কল্পতরু: যে বৃক্ষ হতে কল্পনানুযায়ী দ্রব্য পাওয়া যায়, তাকে কল্পতরু বলে।স্বর্গীয় কল্পতরুর বর্ণনা হতেই এই “কল্পতরু” দানের সৃষ্টি। কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানের দিন আমরা সাধারণত এ কল্পতরু দান দিয়ে থাকি। বাঁশ, গাছ দিয়ে বৃক্ষের অনুরূপ মনোরম কাঠামো তৈরী করে, ফুল ও রঙ্গিন কাগজে সুসজ্জিত করতঃ তাতে ইচ্ছানুযায়ী দানীয় দ্রব্য, ভিক্খু অথবা বিহারের ব্যবহার্য্য ছোট বড় যাবতীয় দানীয় দ্রব্যে সুসজ্জিত করে এ কল্পতরু দান করা হয়।
কল্পতরু দানের পুণ্যফল: জনৈক ভিক্খু পূর্বজন্মে “কল্পতরু” দান করে যে পুণ্যফল ভোগ করেছিলেন তা তিনি অরহত্ব ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দিব্য দৃষ্টিতে দর্শন করলেন। শ্রদ্ধেয় ভন্তের সেই পুণ্য কাহিনী স্বীয় মুখে যা প্রকাশ করেছেন, তা সর্বসাধারণের অবগতির জন্য নিম্নে সংক্ষেপে প্রকাশ করা হল- আমি সিদ্ধার্থ ভগবানের শ্রেষ্ঠ ধাতু-স্তুপ সম্মুখে বিচিত্র বস্ত্রাদি ঝুলিয়ে দিয়ে একটি কল্পতরু স্থাপন করেছিলাম।
• আমার সেই পুণ্যকর্মের ফলে, আমি দেব-মনুষ্য কুলের যে কোন স্থানে উৎপন্ন হই না কেন, আমার গৃহদ্বারে সর্বদা “কল্পতরু” উৎপন্ন হয়ে শোভা পেত।
• আমি আমার পরিষদবৃন্দ এবং আমার আরও অন্যান্য আশ্রিত, আমরা সকলেই ঐ কল্পতরু হতে ইচ্ছানুযায়ী বস্তু গ্রহণ করে সর্বদা ব্যবহার করতাম।
• আমি চুরানব্বই কল্প পূর্বে যেই কল্পতরু স্থাপন করেছিলাম, তৎ পুণ্যফলে দুর্গতি কি, তা জানি না। ইহা কল্পতরু দানেরই ফল।
• এ হতে সপ্ত কল্প পূর্বে সুচেল নামক ক্ষত্রিয় হয়ে আটবার জন্মগ্রহণ করেছি। সেই আটবার সপ্তরত্ন সম্পন্ন ও সৈন্য-সামন্তে মহাপরক্রমশালী চক্রবর্ত্তী রাজা হয়েছি।• এখন সেই কৃতকর্মের ফলে চতুর্বিধ প্রতিসম্ভিদা, অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়বিধ অভিজ্ঞাসম্পন্ন অরহত্ব জ্ঞান লাভ করেছি।
পরিশেষ: ইহলোকে প্রত্যেক বছর এই কল্পতরু দান দর্শনে অন্তরে এই পুণ্যস্মৃতি রেখাপাত হয়। মৃত্যুর সময় কর্ম নিমিত্ত দেখা যায় সেই কুশল কর্ম। এতে মানব সুগতি লাভ করে। এ মহান কল্যাণ চিন্তা করে জ্ঞানীগণ কল্পতরু দানের উদ্ভাবন করেছিলেন। ইহলোক ও পরলোকের কথা চিন্তা করে দুঃখ আর অপ্রাপ্তিতেপূর্ণ জীবনকে সৌভাগ্যশীল এবং সমৃদ্ধময় করতে প্রত্যেক বৌদ্ধদেরই কল্পতরু দানময় পুণ্যকর্ম সম্পাদন করা উচিত।