০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামীকাল শুভ ফাল্গুনী পূর্ণিমা

আগামীকাল সোমবার ৬ মার্চ শুভ ফাল্গুনী পূর্ণিমা।
ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি বিশ্ব বৌদ্ধদের নিকট অতি তাৎপর্যপূর্ণ এবং বৌদ্ধ ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন। সেই সাথে ফাল্গুনী পূর্ণিমা সমগ্র বৌদ্ধদের নিকট জ্ঞাতী সম্মেলন পূণ্যতিথি হিসেবে পরিচিত। এ মহান পূর্ণিমা তিথি বৌদ্ধরা দিনব্যাপী নানান ধর্মীয় কার্যক্রমের সাথে আত্মহিত-পরহিত প্রার্থনা ও ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য-আবহে অতিবাহিত করেন।
তন্মধ্যে, ধর্মসভা, ধ্বজা/বৌদ্ধ ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধ পূজা, ভিক্ষু সংঘকে দান, পঞ্চশীল-উপোসথ শীলাদি গ্রহণ, ধর্মালোচনা ও সন্ধ্যায় গিলান প্রত্যয়সহ সুগন্ধী-প্রদীপ পূজা করা হয়। এছাড়া এদিন বাংলাদেশের কিছু কিছু ঐতিহাসিক বিহারে জ্ঞাতী সম্মেলন মেলারও আয়োজন করা হয়।
যেসকল কারণে ফাল্গুনী পূর্ণিমা অতি তাৎপর্য্যময়ঃ-
১) রাজনন্দন সিদ্ধার্থ গৌতম বোধিজ্ঞান লাভের সাত বছর পর বিশ হাজার অর্হৎ ভিক্ষুসহ ষাট যোজন পথ অতিক্রম করে জ্ঞাতী দর্শনে রাজগীর হতে তাঁর পিতৃরাজ্য কপিলাবস্তুতে শুভাগমণ করেন।
২) বুদ্ধ কর্তৃক যমক প্রাতিহার্য তুল্য এক অসাধারণ অলৌকিক ঋদ্ধি শক্তির প্রদর্শন। উল্লেখ্য, কপিলাবস্তুতে তথাগতের আগমনে অতি মানাভিমানবশত শাক্যকুলের বয়স্ক নাগরিকরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে থাকেন, ‘‘বুদ্ধ হলে কী হবে? সে তো আমাদের বয়কনিষ্ঠ সিদ্ধার্থ কুমার।’’ বয়কনিষ্ঠ সিদ্ধার্থকে নমস্কার করা তাদের পক্ষে শোভা পাবে না ভেবে বয়কনিষ্ঠ যুবক-যুবতীদের সামনে রেখে ‘ভক্তিভরে তোমরা অভিবাদন করো’ নির্দেশ দিয়ে বললেন আমরা তোমাদের পেছনে আছি। তখন, বুদ্ধ শাক্যকুলোদ্ভুত বয়ষ্ক জ্ঞাতীদের মনোভাব বুঝতে পেরে তাদের মানাভিমান ভঞ্জনের নিমিত্তে এ ঋদ্ধিশক্তি প্রদর্শন করেন।
৩) ‘‘উত্তিট্ঠে নপ্পমজ্জেয্য, ধম্মং সুচরিতং চরে, ধম্মচারী সুখং সেতি, অস্মিং লোকে পরম্হি চ’’ (ধর্মপদ ১৬৮)। বুদ্ধের শ্রীমুখে এ গাথা-দেশনা শ্রবণ পূর্বক ‘বুদ্ধপিতা’ রাজা শুদ্ধোধনের ধর্মচক্ষু উন্মোচন।
৪) মহাকারুণিক বুদ্ধের আগমন উপলক্ষ্যে এসময় সমগ্র কপিলাবস্তুতে আনন্দ জোয়ার বয়ে যায়। এ সময় কুমার রাহুল মাতা যশোধরার পরামর্শানুসারে পিতৃধন প্রার্থনা করলে বুদ্ধ তাঁর প্রার্থনানুসারে শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষা দিতে সারিপুত্র স্থবিরকে নির্দেশ প্রদান করেন।
৫) কুমার রাহুলকে প্রব্রজ্যা দানের কথা জানতে পেরে রাজা শুদ্ধোদন অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং তাঁর অনুরোধে সর্বজ্ঞ বুদ্ধ মাতা-পিতা বা অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কাকেও প্রব্রজ্যা বা উপসম্পদা প্রদান না করার রীতি বিনয় বিধানে প্রজ্ঞাপ্ত করেন।
৬) এ ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ রয়েছে, এ সময় বুদ্ধ বৈমাত্রেয় ভ্রাতা নন্দকেও প্রব্রজ্যা দান করেছিলেন এবং বুদ্ধের উপস্থিতিতে তাঁর পিতা-মাতা (বিমাতা), যশোধরা-রাহুল, আত্মীয়-স্বজনসহ বহু নর-নারীকে ত্রিশরণাগমনের মধ্যদিয়ে বুদ্ধের ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।
আসুন, এ পূণ্যময় পূর্ণিমা তিথি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে উদ্যাপন করি এবং উপোসথ শীলাদি গ্রহণ এবং পালনপূর্বক নিজের শীল পারমিতার পূর্ণতা সাধন করি। সেই সাথে চলুন নিজের এবং বিশ্ব শান্তি প্রার্থনায় অর্জিত পূণ্যরাশি দান করি।
জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক।
শেয়ার করুন
আরও সংবাদ দেখুন

সৈয়দবাড়ী ধর্ম প্রবর্তন বৌদ্ধ বিহার দ্বিতীয় ভবনের দ্বারোদ্‌ঘাটন , কর্মবীর করুণাশ্রী থের’র “মহাথের বরণ” ১৯ , ২০ ডিসেম্বর

You cannot copy content of this page

আগামীকাল শুভ ফাল্গুনী পূর্ণিমা

আপডেট সময় ০২:৩০:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মার্চ ২০২৩
আগামীকাল সোমবার ৬ মার্চ শুভ ফাল্গুনী পূর্ণিমা।
ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি বিশ্ব বৌদ্ধদের নিকট অতি তাৎপর্যপূর্ণ এবং বৌদ্ধ ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন। সেই সাথে ফাল্গুনী পূর্ণিমা সমগ্র বৌদ্ধদের নিকট জ্ঞাতী সম্মেলন পূণ্যতিথি হিসেবে পরিচিত। এ মহান পূর্ণিমা তিথি বৌদ্ধরা দিনব্যাপী নানান ধর্মীয় কার্যক্রমের সাথে আত্মহিত-পরহিত প্রার্থনা ও ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য-আবহে অতিবাহিত করেন।
তন্মধ্যে, ধর্মসভা, ধ্বজা/বৌদ্ধ ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধ পূজা, ভিক্ষু সংঘকে দান, পঞ্চশীল-উপোসথ শীলাদি গ্রহণ, ধর্মালোচনা ও সন্ধ্যায় গিলান প্রত্যয়সহ সুগন্ধী-প্রদীপ পূজা করা হয়। এছাড়া এদিন বাংলাদেশের কিছু কিছু ঐতিহাসিক বিহারে জ্ঞাতী সম্মেলন মেলারও আয়োজন করা হয়।
যেসকল কারণে ফাল্গুনী পূর্ণিমা অতি তাৎপর্য্যময়ঃ-
১) রাজনন্দন সিদ্ধার্থ গৌতম বোধিজ্ঞান লাভের সাত বছর পর বিশ হাজার অর্হৎ ভিক্ষুসহ ষাট যোজন পথ অতিক্রম করে জ্ঞাতী দর্শনে রাজগীর হতে তাঁর পিতৃরাজ্য কপিলাবস্তুতে শুভাগমণ করেন।
২) বুদ্ধ কর্তৃক যমক প্রাতিহার্য তুল্য এক অসাধারণ অলৌকিক ঋদ্ধি শক্তির প্রদর্শন। উল্লেখ্য, কপিলাবস্তুতে তথাগতের আগমনে অতি মানাভিমানবশত শাক্যকুলের বয়স্ক নাগরিকরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে থাকেন, ‘‘বুদ্ধ হলে কী হবে? সে তো আমাদের বয়কনিষ্ঠ সিদ্ধার্থ কুমার।’’ বয়কনিষ্ঠ সিদ্ধার্থকে নমস্কার করা তাদের পক্ষে শোভা পাবে না ভেবে বয়কনিষ্ঠ যুবক-যুবতীদের সামনে রেখে ‘ভক্তিভরে তোমরা অভিবাদন করো’ নির্দেশ দিয়ে বললেন আমরা তোমাদের পেছনে আছি। তখন, বুদ্ধ শাক্যকুলোদ্ভুত বয়ষ্ক জ্ঞাতীদের মনোভাব বুঝতে পেরে তাদের মানাভিমান ভঞ্জনের নিমিত্তে এ ঋদ্ধিশক্তি প্রদর্শন করেন।
৩) ‘‘উত্তিট্ঠে নপ্পমজ্জেয্য, ধম্মং সুচরিতং চরে, ধম্মচারী সুখং সেতি, অস্মিং লোকে পরম্হি চ’’ (ধর্মপদ ১৬৮)। বুদ্ধের শ্রীমুখে এ গাথা-দেশনা শ্রবণ পূর্বক ‘বুদ্ধপিতা’ রাজা শুদ্ধোধনের ধর্মচক্ষু উন্মোচন।
৪) মহাকারুণিক বুদ্ধের আগমন উপলক্ষ্যে এসময় সমগ্র কপিলাবস্তুতে আনন্দ জোয়ার বয়ে যায়। এ সময় কুমার রাহুল মাতা যশোধরার পরামর্শানুসারে পিতৃধন প্রার্থনা করলে বুদ্ধ তাঁর প্রার্থনানুসারে শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষা দিতে সারিপুত্র স্থবিরকে নির্দেশ প্রদান করেন।
৫) কুমার রাহুলকে প্রব্রজ্যা দানের কথা জানতে পেরে রাজা শুদ্ধোদন অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং তাঁর অনুরোধে সর্বজ্ঞ বুদ্ধ মাতা-পিতা বা অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কাকেও প্রব্রজ্যা বা উপসম্পদা প্রদান না করার রীতি বিনয় বিধানে প্রজ্ঞাপ্ত করেন।
৬) এ ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ রয়েছে, এ সময় বুদ্ধ বৈমাত্রেয় ভ্রাতা নন্দকেও প্রব্রজ্যা দান করেছিলেন এবং বুদ্ধের উপস্থিতিতে তাঁর পিতা-মাতা (বিমাতা), যশোধরা-রাহুল, আত্মীয়-স্বজনসহ বহু নর-নারীকে ত্রিশরণাগমনের মধ্যদিয়ে বুদ্ধের ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।
আসুন, এ পূণ্যময় পূর্ণিমা তিথি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে উদ্যাপন করি এবং উপোসথ শীলাদি গ্রহণ এবং পালনপূর্বক নিজের শীল পারমিতার পূর্ণতা সাধন করি। সেই সাথে চলুন নিজের এবং বিশ্ব শান্তি প্রার্থনায় অর্জিত পূণ্যরাশি দান করি।
জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক।