১০:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হংকংয়ে বুদ্ধের অস্থি, গয়নার নিলাম বন্ধের চেষ্টায় ভারত

  • ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট সময় ১২:৫৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
  • ৫৬৬ বার পড়া হয়েছে

হংকংয়ে বুধবার সদবির নিলামে উঠার কথা রয়েছে এসব মূল্যবান সম্পদ। ভারত এগুলো নিলাম না করে তাদের কাছে তা ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছে।

গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ এবং এর সঙ্গে উদ্ধার হওয়া বেশ কিছু মূল্যবান পাথর ও গয়না নিলামে বিক্রি বন্ধ না করা হলে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ভারত।

ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বলেছে, “নিলামে এই সম্পদ বিক্রি ভারত এবং আন্তর্জাতিক আইনের পাশাপাশি জাতিসংঘ কনভেনশনেরও লঙ্ঘন।”

রত্নগুলোকে পবিত্র হিসাবে বিবেচনা করার আহ্বানও জানিয়েছে ভারত। তাছাড়া, কয়েকজন বৌদ্ধ এবং বৈশ্বিক শিল্প পন্ডিতও এই সম্পদগুলো নিলামের নিন্দায় সরব হয়েছেন।

১৮৯৮ সালে উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপে নামের এক ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উত্তর ভারতে (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ) পিপরাওয়া বৌদ্ধ স্তূপের কাছে খনন করে মূল্যবান ওই সম্পদগুলো উদ্ধার করেছিলেন।

বুদ্ধের জন্মস্থল হিসাবে পরিচিত লুম্বিনীর অদূরেই ছিল এই পিপরাওয়া স্তূপ। সেখান থেকে বুদ্ধের দেহাবশেষের পাশাপাশি উদ্ধার হয় প্রায় ১৮০০ রত্ন; যার মধ্যে ছিল রুবি, মুক্তা, চুনি, পোখরাজ, টোপাজ ও নীলার মতো মূল্যবান পাথর এবং আঁকিবুঁকি করা সোনার পাত।

বিবিসি জানায়, উইলিয়াম পেপে এসব সম্পদ ঔপনিবেশিক ভারত সরকারকে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে বুদ্ধের অস্থি দেওয়া হয়েছিল সিয়ামের (বর্তমানে থাইল্যান্ড) বুদ্ধ রাজা চুলালংকর্ণকে।

আরও কিছু রত্ন পাঠানো হয়েছিল ভারতের কলকাতা মিউজিয়ামে (তৎকালীন ইম্পেরিয়াল মিউজিয়াম)। আর উইলিয়াম পেপের পরিবারে রয়ে গিয়েছিল অল্প কিছু রত্ন। তখনকার ব্রিটিশ ঔপনিবেশক প্রসাশন সেগুলোকে ‘ডুপ্লিকেট’ আখ্যা দিয়েছিল।

উইলিয়ামের প্রপৌত্র ক্রিস পেপে বর্তমান এই সম্পদগুলোর রক্ষক। সেগুলোই বুধবার হংকংয়ে সদবির নিলামে উঠতে চলেছে। ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ইন্সটাগ্রামে সদবি নিলাম হাউজ এবং ক্রিস পেপেকে লেখা একটি চিঠি পোস্ট করেছে।
তাতে বলা হয়, সদবি আইনি নোটিসের জবাব দিয়েছে এবং নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে, বিষয়টি পূর্ণ মনোযোগ সহকারে দেখা হচ্ছে।

পোস্টে আরও বলা হয়,বুদ্ধের অস্থি, গয়না বিক্রির এখতিয়ার ক্রিস পেপের নেই। আর সদবির নিলাম হাউজ এই সম্পদ বিক্রিতে সহায়তা করে ‘ঔপনিবেশিক শোষণের চলমান ধারার ভাগীদার হচ্ছে।’

সম্পদগুলোকে ‘ডুপ্লিকেট’ বলা নিয়ে আপত্তি জানানোর পাশাপাশি এগুলোকে নমুনা হিসাবে দেখার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছে ভারত। তাছাড়া, সম্পদগুলোর হেফাজত নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছে।

ভারত বলছে, তাদের দেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কাছে এই সম্পদ ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী এবং বৌদ্ধদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। তাই নীতিগত ভাবে এ সম্পদ নিলামে তোলা যায় কিনা সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ।

মানবদেহের অংশবিশেষ নিলামযোগ্য কিনা কিংবা এগুলোকে অন্য পণ্যের মতো নিলাম ডেকে বিক্রি করা উচিত কি না- প্রশ্ন আছে তা নিয়েও।

ইতিহাসবিদদের মতে, বুদ্ধের যা কিছু, সবই বৌদ্ধদের সম্পদ। বুদ্ধের দেহাবশেষ ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, মিনায়মার সবখানেই পূজনীয়।

তবে সম্পদগুলো নিলামে তোলার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ক্রিস পেপে বলেছেন, ‘‘আমরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ভাবাবেগের কথা ভেবে সবই দান করতে চেয়েছিলাম।

“কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেকারণে নিলাম ডেকে সম্পদগুলো যোগ্য সংরক্ষকের হাতে তুলে দেওয়াটাই সবচেয়ে সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ পন্থা বলে মনে হয়েছে।’’

অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন বেঙ্গল বুড্ডিস্ট  তাৎক্ষণিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের সম্মানীয় মন্ত্রী ও বিদেশ সচিব কে বিষয়টির উপর গুরুত্বসহকারে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পত্র পাঠানো হয়।

শেয়ার করুন
আরও সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয়

জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরাম চট্টগ্রামের উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

You cannot copy content of this page

হংকংয়ে বুদ্ধের অস্থি, গয়নার নিলাম বন্ধের চেষ্টায় ভারত

আপডেট সময় ১২:৫৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

হংকংয়ে বুধবার সদবির নিলামে উঠার কথা রয়েছে এসব মূল্যবান সম্পদ। ভারত এগুলো নিলাম না করে তাদের কাছে তা ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছে।

গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ এবং এর সঙ্গে উদ্ধার হওয়া বেশ কিছু মূল্যবান পাথর ও গয়না নিলামে বিক্রি বন্ধ না করা হলে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ভারত।

ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বলেছে, “নিলামে এই সম্পদ বিক্রি ভারত এবং আন্তর্জাতিক আইনের পাশাপাশি জাতিসংঘ কনভেনশনেরও লঙ্ঘন।”

রত্নগুলোকে পবিত্র হিসাবে বিবেচনা করার আহ্বানও জানিয়েছে ভারত। তাছাড়া, কয়েকজন বৌদ্ধ এবং বৈশ্বিক শিল্প পন্ডিতও এই সম্পদগুলো নিলামের নিন্দায় সরব হয়েছেন।

১৮৯৮ সালে উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপে নামের এক ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উত্তর ভারতে (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ) পিপরাওয়া বৌদ্ধ স্তূপের কাছে খনন করে মূল্যবান ওই সম্পদগুলো উদ্ধার করেছিলেন।

বুদ্ধের জন্মস্থল হিসাবে পরিচিত লুম্বিনীর অদূরেই ছিল এই পিপরাওয়া স্তূপ। সেখান থেকে বুদ্ধের দেহাবশেষের পাশাপাশি উদ্ধার হয় প্রায় ১৮০০ রত্ন; যার মধ্যে ছিল রুবি, মুক্তা, চুনি, পোখরাজ, টোপাজ ও নীলার মতো মূল্যবান পাথর এবং আঁকিবুঁকি করা সোনার পাত।

বিবিসি জানায়, উইলিয়াম পেপে এসব সম্পদ ঔপনিবেশিক ভারত সরকারকে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে বুদ্ধের অস্থি দেওয়া হয়েছিল সিয়ামের (বর্তমানে থাইল্যান্ড) বুদ্ধ রাজা চুলালংকর্ণকে।

আরও কিছু রত্ন পাঠানো হয়েছিল ভারতের কলকাতা মিউজিয়ামে (তৎকালীন ইম্পেরিয়াল মিউজিয়াম)। আর উইলিয়াম পেপের পরিবারে রয়ে গিয়েছিল অল্প কিছু রত্ন। তখনকার ব্রিটিশ ঔপনিবেশক প্রসাশন সেগুলোকে ‘ডুপ্লিকেট’ আখ্যা দিয়েছিল।

উইলিয়ামের প্রপৌত্র ক্রিস পেপে বর্তমান এই সম্পদগুলোর রক্ষক। সেগুলোই বুধবার হংকংয়ে সদবির নিলামে উঠতে চলেছে। ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ইন্সটাগ্রামে সদবি নিলাম হাউজ এবং ক্রিস পেপেকে লেখা একটি চিঠি পোস্ট করেছে।
তাতে বলা হয়, সদবি আইনি নোটিসের জবাব দিয়েছে এবং নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে, বিষয়টি পূর্ণ মনোযোগ সহকারে দেখা হচ্ছে।

পোস্টে আরও বলা হয়,বুদ্ধের অস্থি, গয়না বিক্রির এখতিয়ার ক্রিস পেপের নেই। আর সদবির নিলাম হাউজ এই সম্পদ বিক্রিতে সহায়তা করে ‘ঔপনিবেশিক শোষণের চলমান ধারার ভাগীদার হচ্ছে।’

সম্পদগুলোকে ‘ডুপ্লিকেট’ বলা নিয়ে আপত্তি জানানোর পাশাপাশি এগুলোকে নমুনা হিসাবে দেখার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছে ভারত। তাছাড়া, সম্পদগুলোর হেফাজত নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছে।

ভারত বলছে, তাদের দেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কাছে এই সম্পদ ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী এবং বৌদ্ধদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। তাই নীতিগত ভাবে এ সম্পদ নিলামে তোলা যায় কিনা সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ।

মানবদেহের অংশবিশেষ নিলামযোগ্য কিনা কিংবা এগুলোকে অন্য পণ্যের মতো নিলাম ডেকে বিক্রি করা উচিত কি না- প্রশ্ন আছে তা নিয়েও।

ইতিহাসবিদদের মতে, বুদ্ধের যা কিছু, সবই বৌদ্ধদের সম্পদ। বুদ্ধের দেহাবশেষ ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, মিনায়মার সবখানেই পূজনীয়।

তবে সম্পদগুলো নিলামে তোলার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ক্রিস পেপে বলেছেন, ‘‘আমরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ভাবাবেগের কথা ভেবে সবই দান করতে চেয়েছিলাম।

“কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেকারণে নিলাম ডেকে সম্পদগুলো যোগ্য সংরক্ষকের হাতে তুলে দেওয়াটাই সবচেয়ে সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ পন্থা বলে মনে হয়েছে।’’

অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন বেঙ্গল বুড্ডিস্ট  তাৎক্ষণিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের সম্মানীয় মন্ত্রী ও বিদেশ সচিব কে বিষয়টির উপর গুরুত্বসহকারে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পত্র পাঠানো হয়।