০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৌদ্ধ পতাকার ইতিবৃত্ত

নীল, হলুদ, লাল,সাদা, কমলা বা কাষায় এ পাঁচ বর্ণের ক্ষৈতিজ (Horizontal) এবং সব শেষে উর্ধ হতে ( Vertical) এ পাঁচ বর্ণের পট্টি দ্বারা নির্মিত পতাকাকে বৌদ্ধ পতাকা ( Buddhist Flag) বলা হয়। ইহাকে আবার অনেকে পঞ্চশীল পতাকাও বলে থাকেন। এ পতাকারও নিজস্ব এক কাহিনী বা ইতিহাস রয়েছে।

Theosophical Society’র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকট (১৮৩২-১৯০৭) এবং ম্যাডাম ব্লাভাৎস্কি (১৮৩১-১৮৯১)। হেনরি অলকট ছিলেন আমেরিকার সেনাবাহিনীর অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং মেডাম ব্লাভাৎস্কি ছিলেন বিখ্যাত রাশিয়ান লেখিকা। থিওসফিকেল সোসাইটি কোন এক ধর্মের অথবা সম্প্রদায়ের পোষক বা প্রচারক সংস্থা ছিলনা। বরং তা সমস্ত ধর্ম সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ সমন্বয়ের পোষক ছিল। এজন্য এ সংস্থায় পূর্বাগ্রহ ছাড়াই সমস্ত ধার্মিক বিচার ধারার অধ্যয়ন, গবেষণা এবং তদনুসারে অনুশীলন হয়ে থাকত।

অধ্যয়ন এবং অনুশীলন করতে করতে কর্নেল হেনরী স্টীল অলকট বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি গভীরভাবে আকর্ষিত হলেন এবং তিনি ১৮৮০ সালে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধর্মকে হৃদয়ঙ্গম করে নিয়েছিলেন। সাথে সাথে তিনি শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধর্মের উত্থানের গতিবিধিতে সক্রিয় অঙ্গ হয়ে গেলেন। সেখানে তিনি ৪০০ এর অধিক বৌদ্ধ বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়ের স্থাপনা করেছিলেন। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি খুবই প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। যেমন- আনন্দ, নালন্দা, মহিন্দ, ধম্মরাজা ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ। এগুলি তাঁরই হাতে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের মধ্যে ছিল অন্যতম।

তাঁর শান্তিপূর্ণ লোকতান্ত্রিক আন্দোলনের কারণে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধদের ১৮৮৪ সালে এক বড় সফলতা লাভ হয়েছিল। সফলতা ইহাই ছিল যে, বৃটিশ সরকার হতে বৈশাখ ডে বা বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে তিনি সাধারণ ছুটি মঞ্জুর করিয়েছিলেন। যা ১৮৮৫ সালের বুদ্ধ পূর্ণিমা হতে কার্যকরী হয়েছিল।

এ সফলতার পরে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধেরা ‘কলম্বো কমিটি’ নামে এক সংস্থা বানিয়েছিলেন। সেখানে কর্নেল হেনরী স্টীল অলকটও ছিলেন অন্যতম একজন সদস্য। সে কমিটিতে প্রস্তাব এসেছিল যে, বৌদ্ধদের জন্য বিশ্বে এক পতাকা হওয়া উচিত, যা হবে বৌদ্ধদের অস্মিতা বা গৌরবের প্রতীক। এ প্রস্তাব এসেছিল কর্নেল হেনরী স্টীল অলকটের কাছ হতে। এ প্রস্তাব কমিটির সকল সদস্যেরা সাদরে সমর্থন করেছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, এ পতাকা আগামী ২৮শে মে, ১৮৮৫ সালের বুদ্ধ জয়ন্তীর সময় উত্তোলন করা হবে। এভাবে কলম্বো কমিটির দ্বারা নির্মিত পতাকা অস্তিত্বে এসেছিল, যা আজ বিশ্ব বৌদ্ধ পতাকা বা পঞ্চশীল ধ্বজ নামে বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে।

বুদ্ধ পূর্ণিমায় উত্তোলন করার পূর্বে ১৭ই এপ্রিল, ১৮৮৫ সালে ‘কলম্বো কমিটি’ দ্বারা এ পতাকা সার্বজনীন করা হয়েছিল অর্থাৎ সার্বজনীনভাবে সকলের অনুমোদন লাভ করেছিল। এ বৌদ্ধ পতাকা শ্রীলঙ্কার কোটাহেনায় দীপদুত্থরাময়া বৌদ্ধ বিহারে ১৮৮৫ সালে বুদ্ধ পূর্ণিমায় ২৮ শে মে তারিখে প্রথমবার শ্রীলঙ্কার বরিষ্ট ধর্মীয় গুরু পূজ্য মিগেত্তুবন্তে গুণানন্দ নায়ক থেরোর দ্বারা বিশাল বৌদ্ধ জন সমূহের উপস্থিতিতে উত্তোলন করা হয়েছিল।

কালান্তরে কর্নেল হেনরী স্টীল অলকটের পরামর্শে এ পতাকার আকার রাষ্ট্রীয় পতাকার আকারের মত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। সেখানে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং কর্নেল স্টীল অলকট কর্তৃক অন্তিম রূপ প্রদান করা হয়েছিল। তা পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৮৮৬ সালে বুদ্ধ জয়ন্তী উপলক্ষে উত্তোলন করা হয়েছিল। তখন হতে আজকের তারিখ পর্যন্ত সে পতাকাই যথাযথভাবে চালু রয়েছে এবং সমগ্র বিশ্বে বৌদ্ধদের ইহা অস্মিতা বা গৌরবের প্রতীক হয়ে রয়েছে।

এ পতাকার বৈশ্বিক স্বীকৃতিরও এক ইতিহাস রয়েছে। ইহার মুখ্য অবদান অধ্যাপক ড. জি. পি. মালালাশেখরের রয়েছে, যাঁর অধ্যক্ষতা এবং প্রচেষ্টায় শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সঙ্ঘ ( World Fellowship of Buddhists) স্থাপিত হয়েছিল এবং ইহার প্রথম সভাও কলম্বোতে আয়োজিত হয়েছিল। ২৫শে মে, ১৯৫০ সালে দন্তধাতুর বুদ্ধ বিহারের সভাগারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সম্মেলন। এ বিহারেই সংরক্ষণ করা হয়েছে ভগবান বুদ্ধের পবিত্র দন্ত ধাতু।

অধ্যাপক ড. জি. পি. মালালাশেখরে ছিলেন শ্রীলঙ্কা ও বিশ্ব বৌদ্ধগগণে এক অনন্য সাধারণ বিদ্বান ও প্রতিভাশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি পালি, সিংহলী, সংস্কৃত, ইংরেজী, লেটিন, গ্রীক, ফরাসী ভাষা সমূহের প্রকাণ্ড বিদ্বান ছিলেন। World Buddhists Fellowship এর তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। তিনি ছিলেন বোধিসত্ব বাবা সাহেব ড. ভীমরাও আম্বেদকরের ঘনিষ্ট মিত্র। তিনি বাবা সাহেবকে ২৫শে মে, ১৯৫০ সালে আয়োজিত বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘের সম্মেলনে কলম্বোতে আমন্ত্রণ করেছিলেন।

এ সম্মেলনে যাওয়ার পূর্বে বাবা সাহেব দিল্লিতে মহাবোধি বুদ্ধ বিহারে পূজ্য ভদন্ত ড. এইচ. শ্রদ্ধাতিষ্য থেরোর উপস্হিতিতে পূজ্য ভদন্ত এল. আর্যবংশ নায়ক থেরোর নিকট হতে ২রা মে, ১৯৫০ সালে ত্রিশরণ সহ পঞ্চশীল গ্রহণ করে দীক্ষা নিয়েছিলেন। অর্থাৎ World Fellowship of Buddhists এর সম্মেলনে বাবা সাহেব একজন বৌদ্ধরূপে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।

২৫শে মে, ১৯৫০ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে আসা বৌদ্ধ সঙ্ঘের প্রমুখ ভিক্ষুগণ এবং বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দের সম্মুখে অধ্যাপক ড. জি. পি, মালালাশেখরে কর্তৃক বাবা সাহেব ড. আম্বেদকরকে ‘ Living Bodhisatta’ বা জীবন্ত বোধিসত্ব বলে সম্বোধন করেছিলেন।

সম্যক প্রকাশনের সংস্থাপক শ্রী শান্তি স্বরূস বৌদ্ধ উল্লেখ করেছেন যে, ২রা মে, ১৯৫০ সালে দিল্লীতে বৌদ্ধ ধর্মের দীক্ষা নেওয়ার সময় বাবা সাহেবের সাথে সমতা সৈনিক দলের ১০১ জন নব যুবকও সদ্ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। যার সাক্ষীরূপে দিল্লীর করোলবাগের শ্রী কিশোরী লাল গৌতমজী এখনও জীবিত রয়েছেন।

অধ্যাপক ড. জি. পি ( গুণপাল প্রিয়সেন) মালালাশেখরে ছিলেন Buddhist Encyclopedia’র প্রধান সম্পাদক এবং ‘Dictionary of Pali Proper Names’ নামক বিখ্যাত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের রচয়িতা। এগুলি ছাড়াও তিনি ‘Pali-Sinhali-English শব্দকোষ’ এবং ‘গুণপাল সিংহলী-ইংরেজী শব্দকোষ’ গ্রন্থের মত অনেক কালজয়ী পুস্তকের গ্রন্থকার।

অধ্যাপক ড. জি. পি. মালালাশেখরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান হল ২৫মে, ১৯৫০ সালের World Fellowship of Buddhists সম্মেলনের সম্মুখে যেখানে বাবা সাহেবও উপস্থিত ছিলেন এবং জাপানের বিশ্ববিখ্যাত জেন বিদ্বান অধ্যাপক ড. ডি. টি. সুজুকিও উপস্থিত ছিলেন তিনি সে বৌদ্ধ পতাকাকে সমগ্র বৌদ্ধ জগত দ্বারা গ্রহণ করার প্রস্তাব রেখেছিলেন, যা সে সম্মেলনে সর্ব সম্মতভাবে সাধুবাদের সাথে গৃহীত হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, ভারতের রাষ্ট্রীয় পতাকায় ধর্মচক্র সমাবেশিত করে ইহাকে বৌদ্ধ স্বরূপ দেওয়ার অবদান যেমন বাবা সাহেবের রয়েছে, তেমনি ধর্মধ্বজ বা পতাকার বৈশ্বিক মান্যতা দেওয়ার ঘটনায়ও তাঁর উপস্থিতি রয়েছে। অফিসিয়ালভাবে এ পতাকাকে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ পতাকার মর্যাদা ১৯৫২ সালে World Fellowship of Buddhists এর সম্মেলনে লাভ হয়েছিল।

দৃশ্যত: এ ধর্মীয় পতাকায় পাঁচ বর্ণ দাঁড়ানো পংক্তিবদ্ধভাবে রয়েছে। এ কারণে অনেকে ইহাকে পঞ্চশীল ধ্বজও বলে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এখানে পাঁচ পংক্তি নয়, ছয় পংক্তি রয়েছে। ষষ্ট দাঁড়ানো পংক্তিতে উপরের পাঁচ বর্ণের মিশ্রণ রয়েছে। তথাপি এ পতাকাকে পঞ্চশীল ধ্বজ বা পতাকা বলে সম্বোধন করে এ বিষয়কে আরও সঙ্কেত প্রদান করা হচ্ছে যে, বৌদ্ধ পঞ্চশীলকে কতই না মহত্ব। যদি বর্ণ সমূহের সংখ্যার ভাষাতেই বলা যায়, তাহলে ইহাকে পঞ্চশীল না বলে ষড়ায়তন ধ্বজ বলা অধিকতর যুক্তিযুক্ত হবে। কিন্তু ধর্ম পতাকারূপে ইহার বৈশ্বিক মান্যতা তথা গ্রহণীয়তা রয়েছে। পঞ্চশীল তথা ষড়ায়তন এমনিতে কথাবার্তায় বলা যেতে পারে। কিন্তু ‘ধর্ম পতাকা’ বা Buddhist Flag’ ই হল ইহার সার্বভৌমিক সংজ্ঞা।

ধর্মীয় পতাকার ছয় বর্ণেরও রয়েছে বিশেষ মহত্ব। বৌদ্ধ গ্রন্থ সমূহে এরূপ উল্লেখ পাওয়া যায় যে, ভগবান বুদ্ধের শরীর হতে ছয় বর্ণের আভামণ্ডল বা রশ্মি (Aura) প্রস্ফুটিত হয়ে থাকত। সেগুলি হল নীলা, হলুদ, লাল, সাদা, কাষায় বা কমলা, এবং এ পাঁচ বর্ণের মিশ্রিত বর্ণকে বলা হয় প্রভাস্বর। এ ছয়টি বর্ণ বুদ্ধত্ব বা ধর্মের পরিপূর্ণতার প্রতীক। বৌদ্ধদের স্মরণ রাখার জন্য ইহা হল অনুস্মারক বা Remind এর মত। এ পতাকার ছয় বর্ণের প্রতীকার্থ নিম্নে প্রদান করা হল।

১) নীল:- বলা হয়ে থাকে যে, নীল বর্ণের আভামণ্ডল ভগবান বুদ্ধের মস্তকের চারি দিকে দেখা যেত। যা হল প্রাণীমাত্রের প্রতি তাঁর অখণ্ডিত করুণার প্রতীক। এ প্রকার নীল বর্ণ হল মৈত্রী, করুণা ও শান্তির প্রতীক। ইহা আকাশ এবং সাগরের অসীম নীল বর্ণের মত ব্যাপকতার সঙ্কেত প্রদান করে থাকে।

২) হলুদ:- হলুদ বর্ণের আভামণ্ডল ভগবান বুদ্ধের নিকটতম হয়ে থাকত। হলুদ বর্ণ হল রূপ-অরূপের অনুপস্থিতি, শূন্যতা এবং মধ্যম মার্গ অর্থাৎ অতি বর্জিত মাঝখানের রাস্তা।

৩) লাল:- লাল বর্ণ হল বুদ্ধের চর্ম বা ত্বকের আভামণ্ডল। এ বর্ণ ধর্মানুশীলনের জীবন্ততা বা মঙ্গলময়তার প্রতীক। ইহা প্রজ্ঞা, সৌভাগ্য, গরিমা, সদ্গুণ এবং উপলব্দিরও সঙ্কেত প্রদান করে থাকে।

৪) সাদা:- বুদ্ধের দন্ত, নখ এবং অস্থি ধাতু হতে সাদা বর্ণের আভা প্রস্ফুটিত হয়ে থাকত। এ বর্ণ হল শুদ্ধতা এবং পবিত্রতার প্রতীক এবং বুদ্ধের শিক্ষা সমূহের অকালিকতারও প্রতীক। অকালিকতা অর্থাৎ বুদ্ধের দেশনা সমূহ সময়ের সাথে পুরাতন হয়ে যায়না। বরং সেগুলি নিত্য নতুন হয়ে উদ্ভাসিত হয়ে থাকে। সেগুলির মধ্যে যে সত্য কাল ছিল, এরকম সত্য আজও রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সেরকম থাকবে।

৫) কাষায় বা কেসরিয়া:- ভগবান বুদ্ধের হস্ত, বাহু এবং ওষ্ঠদ্বয় হতে কেসরিয়া আভা প্রকাশিত হত। এ বর্ণ হল বুদ্ধের অকম্পিত প্রজ্ঞার প্রতীক। ইহা বীর্য অর্থাৎ উৎসাহ বা গরিমার সঙ্কেতও প্রদান করে থাকে।

৬) প্রভাস্বর:- পাঁচ বর্ণের মিশ্রিত আভা অর্থাৎ প্রভাস্বর হল বুদ্ধের দেশনা সমূহের বিভেদতা এ ক্ষমতার প্রতীক। এ মিশ্রিত আভা দেখিয়ে থাকে যে, বুদ্ধের শিক্ষা সমূহ জাতি, গোষ্টি, সম্প্রদায়, রাষ্ট্রীয়তার ভেদ-বিভেদের উপরে কেবল মানব মাত্রের জন্য নয়, বরং প্রাণী মাত্রের জন্যই প্রযোজ্য।

এভাবে এ পতাকা হল মানবীয় মূল্য এবং গরিমার এক সার্বভৌমিক প্রতীক। এ ধ্বজা কোন এক রাষ্ট্রের নয়, বরং বিশ্বের সকল বৌদ্ধদের। যদিও ইহাকে বৌদ্ধ পতাকার আন্তর্জাতিক মান্যতা রয়েছে, কিন্তু ইহা হল সম্পূর্ণ মানবতার ধ্বজ বা পতাকা।

শেয়ার করুন
আরও সংবাদ দেখুন

সৈয়দবাড়ী ধর্ম প্রবর্তন বৌদ্ধ বিহার দ্বিতীয় ভবনের দ্বারোদ্‌ঘাটন , কর্মবীর করুণাশ্রী থের’র “মহাথের বরণ” ১৯ , ২০ ডিসেম্বর

You cannot copy content of this page

বৌদ্ধ পতাকার ইতিবৃত্ত

আপডেট সময় ০৩:৩৩:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০২৩

নীল, হলুদ, লাল,সাদা, কমলা বা কাষায় এ পাঁচ বর্ণের ক্ষৈতিজ (Horizontal) এবং সব শেষে উর্ধ হতে ( Vertical) এ পাঁচ বর্ণের পট্টি দ্বারা নির্মিত পতাকাকে বৌদ্ধ পতাকা ( Buddhist Flag) বলা হয়। ইহাকে আবার অনেকে পঞ্চশীল পতাকাও বলে থাকেন। এ পতাকারও নিজস্ব এক কাহিনী বা ইতিহাস রয়েছে।

Theosophical Society’র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কর্ণেল হেনরি স্টীল অলকট (১৮৩২-১৯০৭) এবং ম্যাডাম ব্লাভাৎস্কি (১৮৩১-১৮৯১)। হেনরি অলকট ছিলেন আমেরিকার সেনাবাহিনীর অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং মেডাম ব্লাভাৎস্কি ছিলেন বিখ্যাত রাশিয়ান লেখিকা। থিওসফিকেল সোসাইটি কোন এক ধর্মের অথবা সম্প্রদায়ের পোষক বা প্রচারক সংস্থা ছিলনা। বরং তা সমস্ত ধর্ম সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ সমন্বয়ের পোষক ছিল। এজন্য এ সংস্থায় পূর্বাগ্রহ ছাড়াই সমস্ত ধার্মিক বিচার ধারার অধ্যয়ন, গবেষণা এবং তদনুসারে অনুশীলন হয়ে থাকত।

অধ্যয়ন এবং অনুশীলন করতে করতে কর্নেল হেনরী স্টীল অলকট বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি গভীরভাবে আকর্ষিত হলেন এবং তিনি ১৮৮০ সালে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধর্মকে হৃদয়ঙ্গম করে নিয়েছিলেন। সাথে সাথে তিনি শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধর্মের উত্থানের গতিবিধিতে সক্রিয় অঙ্গ হয়ে গেলেন। সেখানে তিনি ৪০০ এর অধিক বৌদ্ধ বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়ের স্থাপনা করেছিলেন। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি খুবই প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। যেমন- আনন্দ, নালন্দা, মহিন্দ, ধম্মরাজা ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ। এগুলি তাঁরই হাতে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের মধ্যে ছিল অন্যতম।

তাঁর শান্তিপূর্ণ লোকতান্ত্রিক আন্দোলনের কারণে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধদের ১৮৮৪ সালে এক বড় সফলতা লাভ হয়েছিল। সফলতা ইহাই ছিল যে, বৃটিশ সরকার হতে বৈশাখ ডে বা বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে তিনি সাধারণ ছুটি মঞ্জুর করিয়েছিলেন। যা ১৮৮৫ সালের বুদ্ধ পূর্ণিমা হতে কার্যকরী হয়েছিল।

এ সফলতার পরে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধেরা ‘কলম্বো কমিটি’ নামে এক সংস্থা বানিয়েছিলেন। সেখানে কর্নেল হেনরী স্টীল অলকটও ছিলেন অন্যতম একজন সদস্য। সে কমিটিতে প্রস্তাব এসেছিল যে, বৌদ্ধদের জন্য বিশ্বে এক পতাকা হওয়া উচিত, যা হবে বৌদ্ধদের অস্মিতা বা গৌরবের প্রতীক। এ প্রস্তাব এসেছিল কর্নেল হেনরী স্টীল অলকটের কাছ হতে। এ প্রস্তাব কমিটির সকল সদস্যেরা সাদরে সমর্থন করেছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, এ পতাকা আগামী ২৮শে মে, ১৮৮৫ সালের বুদ্ধ জয়ন্তীর সময় উত্তোলন করা হবে। এভাবে কলম্বো কমিটির দ্বারা নির্মিত পতাকা অস্তিত্বে এসেছিল, যা আজ বিশ্ব বৌদ্ধ পতাকা বা পঞ্চশীল ধ্বজ নামে বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে।

বুদ্ধ পূর্ণিমায় উত্তোলন করার পূর্বে ১৭ই এপ্রিল, ১৮৮৫ সালে ‘কলম্বো কমিটি’ দ্বারা এ পতাকা সার্বজনীন করা হয়েছিল অর্থাৎ সার্বজনীনভাবে সকলের অনুমোদন লাভ করেছিল। এ বৌদ্ধ পতাকা শ্রীলঙ্কার কোটাহেনায় দীপদুত্থরাময়া বৌদ্ধ বিহারে ১৮৮৫ সালে বুদ্ধ পূর্ণিমায় ২৮ শে মে তারিখে প্রথমবার শ্রীলঙ্কার বরিষ্ট ধর্মীয় গুরু পূজ্য মিগেত্তুবন্তে গুণানন্দ নায়ক থেরোর দ্বারা বিশাল বৌদ্ধ জন সমূহের উপস্থিতিতে উত্তোলন করা হয়েছিল।

কালান্তরে কর্নেল হেনরী স্টীল অলকটের পরামর্শে এ পতাকার আকার রাষ্ট্রীয় পতাকার আকারের মত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। সেখানে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং কর্নেল স্টীল অলকট কর্তৃক অন্তিম রূপ প্রদান করা হয়েছিল। তা পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৮৮৬ সালে বুদ্ধ জয়ন্তী উপলক্ষে উত্তোলন করা হয়েছিল। তখন হতে আজকের তারিখ পর্যন্ত সে পতাকাই যথাযথভাবে চালু রয়েছে এবং সমগ্র বিশ্বে বৌদ্ধদের ইহা অস্মিতা বা গৌরবের প্রতীক হয়ে রয়েছে।

এ পতাকার বৈশ্বিক স্বীকৃতিরও এক ইতিহাস রয়েছে। ইহার মুখ্য অবদান অধ্যাপক ড. জি. পি. মালালাশেখরের রয়েছে, যাঁর অধ্যক্ষতা এবং প্রচেষ্টায় শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সঙ্ঘ ( World Fellowship of Buddhists) স্থাপিত হয়েছিল এবং ইহার প্রথম সভাও কলম্বোতে আয়োজিত হয়েছিল। ২৫শে মে, ১৯৫০ সালে দন্তধাতুর বুদ্ধ বিহারের সভাগারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সম্মেলন। এ বিহারেই সংরক্ষণ করা হয়েছে ভগবান বুদ্ধের পবিত্র দন্ত ধাতু।

অধ্যাপক ড. জি. পি. মালালাশেখরে ছিলেন শ্রীলঙ্কা ও বিশ্ব বৌদ্ধগগণে এক অনন্য সাধারণ বিদ্বান ও প্রতিভাশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি পালি, সিংহলী, সংস্কৃত, ইংরেজী, লেটিন, গ্রীক, ফরাসী ভাষা সমূহের প্রকাণ্ড বিদ্বান ছিলেন। World Buddhists Fellowship এর তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। তিনি ছিলেন বোধিসত্ব বাবা সাহেব ড. ভীমরাও আম্বেদকরের ঘনিষ্ট মিত্র। তিনি বাবা সাহেবকে ২৫শে মে, ১৯৫০ সালে আয়োজিত বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘের সম্মেলনে কলম্বোতে আমন্ত্রণ করেছিলেন।

এ সম্মেলনে যাওয়ার পূর্বে বাবা সাহেব দিল্লিতে মহাবোধি বুদ্ধ বিহারে পূজ্য ভদন্ত ড. এইচ. শ্রদ্ধাতিষ্য থেরোর উপস্হিতিতে পূজ্য ভদন্ত এল. আর্যবংশ নায়ক থেরোর নিকট হতে ২রা মে, ১৯৫০ সালে ত্রিশরণ সহ পঞ্চশীল গ্রহণ করে দীক্ষা নিয়েছিলেন। অর্থাৎ World Fellowship of Buddhists এর সম্মেলনে বাবা সাহেব একজন বৌদ্ধরূপে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।

২৫শে মে, ১৯৫০ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে আসা বৌদ্ধ সঙ্ঘের প্রমুখ ভিক্ষুগণ এবং বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দের সম্মুখে অধ্যাপক ড. জি. পি, মালালাশেখরে কর্তৃক বাবা সাহেব ড. আম্বেদকরকে ‘ Living Bodhisatta’ বা জীবন্ত বোধিসত্ব বলে সম্বোধন করেছিলেন।

সম্যক প্রকাশনের সংস্থাপক শ্রী শান্তি স্বরূস বৌদ্ধ উল্লেখ করেছেন যে, ২রা মে, ১৯৫০ সালে দিল্লীতে বৌদ্ধ ধর্মের দীক্ষা নেওয়ার সময় বাবা সাহেবের সাথে সমতা সৈনিক দলের ১০১ জন নব যুবকও সদ্ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। যার সাক্ষীরূপে দিল্লীর করোলবাগের শ্রী কিশোরী লাল গৌতমজী এখনও জীবিত রয়েছেন।

অধ্যাপক ড. জি. পি ( গুণপাল প্রিয়সেন) মালালাশেখরে ছিলেন Buddhist Encyclopedia’র প্রধান সম্পাদক এবং ‘Dictionary of Pali Proper Names’ নামক বিখ্যাত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের রচয়িতা। এগুলি ছাড়াও তিনি ‘Pali-Sinhali-English শব্দকোষ’ এবং ‘গুণপাল সিংহলী-ইংরেজী শব্দকোষ’ গ্রন্থের মত অনেক কালজয়ী পুস্তকের গ্রন্থকার।

অধ্যাপক ড. জি. পি. মালালাশেখরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান হল ২৫মে, ১৯৫০ সালের World Fellowship of Buddhists সম্মেলনের সম্মুখে যেখানে বাবা সাহেবও উপস্থিত ছিলেন এবং জাপানের বিশ্ববিখ্যাত জেন বিদ্বান অধ্যাপক ড. ডি. টি. সুজুকিও উপস্থিত ছিলেন তিনি সে বৌদ্ধ পতাকাকে সমগ্র বৌদ্ধ জগত দ্বারা গ্রহণ করার প্রস্তাব রেখেছিলেন, যা সে সম্মেলনে সর্ব সম্মতভাবে সাধুবাদের সাথে গৃহীত হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, ভারতের রাষ্ট্রীয় পতাকায় ধর্মচক্র সমাবেশিত করে ইহাকে বৌদ্ধ স্বরূপ দেওয়ার অবদান যেমন বাবা সাহেবের রয়েছে, তেমনি ধর্মধ্বজ বা পতাকার বৈশ্বিক মান্যতা দেওয়ার ঘটনায়ও তাঁর উপস্থিতি রয়েছে। অফিসিয়ালভাবে এ পতাকাকে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ পতাকার মর্যাদা ১৯৫২ সালে World Fellowship of Buddhists এর সম্মেলনে লাভ হয়েছিল।

দৃশ্যত: এ ধর্মীয় পতাকায় পাঁচ বর্ণ দাঁড়ানো পংক্তিবদ্ধভাবে রয়েছে। এ কারণে অনেকে ইহাকে পঞ্চশীল ধ্বজও বলে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এখানে পাঁচ পংক্তি নয়, ছয় পংক্তি রয়েছে। ষষ্ট দাঁড়ানো পংক্তিতে উপরের পাঁচ বর্ণের মিশ্রণ রয়েছে। তথাপি এ পতাকাকে পঞ্চশীল ধ্বজ বা পতাকা বলে সম্বোধন করে এ বিষয়কে আরও সঙ্কেত প্রদান করা হচ্ছে যে, বৌদ্ধ পঞ্চশীলকে কতই না মহত্ব। যদি বর্ণ সমূহের সংখ্যার ভাষাতেই বলা যায়, তাহলে ইহাকে পঞ্চশীল না বলে ষড়ায়তন ধ্বজ বলা অধিকতর যুক্তিযুক্ত হবে। কিন্তু ধর্ম পতাকারূপে ইহার বৈশ্বিক মান্যতা তথা গ্রহণীয়তা রয়েছে। পঞ্চশীল তথা ষড়ায়তন এমনিতে কথাবার্তায় বলা যেতে পারে। কিন্তু ‘ধর্ম পতাকা’ বা Buddhist Flag’ ই হল ইহার সার্বভৌমিক সংজ্ঞা।

ধর্মীয় পতাকার ছয় বর্ণেরও রয়েছে বিশেষ মহত্ব। বৌদ্ধ গ্রন্থ সমূহে এরূপ উল্লেখ পাওয়া যায় যে, ভগবান বুদ্ধের শরীর হতে ছয় বর্ণের আভামণ্ডল বা রশ্মি (Aura) প্রস্ফুটিত হয়ে থাকত। সেগুলি হল নীলা, হলুদ, লাল, সাদা, কাষায় বা কমলা, এবং এ পাঁচ বর্ণের মিশ্রিত বর্ণকে বলা হয় প্রভাস্বর। এ ছয়টি বর্ণ বুদ্ধত্ব বা ধর্মের পরিপূর্ণতার প্রতীক। বৌদ্ধদের স্মরণ রাখার জন্য ইহা হল অনুস্মারক বা Remind এর মত। এ পতাকার ছয় বর্ণের প্রতীকার্থ নিম্নে প্রদান করা হল।

১) নীল:- বলা হয়ে থাকে যে, নীল বর্ণের আভামণ্ডল ভগবান বুদ্ধের মস্তকের চারি দিকে দেখা যেত। যা হল প্রাণীমাত্রের প্রতি তাঁর অখণ্ডিত করুণার প্রতীক। এ প্রকার নীল বর্ণ হল মৈত্রী, করুণা ও শান্তির প্রতীক। ইহা আকাশ এবং সাগরের অসীম নীল বর্ণের মত ব্যাপকতার সঙ্কেত প্রদান করে থাকে।

২) হলুদ:- হলুদ বর্ণের আভামণ্ডল ভগবান বুদ্ধের নিকটতম হয়ে থাকত। হলুদ বর্ণ হল রূপ-অরূপের অনুপস্থিতি, শূন্যতা এবং মধ্যম মার্গ অর্থাৎ অতি বর্জিত মাঝখানের রাস্তা।

৩) লাল:- লাল বর্ণ হল বুদ্ধের চর্ম বা ত্বকের আভামণ্ডল। এ বর্ণ ধর্মানুশীলনের জীবন্ততা বা মঙ্গলময়তার প্রতীক। ইহা প্রজ্ঞা, সৌভাগ্য, গরিমা, সদ্গুণ এবং উপলব্দিরও সঙ্কেত প্রদান করে থাকে।

৪) সাদা:- বুদ্ধের দন্ত, নখ এবং অস্থি ধাতু হতে সাদা বর্ণের আভা প্রস্ফুটিত হয়ে থাকত। এ বর্ণ হল শুদ্ধতা এবং পবিত্রতার প্রতীক এবং বুদ্ধের শিক্ষা সমূহের অকালিকতারও প্রতীক। অকালিকতা অর্থাৎ বুদ্ধের দেশনা সমূহ সময়ের সাথে পুরাতন হয়ে যায়না। বরং সেগুলি নিত্য নতুন হয়ে উদ্ভাসিত হয়ে থাকে। সেগুলির মধ্যে যে সত্য কাল ছিল, এরকম সত্য আজও রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সেরকম থাকবে।

৫) কাষায় বা কেসরিয়া:- ভগবান বুদ্ধের হস্ত, বাহু এবং ওষ্ঠদ্বয় হতে কেসরিয়া আভা প্রকাশিত হত। এ বর্ণ হল বুদ্ধের অকম্পিত প্রজ্ঞার প্রতীক। ইহা বীর্য অর্থাৎ উৎসাহ বা গরিমার সঙ্কেতও প্রদান করে থাকে।

৬) প্রভাস্বর:- পাঁচ বর্ণের মিশ্রিত আভা অর্থাৎ প্রভাস্বর হল বুদ্ধের দেশনা সমূহের বিভেদতা এ ক্ষমতার প্রতীক। এ মিশ্রিত আভা দেখিয়ে থাকে যে, বুদ্ধের শিক্ষা সমূহ জাতি, গোষ্টি, সম্প্রদায়, রাষ্ট্রীয়তার ভেদ-বিভেদের উপরে কেবল মানব মাত্রের জন্য নয়, বরং প্রাণী মাত্রের জন্যই প্রযোজ্য।

এভাবে এ পতাকা হল মানবীয় মূল্য এবং গরিমার এক সার্বভৌমিক প্রতীক। এ ধ্বজা কোন এক রাষ্ট্রের নয়, বরং বিশ্বের সকল বৌদ্ধদের। যদিও ইহাকে বৌদ্ধ পতাকার আন্তর্জাতিক মান্যতা রয়েছে, কিন্তু ইহা হল সম্পূর্ণ মানবতার ধ্বজ বা পতাকা।