রয়াত হলেন রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার প্রাপ্ত বৌদ্ধ পণ্ডিত সুনীতি কুমার পাঠক।  ৷ বৌদ্ধ পণ্ডিত সুনীতিকুমার পাঠক বৃহস্পতিবার ১০১ বছর বয়সে শান্তিনিকেতনের অবনপল্লীর বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯২৪ সালের ১ মে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মলিঘাঁটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

১৯৫৪ সালে তাঁর হাত ধরেই বিশ্বভারতীতে ভারত-তিব্বতী চর্চা শুরু হয়েছিল ৷ হিমালয়ের দুর্গম এলাকা-সহ দেশ, বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় পায়ে হেঁটে ঘুরে তিনি সংগ্রহ করেছিলেন একাধিক মূল্যবান পুঁথি ৷
তাঁর কথা শুনে শুনে যিনি লিখে যেতেন সেই রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম বলেন, ১০১ পার হয়ে ১০২-এর কাছাকাছি তাঁর বয়স হয়েছিল ৷ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত উনি বলে যেতেন, আমি লিখতাম ৷ ওঁর মতো পণ্ডিত ব্যক্তি আমি আর দেখিনি ৷ আমাদের খুব খারাপ লাগছে।” পণ্ডিত সুনীতি কুমার পাঠকের দখলে ছিল বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, তিব্বতী, মঙ্গোলিয়া চিনা, পালি, প্রাকৃত, সংস্কৃতের মতো ৯টি ভাষা। এমনকী, সব-কটি ভাষাতেই প্রবন্ধ লেখার দক্ষতা ছিল তাঁর। লিখেওছেন তিনি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, অধ্যাপক সিআর লামা ও সুনীতিবাবুর হাত ধরেই ১৯৫৪ সালে বিশ্বভারতীতে ভারত-তিব্বতী চর্চা বিভাগ শুরু হয়েছিল। গবেষণার সুবাদে তাঁর সংগ্রহে ছিল প্রাচীন তালপাতার পুঁথির ভাণ্ডার। যা ভাষাচর্চার জগতে অমূল্য সম্পদ।

সেমিনারে আমন্ত্রিত হয়ে এক সময় চষে বেড়িয়েছিলেন ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলিতে।  ১৯২৪ সালের ১ মে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মলিঘাঁটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুনীতিকুমার পাঠক। ছেলেবেলাতেই মা’কে হারিয়েছিলেন। মামার বাড়িতেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা। সেখানেই পড়াশোনা। পরবর্তীতে কলকাতার তীর্থপতি ইনস্টিটিউশন, সংস্কৃতি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা। ১৯৩৮ সালে একবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখার সুযোগও হয়েছিল তাঁর। ছাত্রবৃত্তি নিয়ে তিব্বতী ভাষা শিক্ষা ৷ প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় কালিম্পং-এ গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

১৯৫৪ সালে ২০৫ টাকা বেতনে বিশ্বভারতীর পুঁথি বিভাগে যোগদান করেছিলেন সুনীতিকুমার পাঠক। সেই বছরই অধ্যাপক সিআর লামার সঙ্গে যৌথ ভাবে বিশ্বভারতীতে ভারত-তিব্বতী চর্চা বিভাগের প্রবর্তন করেছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি নিজেও বিশ্বভারতীর চিনাভবনে চিনা ভাষার শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে ভারত সরকারের নির্দেশে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন সুনীতিবাবু। ভারতীয় সৈন্যদের সহযোগিতার জন্য লাদাখ সীমান্তে তিব্বতী ভাষার বিভিন্ন তথ্য ইংরেজিতে অনুবাদের কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে পুনরায় বিশ্বভারতীতে যোগদান করেছিলেন ৷ ১৯৮৪ সালে বিশ্বভারতী থেকে অবসর নিয়েছিলেন।

এক সময় হিমালয়ের পাদদেশে প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় গুটিকতক বসতি নিয়ে গড়ে ওঠা গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেরিয়েছিলেন সুনীতিবাবু। সরকার তাঁকে গবেষণার জন্য গাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু, তা তিনি নেননি। পায়ে হেঁটে গ্রাম ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন মানুষের মুখের ভাষা। অর্থাৎ, ভাষা বৈচিত্র্য, ভাষার ব্যবহার, ধরন, প্রকৃতি নিয়ে তাঁর গবেষণা। এছাড়াও, বৌদ্ধতন্ত্র, বৌদ্ধশাস্ত্র নিয়ে তাঁর গবেষণা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত দুইশ বেশি প্রবন্ধ লিখেছিলেন।

শেয়ার করুন
আরও সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয়

সুহৃদ চৌধুরী শুধু মানুষ গড়ার কারিগর নয়, ছিলেন একজন সমাজহিতৈষী ও দক্ষ সংগঠক

You cannot copy content of this page

১০১ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বৌদ্ধ পন্ডিত সুনীতিকুমার পাঠক

আপডেট সময় ০২:৪৪:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রয়াত হলেন রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার প্রাপ্ত বৌদ্ধ পণ্ডিত সুনীতি কুমার পাঠক।  ৷ বৌদ্ধ পণ্ডিত সুনীতিকুমার পাঠক বৃহস্পতিবার ১০১ বছর বয়সে শান্তিনিকেতনের অবনপল্লীর বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯২৪ সালের ১ মে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মলিঘাঁটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

১৯৫৪ সালে তাঁর হাত ধরেই বিশ্বভারতীতে ভারত-তিব্বতী চর্চা শুরু হয়েছিল ৷ হিমালয়ের দুর্গম এলাকা-সহ দেশ, বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় পায়ে হেঁটে ঘুরে তিনি সংগ্রহ করেছিলেন একাধিক মূল্যবান পুঁথি ৷
তাঁর কথা শুনে শুনে যিনি লিখে যেতেন সেই রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম বলেন, ১০১ পার হয়ে ১০২-এর কাছাকাছি তাঁর বয়স হয়েছিল ৷ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত উনি বলে যেতেন, আমি লিখতাম ৷ ওঁর মতো পণ্ডিত ব্যক্তি আমি আর দেখিনি ৷ আমাদের খুব খারাপ লাগছে।” পণ্ডিত সুনীতি কুমার পাঠকের দখলে ছিল বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, তিব্বতী, মঙ্গোলিয়া চিনা, পালি, প্রাকৃত, সংস্কৃতের মতো ৯টি ভাষা। এমনকী, সব-কটি ভাষাতেই প্রবন্ধ লেখার দক্ষতা ছিল তাঁর। লিখেওছেন তিনি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, অধ্যাপক সিআর লামা ও সুনীতিবাবুর হাত ধরেই ১৯৫৪ সালে বিশ্বভারতীতে ভারত-তিব্বতী চর্চা বিভাগ শুরু হয়েছিল। গবেষণার সুবাদে তাঁর সংগ্রহে ছিল প্রাচীন তালপাতার পুঁথির ভাণ্ডার। যা ভাষাচর্চার জগতে অমূল্য সম্পদ।

সেমিনারে আমন্ত্রিত হয়ে এক সময় চষে বেড়িয়েছিলেন ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলিতে।  ১৯২৪ সালের ১ মে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মলিঘাঁটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুনীতিকুমার পাঠক। ছেলেবেলাতেই মা’কে হারিয়েছিলেন। মামার বাড়িতেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা। সেখানেই পড়াশোনা। পরবর্তীতে কলকাতার তীর্থপতি ইনস্টিটিউশন, সংস্কৃতি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা। ১৯৩৮ সালে একবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখার সুযোগও হয়েছিল তাঁর। ছাত্রবৃত্তি নিয়ে তিব্বতী ভাষা শিক্ষা ৷ প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় কালিম্পং-এ গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

১৯৫৪ সালে ২০৫ টাকা বেতনে বিশ্বভারতীর পুঁথি বিভাগে যোগদান করেছিলেন সুনীতিকুমার পাঠক। সেই বছরই অধ্যাপক সিআর লামার সঙ্গে যৌথ ভাবে বিশ্বভারতীতে ভারত-তিব্বতী চর্চা বিভাগের প্রবর্তন করেছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি নিজেও বিশ্বভারতীর চিনাভবনে চিনা ভাষার শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে ভারত সরকারের নির্দেশে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন সুনীতিবাবু। ভারতীয় সৈন্যদের সহযোগিতার জন্য লাদাখ সীমান্তে তিব্বতী ভাষার বিভিন্ন তথ্য ইংরেজিতে অনুবাদের কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে পুনরায় বিশ্বভারতীতে যোগদান করেছিলেন ৷ ১৯৮৪ সালে বিশ্বভারতী থেকে অবসর নিয়েছিলেন।

এক সময় হিমালয়ের পাদদেশে প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় গুটিকতক বসতি নিয়ে গড়ে ওঠা গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেরিয়েছিলেন সুনীতিবাবু। সরকার তাঁকে গবেষণার জন্য গাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু, তা তিনি নেননি। পায়ে হেঁটে গ্রাম ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন মানুষের মুখের ভাষা। অর্থাৎ, ভাষা বৈচিত্র্য, ভাষার ব্যবহার, ধরন, প্রকৃতি নিয়ে তাঁর গবেষণা। এছাড়াও, বৌদ্ধতন্ত্র, বৌদ্ধশাস্ত্র নিয়ে তাঁর গবেষণা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত দুইশ বেশি প্রবন্ধ লিখেছিলেন।