ফটিকছড়ির ১৮ নং ইউনিয়নের দক্ষিণ ধর্মপুর ফরাঙ্গীরখীল গৌতম মুনি বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গনে গত বুধবার (১৩ নভেম্বর ) বান্দরবান আর্যগুহা ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বৌদ্ধ বিহারের প্রধান অধ্যক্ষ ডঃ এফ দীপংকর মহাথের ভিক্ষু হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচারসহ নতুন সরকার ও প্রশাসনের নিকট হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার কামনা করে থাইল্যান্ড থেকে ভদন্ত মহিপাল ভিক্ষুর মাধ্যমে রাজকীয় পেটিকা বাংলাদেশে নিয়ে এসে রাজকীয়ভাবে মহাসমারোহে পেটিকাবদ্ধ অনুষ্ঠান ও হাজারো পুণ্যার্থীর আগমনে সর্ববৃহৎ দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপিত হয়।
মহামতি গৌতম বুদ্ধের শান্তি ও মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জগতের সকল ধর্মের সকল সম্প্রদায়সহ সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনা করে ডঃ এফ দীপংকর ভিক্ষুর জম্মগ্রাম ফটিকছড়ির দক্ষিণ ধর্মপুর ফরাঙ্গীরখীল গ্রামে এদিন সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম। এদিন ভোর ছয়টায় বিশ্বশান্তি কামনায় পরিত্রাণ পাঠ, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করার মাধ্যমে সকাল ৯ ঘটিকায় বিগত ৪ মাস আগে ১৩ জুলাই শনিবার বান্দরবানে সন্ত্রাসীরা নাটক সাজিয়ে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হত্যা করা ডঃ এফ দীপংকর ভিক্ষুর মরদেহ ভান্তের নিজগ্রামে রাজকীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পেটিকাবদ্ধ করা হয়।
এসময় ৪ পর্বের অনুষ্ঠান মালায় সকাল ১০ ঘটিকায় অষ্টগ্রাম ভিক্ষু সমিতির সাধারণ সম্পাদক ভদন্ত সুমনতিষ্য মহাস্থবিরের সভাপতিত্বে অষ্ঠপরিস্কারসহ সংঘদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে শতাধিক ভিক্ষু সংঘের উপস্থিতিতে উপস্থিত ছিলেন ভদন্ত সুগতপ্রিয় মহাস্থবির,সাধনানন্দ মহাস্থবির,বিপুলাবংশ থেরো,শান্তরক্ষিত মহাস্থবির,জি.নিরোধানন্দ ভিক্ষু এবং প্রয়াত ডঃ এফ দীপংকর মহাথের (গুরুভান্তের) অন্তেবাসী শিষ্যমন্ডলী।
পঞ্চশীল প্রার্থনা, ভিক্ষু সংঘের পিন্ডদান ও অতিথি আপ্যায়নের পর ৩য় পর্বের অনুষ্ঠান দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হয়। ভিক্ষু সংঘের আসন গ্রহণ, মঙ্গলাচরন পাঠ ও ইপা বড়ুয়া,তিষা বড়ুয়া, বৃষ্টি বড়ুয়া,জয়া বড়ুয়া ও অর্পিতা বড়ুয়ার উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে কঠিন চীবর দান উদ্বোধন করেন ফরাঙ্গীরখীল গৌতম মুনি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধানন্দ ভিক্ষু।বাবু রতন বড়ুয়ার পঞ্চশীল প্রার্থনা ও অধ্যাপক মানিক বড়ুয়ার সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মাষ্টার দুলাল কান্তি বড়ুয়া,লায়ন নিপু বড়ুয়া, উদযাপন পরিষদের সভাপতি আনন্দ বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক রাজু বড়ুয়া। অষ্টগ্রাম ভিক্ষু সমিতির সভাপতি ভদন্ত সুগতপ্রিয় মহাস্থবিরের সভাপতিত্বে এতে প্রধান ধর্মদেশক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিরসরাই -সীতাকুন্ড ভিক্ষু সমিতির সভাপতি বিশ্ব নাগরিক ডঃ ধর্মীকীর্তি মহাস্থবির। অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভদন্ত এল ধর্মরত্ন থেরো,ভদন্ত বিজয়ানন্দ ভিক্ষু, ভদন্ত জ্যোতিশাক্য স্হবির, ভদন্ত শান্তি জ্যোতি থেরো,ভদন্ত বিনয়শ্রী ভিক্ষু,ভদন্ত বোধিজ্ঞান ভিক্ষু,ভদন্ত দীপবংশ স্হবির,ভদন্ত সুমনালংকার ভিক্ষু,ভদন্ত উত্তমানন্দ ভিক্ষু, ভদন্ত মৈত্রীপাল ভিক্ষু,ভদন্ত অভয়ানন্দ ভিক্ষু, ভদন্ত আদিপ্রিয় ভিক্ষু প্রমূখ।
এছাড়াও ডঃ এফ দীপংকর মহাথের ভিক্ষুর বড় ভাই ভদন্ত মহাকাশ্যপ ভিক্ষু,মাতা পুঁটি রানী বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বান্দরবানের ফারুয়া থেকে আগত পার্বত্য অঞ্চলের অনেক পুণ্যার্থীসহ গুরুভান্তের ভক্তবৃন্দ ও অষ্টগ্রামের উপাসক উপাসিকাসহ দূরদূরান্ত থেকে আগত মানুষের ঢল নামে এই অনুষ্ঠানে এফ. দীপংকর ভিক্ষুকে এক নজর দেখার জন্য। প্রধান ধর্মদেশক ডঃ ধর্মকীর্তি ভিক্ষু বলেন,প্রায়ই পাঁচ মাস কোন মেডিসিন ছাড়া পূতপবিত্র এফ. দীপংকর ভিক্ষুকে সংরক্ষণ করলেও শরীর এখনও জল জল করে জ্বলছে এবং শরীরে চিকচিক আভা ফুটে উঠেছে এটা হলো শীলবান ভিক্ষুর লক্ষণ।তিনি আরো বলেন ঐতিহাসিক এই পেটিকাবদ্ধ অনুষ্ঠান,এই কঠিন চীবর দান এবং দীপংকর ভিক্ষুর ইতিহাস স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং ইতিহাস থেকে কখনো মুছবে না। ভিক্ষু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি বলে সরকার পতন হয়েছে, প্রশাসনের পতন হয়েছে এ নজির দৃশ্যমান।দেশের আদালতে দীপংকর ভিক্ষু হত্যার বিচার না হলেও ধর্মের আদালত হতে কেউ রক্ষা পাবে না। হত্যাকারীদের পতন শুরু হয়ে গেছে বলে তিনি বলেন,ভান্তের নামে ট্রাস্ট গঠন করে আগামীতে দেশ ও আন্তর্জাতিক ভাবে বিজ্ঞ ভিক্ষু ও দায়ক সংঘের সমন্বয়ে বৃহত্তর কমিটি গঠন করে ভান্তের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান করলে তা প্রশংসনীয় হবে।
পরিশেষে সেনাবাহিনী, পুলিশ, স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়সহ ফরাঙ্গীরখীল বৌদ্ধ যুব পরিষদ ও সকল প্রবাসীদের সার্বিক সহযোগিতায় সুন্দর পরিবেশে কঠিন চীবর উৎসর্গের মাধ্যমে তৃতীয় পর্ব থেকে রাতে চতুর্থ পর্বে বিহারাধ্যক্ষ বুদ্ধানন্দ ভিক্ষুর আর্থিক তত্ত্বাবধানে এবং মিরসরাই মায়ানী জন্মজাত শৈলাস বড়ুয়া ও তাঁর দলের মনোরম বুদ্ধ কীর্তন পরিবেশনার মধ্য দিয়ে নতুন সরকারের প্রতি দীপংকর ভিক্ষু হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করে উদযাপন কমিটি অনুষ্ঠানের শুভ সমাপ্তি ঘোষণা করেন।