০৮:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০০ বছরে পা রাখলেন সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের

  • ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট সময় ০৪:০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
  • ৫৯০ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ সংঘরাজ মহাসভার ত্রয়োদশ সংঘরাজ শাসন শোভন ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের’র ১০০ তম জন্মদিন আজ।

সোমবার  (১৮ নভেম্বর) ৯৯ পেরিয়ে ১০০ এ পা রাখলেন এ বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু। এ উপলক্ষে রাউজান তার সাধনপীঠ বিনাজুরী শ্মশান বিহারে বিস্তারিত কর্মসুচী গ্রহণ করা হয়েছে। এমন এক সময়ে তার জন্মদিন পালন করা হচ্ছে যখন তিনি চট্টগ্রাম নগরীর রয়েল হাসপাতালেচিকিৎসাধীন আছেন।

জন্মঃ

সমাজ সদ্ধর্ম পরিমন্ডলে কাল পরিক্রমায় কিছু কিছু বিরল ব্যক্তিত্ব বিদগ্ধ অনুভাবকের দেখা মেলে যারা নিজেদের জ্ঞান-পূত আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দূর করেন সমাজের অজ্ঞানতার অন্ধকার, আলোকিত করেন চারপাশ, মোহমুক্ত করেন মানুষকে, সবার সামনে খুলে দেন আলোকজ্জ্বল এক উদ্বেলিত এবং মহাজীবনের ঠিকানা। নিবৃতচারী প্রাতঃস্মরণীয় এই মহামনীষী হলো ধর্ম সমাজ জনকল্যাণের বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, অনাথের নাথ,বিনয়াচার্য,উপসংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাথের।

জন্ম ১৮ ই নভেম্বর ১৯২৫ খৃষ্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত উত্তর গুজরা ডোমখালি গ্রামে। তার পিতার নাম প্রেমলাল বড়ুয়া আর মাতার নাম মেনকা বালা বড়ুয়া।শৈশবে তার নাম ছিল লোকনাথ বড়ুয়া। হালদা নদীবিধৌত জনপদ প্রান্তরে তার শৈশব কাল কেটেছে নানা টানাপোড়েনে। শৈশবে মাতৃহারা হয়ে খানিকটা থমকে গেলেও পরবর্তীতে বিমাতা স্নেহলতা বড়ুয়া, ঠাকুরমা নবকুমারী বড়ুয়া এবং বাবার অপত্য স্নেহ মমতা তাকে ধীরে ধীরে যথার্থভাবে বেড়ে ওঠার সাহস শক্তি যুগিয়েছিল এবং বালক লোকনাথ পৃথিবীর পথে অপার বিস্ময় নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।

শৈশবের শিক্ষাজীবনঃ
বাল্যকালেই গ্রাম্য পাঠশালায় লোকনাথের শিক্ষাজীবন শুরু। কিছুদিন সেখানে পড়ালেখার পর তিনি বিনাজুরী নবীন এম ই স্কুলে পড়ালেখা করেন। সে সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) চরম সংকটকালে চারিদিকে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করলে বালক লোকনাথের পড়াশুনায় সাময়িক বাধা পড়ে।বাবার অসুস্থতা, সংসারের টানাপোড়েনে অনেকটা হতভম্ব হয়ে পড়েন লোকনাথ। এদিকে হঠাৎ করে ঠাকুরমার মৃত্যুতে আরও বিপর্যয়ে পড়ে যায় পুরো পরিবার। অসুস্থ বাবার বিপর্যস্থ অবস্থায় এ সময় পরিবারের পাশে দাড়ান মাতুল খগেন্দ্র লাল বড়ুয়া। উল্লেখ্য যে মাতুল খগেন্দ্র লাল সুদূর আকিয়াবে ব্যবসায় নিমগ্ন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাকে গার্হস্থ্য জীবনে বেশিদিন আটকে রাখতে পারেনি। তিনি দেশে ফিরে প্রব্রজিত হয়ে সারানন্দ শ্রমন নামে খ্যাত হন।পরবর্তীতে ভিক্ষু সারানন্দ লোকনাথের পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে তাকে পশ্চিম বিনাজুরী সোনাইর মুখ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন এবং পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ সেখান থেকেই সমাপ্ত করেন।

প্রব্রজ্যা ও মাধ্যমিক পাঠঃ

লোকনাথ বড়ুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্তির পর মামা ভিক্ষু সারানন্দের পূত সংস্পর্শে থেকে ধর্মীয় শিক্ষা আচার আচরণের প্রতি অতিমাত্রায় মনোযোগী ও নিবেদিত হয়ে পড়েন। বিহারে অবস্থানকালীন নানা ধর্মীয় কার্যক্রম, ভিক্ষুসংঘের ধর্মদেশনা ধর্মালোচনা, বিনয়সম্মত জীবনযাপন ইত্যাদি মাঙ্গলিক ক্রিয়া কর্মে তার অন্তরে সতত এক ভিন্ন অনুভূতির ক্ষেত্র গড়ে ওঠে।তার চিন্তা চেতনায় কর্মে ধর্মজগতের এক অভূতপূর্ব বাতাবরণ যেন জন্ম নিতে থাকে যা তাকে সংসার জীবনের প্রতি নিরাকৃষ্ট করে তোলে। লোকনাথের চলমান জীবনের ভিন্নতা পর্যবেক্ষণ করে মামা ভিক্ষু সারানন্দ লোকনাথ কে প্রব্রজ্যা প্রদানের কথা গুরুত্বসহকারে চিন্তা করতে লাগলেন।অতঃপর ১৯৪৪ খৃষ্টাব্দে তখনকার মহান আচার্য জোবরা সুগত বিহারের অধ্যক্ষ উপসংঘরাজ গুনালংকার মহাস্থবিরের উপাধ্যায়াত্বে লোকনাথ প্রব্রজ্যা দীক্ষা নিয়ে বুদ্ধ শাসনে প্রবেশ করেন।গুরুদেব তার নাম রাখলেন “জ্ঞানশ্রী” যার অর্থ চমৎকার জ্ঞানের সৌকর্য।প্রব্রজ্যা গ্রহনের পর শ্রমন জ্ঞানশ্রী সাধারণ শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি বহুলাংশে নিবিষ্ট হয়ে পড়েন।ধর্ম বিনয় সম্পর্কিত তার নানা জ্ঞান অন্বেষণের অদম্য ইচ্ছার ফলশ্রুতিতে পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ এ সময় খুবই চমকিত হন।তারা তার কাছে তুলে ধরেন বুদ্ধবাণীর অপার সৌকর্য। প্রব্রজ্যা গ্রহণের পর কিছুকাল গুরুর সান্নিধ্যে অবস্থানের পর গুরুদেবের আদেশে ও মির্জাপুর বাসীর আকুল প্রার্থনায় শ্রামন জ্ঞানশ্রী মির্জাপুর শান্তিধাম বিহারের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে আগমন করেন। সেখানে অবস্থান করে জরাজীর্ণ বিহারটিকে মাত্র ১১ বছরের ব্যবধানে এক মনোরম বিহারে পরিণত করেন। উল্লেখ্য এখান থেকেই প্রথম মুষ্টি চাউলের প্রথা প্রথম প্রবর্তন করেন। মুষ্টি চাউলের প্রচলন ঘটিয়ে জরাজীর্ণ বিহার পরিণত হয় মনোরম বিহারে।
মুষ্টি চাউল প্রথা এমন এক প্রথা যার মাধ্যমে এক দিকে যেমন দাতার প্রকৃত দান চেতনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বিশাল দান চেতনায় পরিনত হয় আরেকদিকে মুষ্টি চাউলের বিন্দু বিন্দু সঞ্চয় দিয়ে বিহার/প্রতিষ্ঠানের নিরন্তর উন্নয়ন সাধন সম্ভব।শ্রমন জ্ঞানশ্রী শ্রামন্য জীবনে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় পারদর্শীতার জন্য মির্জাপুর হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে এখান থেকেই প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হন।

 

উপসম্পদাঃ
১৯৪৯ খৃঃ শ্রামন জ্ঞানশ্রীর জীবনের এক পয়মন্ত সময়। এ সময় গুরু উপসংঘরাজ গুনালংকার মহাস্থবির শ্রামণ জ্ঞানশ্রীর ধর্মানুরাগ,প্রিয়শীল ধর্মীয় জীবনযাপনের নানা দিক অবলোকন করতঃ তাকে উপসম্পদায় অভিষিক্ত করার বিষয় বিবেচনা করেন।ধর্মগুরু গুনালংকার মহাস্থবিরের উপাধ্যায়াত্বে অতঃপর তাকে চাকমা রাজমহিষী কালিন্দী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক রাজানগর শাক্যমুনি বিহার সীমায় তার উপসম্পদা কর্ম সুসম্পন্ন করেন।শুরু হয় ভিক্ষুত্ব জীবন।এ সময় সীমা আচার্য ছিলেন ৬ষ্ঠ সংঘরাজ ধর্মকথিক ধর্মানন্দ মহাস্থবির, আচার্য ভদন্ত জ্ঞানীশ্বর নহাস্থবির, বিনয়াচার্য ভদন্ত বংশদ্বীপ মহাস্থবির, সত্যদর্শন প্রনেতা বিদর্শন গুরু বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির, ভদন্ত ধর্মানন্দ মহাস্থবির (রাংগুনিয়া) ,ভদন্ত আনন্দমিত্র মহাস্থবির, ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবির প্রমুখ।

কর্মবাচা আচার্য ছলেন রাজানগর শাক্যমুনি বিহারের অধ্যক্ষ রাজগুরু ভদন্ত ধর্মরত্ন মহাস্থবির।

 

ধর্মপ্রচারকঃ

বুদ্ধ বলেছেন “চরথ ভিকখবে চারিকং,বহুজন হিতায় বহুজন সুখায “
হে ভিক্ষুগন ধর্মের সুধা নিয়ে দিকে দিকে বিচরণ কর,আত্মহিত ও পরহিতার্থে ধর্মসুধা বিতরণ কর”

এই মূলমন্ত্র ধারণ করে নব উপসম্পদা প্রাপ্ত ভিক্ষু জ্ঞানশ্রী ধর্মপ্রচারের ব্রত নিয়ে ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ৬ বছর সাল পর্যন্ত মির্জাপুর শান্তিধাম বিহারে অবস্থানের পর ১৯৫৫ সালে চলে আসেন রাউজান বিমলানন্দ বিহারে।সেখানে অবস্থানকালীন তিনি প্রতি মঙ্গলবার ধর্মসুধা দান,ধর্মজ্ঞান সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা পালন করে সবার সাধুবাদ অর্জন করেন।ধর্মদানের এই উত্তম পন্থায় তিনি এখানে দায়ক দায়িকাদের নিয়ে গঠন করেন ‘জাতক পরিষদ’ নামে এক ধার্মিক মন্ডলী

পার্বত্য চট্টগ্রাম অধ্যায়:

রাউজান বিমলানন্দ বিহারে কিছুকাল অবস্থানের পর এক অনাথ পিতা ও শিক্ষার আলোর দিশারী হয়ে ভিক্ষু জ্ঞানশ্রী ১৯৫৭ সালে ধর্মপ্রচারের উদ্দ্যেশ্যে পদব্রজে পাড়ি জমান দুর্গম পার্বত্য জেলার মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়িতে।সেখানে অবস্থানকালে তিনি ছাত্রছাত্রীদের ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষা প্রদানের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠা করেন ‘জ্ঞানোদয় পালি টোল’।তিনি পালি টোল প্রতিষ্টার পর ধর্মীয় শিক্ষায় পারদর্শী শিক্ষার্থীদের মাঝে মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ প্রদান করতেন মেধা সীল।মুবাছড়িতে ভান্তের প্রিয় দায়কদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তৎকালীন চেয়ারম্যান বিন্দুকুমার খীসা আর পুরঞ্জয় মহাজন।তারা ভান্তেকে নিরক্ষর, দরিদ্র, অসহায় পার্বত্য সন্তানদের মানুষ করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন।তাদেরই সহযোগিতায় শত প্রতিকুলতার মাঝেও শুধুমাত্র ভিক্ষা কে সম্বল করে শুরু করলেন শিশু শিক্ষা পাঠ এবং অনাথ আশ্রম। ভান্তের স্মৃতিচারণ থেকে জানা তখনকার সময়ে পার্বত্য অঞ্চলের পথঘাট এতই দুর্গম ছিল যে না ছিল ভাল পথঘাট না ছিল যানবাহন।শুধু খাগড়াছড়ি পৌছতেই লেগে যেত সপ্তাহকাল!!ভান্তে সেখানে যেতেন কখনো পায়ে হেটে কখনোবা নদীপথের লঞ্চে করে,নিয়ে নিতেন সাথে করে যতটুকু সম্ভব খাবার।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের ফলে সৃষ্ট বিপুল জলরাশির ভয়াবহতায় মুবাছড়িতে ৩ বছর অবস্থানের পর ভান্তে চলে আসেন খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা বোয়ালখালী চাকমা রাজবিহারে।সেখানে তিনি রাজগুরু পদে অধিষ্ঠিত হন।উল্লেখ্য ভান্তে আসার পর উক্ত বিহারের দায়ক দায়িকাদের একতা বৃদ্ধির জন্য বিহারের নাম দশবল রাজবিহার নাম দেন যার অর্থ দশ বা সামগ্রিক শক্তির সমাহারে এই বিহার।জ্ঞানপিপাসু সদ্ধর্মাদিত্য ভদন্ত জ্ঞানশ্রী সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মোদয় পালি টোল ও পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম। আশ্রম,স্কুল,পালিটোল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে তিনি অবহেলিত পিছিয়ে পড়া আদিবাসী বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় জ্ঞানপ্রভা বৃদ্ধি উত্তরণে ও সার্বিক জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্য আনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম থেকেই ভদন্ত জ্ঞানশ্রী একে একে অনেক মেধাবী সন্তান কে নিজের আদর্শে গড়ে তুলেছেন।এখান থেকে গড়ে উঠেছেন পার্বত্য তিন দিকপাল শিষ্য ভদন্ত বিমলতিষ্য মহাথের(বোধিচারিয়া প্রতিষ্ঠাতা,ভারত),ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরঢাকা বনফুল শিশু সদন ও আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের পরিচালক),ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের(মোনঘর,রাঙামাটি পরিচালক) এবং এখান থেকেই পার্বত্য শিক্ষার মশাল তিনি প্রজ্জ্বলিত করে সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছেন।ভদন্ত জ্ঞানশ্রী এখান থেকেই শিক্ষার মশাল প্রজ্জ্বলিত করে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের হৃদয়ে চিরকালের জন্য আলোরদিশারী হয়ে রয়ে গেলেন।কথিত আছে তৎকালীন সময়ে পার্বত্য চট্টল অনাথ আশ্রমে প্রায় প্রতিনিয়ত ৬০০ জনের অধিক ছাত্র ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষায় নিয়োজিত থাকতেন।বর্তমানে পার্বত্য চট্টল আশ্রমে দায়িত্বে আছেন ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথের। তিনি বর্তমানে সরকারি ক্যপিটেসন গ্র্যান্ট নিয়ে প্রায় ১০০ জন ছাত্র নিয়ে এই আশ্রম এখনো ধরে রেখেছেন।
জ্ঞানশ্রী ও বনভান্তেঃ
বর্তমান সময়ের ভিক্ষুকূল গৌরব পূজনীয় সাধনানন্দ মহাথের’র(বনভান্তে) ভিক্ষু জীবনের প্রথম দিকের উল্লেখযোগ্য সময় জুড়ে রয়েছেন ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের। ১৯৬১ সালে ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের’র উদ্যোগে তার ধর্মগুরু উপসংঘরাজ গুনালংকার ভান্তেসহ জিনবংশ মহাথের,রাজগুরু অগ্রবংশ মহাথের,মায়ানীর অরিন্দম মহাথের,প্রিয়দর্শী,ধর্মদর্শী প্রমুখ সংঘকে দুর্গম দীঘিনালার বোয়ালখালি তে নিয়ে যান।তখনকার সময়ে যোগাযোগ প্রতিকূল পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐ অঞ্চলে পৌঁছাতে পদব্রজে কয়েকদিন সময় লেগেছিল।তাদেরকে সংগীতিকারক করে নিজে কর্মবাচা আচার্য হয়ে গুরুদেব গুনালংকার মহাথেরর উপাধ্যায়ত্বে মায়ানী নদীর উদক সীমায় বনভান্তেকে শুভ উপসম্পদা প্রদান করেন।
মোনঘরপ্রতিষ্ঠাঃ
অতঃপর বোয়ালখালী পার্বত্য চট্টল অনাথ আশ্রম থেকে নিজের হাতে গড়া শিষ্যদের দিয়ে তিনি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পার্বত্য অঞ্চলের বর্তমান বাতিঘর রাঙামাটির মোনঘর অনাথ আশ্রম। ভান্তের স্মৃতিচারণ অনুসারে মোনঘরের মূল জায়গা খানি নিজে ক্রয় করে দিয়ে হাতে গড়া শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম বিমলতিষ্য, প্রজ্ঞানন্দ, শ্রদ্ধালংকার সহ সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকের মোনঘর প্রতিষ্ঠা করেন যা সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার মশাল হয়ে জ্বলজ্বল করে বর্তমান দেদীপ্যমান।ভদন্ত জ্ঞানশ্রী পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘ ১৮ বছর অবস্থান করে সেখান কার আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার বীজ বপন করে দিয়েছেন।তিনি আদিবাসীদের নিকট প্রবাদপ্রতিম মহাপুরুষ, প্রবাদপ্রতিম মহাগুরু,আলোর দিশারী,তিনিই সদ্ধর্মাদিত্য।তিনি বিনা পার্বত্য শিক্ষার ইতিহাস অসম্পূর্ণ, তিনি বিনা আদিবাসী শিক্ষিত সমাজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসম্পূর্ণ।তৎকালীন পার্বত্য আদিবাসী সমাজ তারই শিক্ষা নির্দেশনায় এতটুকু আসতে পেরেছে।
ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের পার্বত্য অঞ্চলে একদিকে সাধারণ শিক্ষার আলো জ্বেলে দিয়েছেন আরেকদিকে বনভান্তেকে উপসম্পদা প্রদান করে আদিবাসী সমাজে পারমার্থিক মার্গের পথ সুগম করে দিয়েছেন।সর্বোপরি পার্বত্য আদিবাসী বৌদ্ধ সমাজ সর্বদিকে এই মহাপুরুষের নিকট চির ঋণী
ত্রিপিটক প্রচার বোর্ড প্রতিষ্ঠাঃকর্মযোগী ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের ১৯৬৪ খৃঃ সাহিত্যরত্ন অষ্টম সংঘরাজ শীলালংকার মহাথেরোর সাথে যৌথ ভাবে গঠন করেন ত্রিপিটক প্রচার বোর্ড যা তার এক অনন্য কীর্তি। অধুনালুপ্ত ত্রিপিটক প্রচার বোর্ড থেকে অষ্টম সংঘরাজ ও ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের’র লিখিত কালজয়ী বৌদ্ধ মনীষীদের জীবনীগ্রন্থ -বিশাখা, জীবক,আনন্দ,বৌদ্ধ নীতিমঞ্জরী আজও বৌদ্ধ সমাজে অতিমাত্রায় পঠিত ও সমাদৃত হয়ে আসছে।কর্মযোগীঃ
ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের পার্বত্য অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ১৮ বছর ধরে আলোর পথ দেখিয়ে আবার সমতলের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর জীবন ধর্মীয় চেতনা উন্মেষে কাজ করতে মনস্থ হন।সে লক্ষ্যে তিনি ১৯৭৫ খৃষ্টাব্দে পার্বত্য অঞ্চলে তার প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, অনাথ আশ্রম সমূহ ইত্যাদির দায়িত্বভার শিষ্য প্রশিষ্যদের বিশেষ করে বিমলতিষ্য ও প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুকে বুঝিয়ে দিয়ে আবার সমতলে ফিরে আসেন এবং রাউজান থানার কদলপুর সুধর্মানন্দ বিহারে অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন।
অতঃপর ১৯৭৭ খৃঃ কদলপুরে গৌরচন্দ্র যতীন্দ্র দুঃস্থ অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। বিহারের উন্নয়ন ও কর্মকাণ্ড বিস্তারের লক্ষ্যে কদলপুরে মুষ্টি চাউল উত্তোলন প্রথা পুনরায় চালু করেন।
তার কর্মউদ্যোগের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৭৬ সালে ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের বিপুল ভোটের ব্যবধানে ভদন্ত শাক্যবোধি মহাথেরকে হারিয়ে  সংঘরাজ ভিক্ষু মহামন্ডলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহামন্ডলের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার পর ঐ সময় মহামন্ডলের কাজকর্ম সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে একটি তহবিল গঠন করে দেন যেখানে তিনি নিজেই ৬ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন।
১৯৭৭ সালে বৌদ্ধ সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মীয় চেতনা সংস্কারের উন্নতি কল্পে ‘সংঘরাজ ভিক্ষু মহামন্ডল ধর্মীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠন করে বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।উক্ত শিক্ষা পরিষদেরও ৬ লক্ষ টাকার একটি তহবিল গঠন করে দেন যেখানে তিনি নিজেই ১ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন।এ সময়ে তিনি নিজস্ব আর্থিক ফান্ডে মহামন্ডল শিক্ষা পরিষদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রকাশনা ত্রৈমাসিক “ধর্মায়তন” প্রতিষ্ঠা করেন।
কদলপুরে দীর্ঘ ১১ বর্ষা অবস্থানকালীন এখানে একে একে গড়ে তুলেছেন অনাথ আশ্রম, ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার, স্কুল ইত্যাদি।কদলপুরে তার প্রতিষ্ঠিত অনাথ আশ্রম ও ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার তার জীবনের এক অনন্য সৃষ্টি। এখান থেকে বহু ছাত্র উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ ও জাতির সেবা করে যাচ্ছে আর বহু ভিক্ষু প্রশিক্ষিতে হয়ে সংঘ সমাজে নন্দিত হয়ে দিকে দিকে বুদ্ধের অমৃতবাণী প্রচারে রত রয়েছেন।তিনি তাদের সকলের শিক্ষক ও গুরু হিসেবে ভিক্ষু গৃহী উভয় সমাজের নিকট সম্মানের রাজমুকুট অর্জন করে চিরকালের জন্য হয়ে খ্যাত হয়ে গেলেন মহাগুরু,মহা আচার্য হিসেবে।সে সময়ে তার নিকট তম সহযোগী ছিলেন ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথের ও ভিক্ষু এইচ সুগতপ্রিয়।যতদিন কদলপুর ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার থাকবে ততদিন এই তিন মহামনীষী অমর হয়ে থাকবেন।

১৯৮৬ সালে ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরো কদলপুর থেকে চলে আসলেন গুরুর জন্মজনপদ জোবরা গ্রামে। জোবরা সুগত বিহারের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব নিয়ে ১৯৮৭ সালে গুরুর নামে প্রতিষ্ঠা করলেন গুনালংকার বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম।উক্ত অনাথ আশ্রমে তিনি নিজ অর্থে প্রায় ১২ গন্ডা জমি ক্রয় করে দেন।উক্ত আশ্রমে বহুসংখ্যক বৌদ্ধ অনাথ ছাত্র লেখাপড়ায় উচ্চশিক্ষিত হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।ভিক্ষুজীবনের মূল্যবান ৩ টি বর্ষা তিনি জোবরা সুগত বিহারে অবস্থান করে ১৯৮৯ সালে মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহারে অধ্যক্ষ হলেন।বিহারের দায়িত্ব নিয়ে তিনি শুরু করে দিলেন বিহার উন্নয়নের।তখনকার সময় তিনি বিস্কুটের ১ টি করে টিন ও নারিকেলের মালা(মুষ্টি চাউল নেওয়ার) পাড়ার ছেলেদের তোলার দায়িত্ব দিতেন।সে মুষ্টি চাউল সংগ্রহ করে তারা ভান্তের কাছে জমা দিতো।কথিত আছে মুষ্টি চাউল প্রথা শুরু করেছিলেন বর্তমান তরুন কর্মবীর ভিক্ষু ভদন্ত বোধিমিত্র ভান্তের পিতা প্রয়াত মনোরঞ্জন বড়ুয়ার কাছ থেকে মুষ্টি সংগ্রহ করে।মুষ্টি চাউলের বিক্রয় লব্ধ অর্থ দিয়ে মির্জাপুর গৌতমাশ্রমে ভিক্ষু নিবাস ও সিংহ শয্যা বুদ্ধমূর্তির কক্ষ নির্মাণ করতে সক্ষম হলেন ঊনারই শিষ্য শাসনানন্দ ভিক্ষুকে দিয়ে।গৌতমাশ্রম বিহারে দায়ক দায়িকাদের মধ্যে চালু করেন প্রাতঃ ও সন্ধ্যা বন্দনা।অতঃপর ঢাকায় অবস্থানরত ভদন্ত শান্তপদ ভান্তের প্রয়ান হলে মির্জাপুর গৌতমাশ্রমে ২ বর্ষা অবস্থান করে চলে যান ঢাকা মেরুল বাড্ডা বৌদ্ধ বিহারে ঢাকায়।

এই কালজয়ী মহাপুরুষ সংঘের নির্দেশে মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহারে ২ বর্ষা অবস্থান করেন।তৎকালীন মহাসভার মহাসচিব ভদন্ত শান্তপদ মহাথের পূর্বে এই বিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন।শান্তপদ ভান্তে ঢাকায় অবস্থানহেতু ঊনার মৃত্যুতে ১৯৯১ সালে ঢাকা মেরুল বাড্ডা বিহারের হাল ধরেন ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের।সংঘের নির্দেশে ডোমখালি থেকে প্রিয় শিষ্য শাসনানন্দ ভিক্ষুকে রেখে গেলেন মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহারের দায়িত্বে।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ বর্ষাবাস তিনি ঢাকা বাড্ডা আন্তর্জাতিক বিহারে অবস্থান করেন।সেখানেও তিনি তার কর্মপ্রচেষ্টা দ্বারা দাতা প্রতি একহাত/১ ফুট করে টাকা নিয়ে উক্ত বিহারের অবকাঠামো বৃদ্ধি করেন যা এখনো লোকে মুখে শুনা যায় তার সদিচ্ছার কথা।
উত্তরবঙ্গে ধর্মাভিযানঃ
নব্বইয়ের দশকে রাজধানী ঢাকার মেরুল বাড্ডা বিহারে অধ্যক্ষ থাকাকালীন থাকাকালীন উত্তরবঙ্গের কোন একজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ভান্তের সাথে পরিচয় হয় এবং তার সাথে আলাপকালে বুঝতে পারেন
যে তারা আদিতে বৌদ্ধ ছিল কিন্তু কালের নিষ্ঠুর ইতিহাসে তারা তাদের নিজস্ব বৌদ্ধ ধর্ম হারিয়ে গিয়েছিল।অতঃপর এই মহামানব উত্তরবঙ্গের বৌদ্ধ ধর্মের অতীত ইতিহাস ইতিহাস,ঐতিহ্য,সংস্কৃতির হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তৎপর হন।তিনি এতদঞ্চলের অবহেলিত হারিয়ে যেতে থাকা বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীকে তাদের শিক্ষায় দীক্ষা ও আর্থ সামাজিক সমস্যা গভীরভাবে অবলোকন পর্যবেক্ষণ করে এ সময় দৃঢ় চিত্তে প্রগাঢ় মনোবল নিয়ে হতশ্রী অসহায় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর পাশে গিয়ে দাড়ালেন।তাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের হিতার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।প্রতিবছর অবহেলিত দরিদ্র জনগণের মাঝে বস্ত্র কম্বল, বিনামূল্যে ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করেন।সেখানে একে একে গড়ে তুলেছেন অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিহার ও অনাথ আশ্রম।সেগুলোর মধ্যে উচাই জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার,নূরপুর জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার, জয়পুর সেখানে একে একে গড়ে তুলেছেন অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিহার ও অনাথ আশ্রম।সেগুলোর মধ্যে উচাই জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার,নূরপুর জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার, জয়পুরহাট অন্যতম। মিঠাপুকুর বেনুবন বিহারের সংলগ্ন অবকাঠামো উন্নয়নে শিশু সদন অনাথালয় প্রতিষ্ঠাতার্থে সাড়ে একত্রিশ শতক জমি প্রায় ৫ লক্ষ টাকা মূল্যে খরিদ করে দিয়েছেন। এছাড়াও রংপুর, বদরগঞ্জ,নবশালবন বিহার,ঠাকুরগাঁও তক্ষশিলা বিহারের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্যও জায়গা খরিদ করে দেন।উত্তরবঙ্গের আদি বৌদ্ধদের ঢাকায় অবস্থানকালে আবিষ্কার করতে পারলেও তিনি যখন চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করেন সে সময়ে উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।

বিশ্বশান্তি প্যাগোডায়ঃ

১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ বর্ষাবাস ঢাকায় অবস্থান শেষে ১৯৯৫ সালে সংঘের নির্দেশে ঢাকা থেকে চলে এলেন চট্টগ্রামে বিশ্বশান্তি প্যাগোডার হাল ধরার জন্য।বিশ্বশান্তি প্যাগোডার ভার নিয়ে সেখানে প্যাগোডা নির্মাণের জন্য ব্রতী হলেন।কিন্তু উন্নয়নে পারিপার্শ্বিক হাজারো সমস্যার কারণে মাত্র ২ বর্ষাবাস যাপন শেষে বিনাজুরী বাসীদের একান্ত আগ্রহে ১৯৯৭ সালে পুনরায় চলে আসতে হলো তার অনেক স্মৃতি ধন্য বিনাজুরী শ্মশান বিহারে। বিনাজুরীঃ
মহান আচার্য জ্ঞানশ্রী মহাথের ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বশান্তি প্যাগোডায় অবস্থানের পর ১৯৯৭ সালে চলে আসেন তার স্মৃতি ধন্য স্থান পশ্চিম বিনাজুরী শ্মশান বিহারে যেখানে দায়ক দায়িকারা তাকে আজীবন অধ্যক্ষের আসনে পূজা করেন।
বিনাজুরী এসেই বিনাজুরী শ্মশান বিহারকে নবরুপে সংস্কার করেন।এখানে ও একে একে প্রতিষ্ঠা করেছেন বিনাজুরী ধর্মকথিক অনাথ আশ্রম,পশ্চিম বিনাজুরী উচ্চ বিদ্যালয়,বিনাজুরী জ্ঞানশ্রী আন্তর্জাতিক ভাবনা কেন্দ্র ও বৃদ্ধাশ্রম।
শীলগুনে বিভূষিত,বিনয়ালঙ্কৃত এই মহান কর্মযোগী মহাপুরুষটি অনাথ ছেলেদের অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকতে যেন সহ্য করতে পারেন না।
তাই তো তার কর্মবহুল জীবনে যেখানেই অবস্থান করেছেন সেখানেই অনাথ ছেলেদের জন্য রেখে দিয়েছেন আশ্রয় আর তাদের জন্য হৃদয়ে রেখে দিয়েছেন অপার স্নেহ ও মৈত্রী।

তাই ১৯৯৪ সালে পশ্চিম বিনাজুরীতে প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মকথিক অনাথ আশ্রম যেখান থেকে হাজার হাজার অনাথ ছেলে ও অন্যান্য ছাত্র শিক্ষা লাভ করে জীবনে উন্নতি লাভ করেছে এবং ভান্তের সব সময় তারা ভান্তের খোঁজ খবর নেন ও কৃতজ্ঞ পূজা নিবেদন করতে আসেন।বিনাজুরী আশ্রমে প্রশিক্ষনার্থী ভিক্ষু শ্রমন দের দৈনন্দিন ব্রতকর্ম,বিনয়শীল জীবন আচরণ, নিয়মিত পিন্ডাচরন চালু করেছেন।এই বিনাজুরী ধর্মকথিক অনাথ আশ্রম ও ভিক্ষু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেন দ্বিতীয় কদলপুর ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার।বর্তমানে এই আশ্রমের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন তারই প্রিয় শিষ্য ভদন্ত শাসনানন্দ মহাথের।তিনিও আদিবাসী ছেলেদের সন্তানের মতই লালন পালন করেন। এখান থেকেই ভান্তের আদর্শে দীক্ষিত ও শিক্ষালাভ করে হাজার হাজার ভিক্ষু শ্রমন হয়ে দিকে দিকে ধর্মপ্রচারে রত আছেন।ভান্তের আর্থিক বদান্যতায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে পশ্চিম বিনাজুরী উচ্চ বিদ্যালয় যেখানে ভান্তে প্রতিষ্ঠা কালীন সময়েও এককালীন ১ লাখ টাকারও অধিক দান দিয়ে স্কুলের প্রতিষ্ঠা তহবিল কে শক্তিশালী করে দিয়েছেন।বর্তমানে পশ্চিম বিনাজুরী উচ্চ বিদ্যালয় বিনাজুরী অঞ্চলে অন্যতম একটি শিক্ষা বিদ্যাপীঠ। এখান থেকেই প্রতি বছর বিনাজুরী আশ্রমের ছাত্র সহ এলাকার হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা শেষে জীবনে উন্নতি করেছে।প্রতিষ্ঠা করেছেন জ্ঞানশ্রী আন্তর্জাতিক ভাবনা কেন্দ্র যা বর্তমান সময়ে কাজ চলমান।২০১১ সালে বিনাজুরী শ্মশান বিহারে অনুষ্ঠিত হয় শ্রদ্ধেয় ভান্তের আন্তর্জাতিক মানের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠান এবং তার জীবনের সমস্ত দান দক্ষিণার সঞ্চয় দিয়ে বুদ্ধ শাসনের কল্যাণের জন্য বিনাজুরী তে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ বুদ্ধ শাসন কল্যাণ ট্রাস্ট।

উত্তরবঙ্গে ধর্মাভিযানঃ

ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের ১৯৯১-১৯৯৪ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ হিসেবে অবস্থান করেন। ঐ সময় হতে উত্তরবঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের অতীত ঐতিহ্য,সভ্যতা,সংস্কৃতির হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তৎপর হন।ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরোর জীবনের অন্যতম মহান কীর্তি সুদূর উত্তরবঙ্গের রংপুর,দিনাজপুর,রাজশাহী,বগুড়া,জয়পুরহাট,ঠাকুরগাঁও,সিরাজগঞ্জ,নওগাঁর প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবলুপ্তপ্রায় বৌদ্ধজনগোষ্ঠীকে অতীত ঐতিহ্যের বৌদ্ধধর্মের সুশীতল ছায়াতলে পুনরায় আনয়নকরত উত্তরবঙ্গের হারানো বৌদ্ধ কৃষ্টি ঐতিহ্যকে আবার বিশ্বসমক্ষে উপস্থাপন করা।ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এক সময় বরেন্দ্রভূমি খ্যাত এ অঞ্চলসমূহে বৌদ্ধ ধর্মের বিজয় পতাকা সগৌরবে উড্ডীন ছিলো। কিন্তু রাষ্ট্রবিপ্লব এবং হতদরিদ্্র অবস্থার প্রেক্ষিতে সেই গর্বিত বৌদ্ধ সমাজের সোনালী দিনগুলো এক সময় অপসৃত হয়ে পড়ে।তাদের উত্তর পুরুষেরাও কালের এ করালগ্রাসের ঘৃন্য থাবা হতে নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি নানা সামাজিক অর্থনৈতিক বৈষয়িক কারনে। কালক্রমে তারা বিভিন্ন আদিবাসীদের সংস্কারের সাথে অসহায়ভাবে যুক্ত হয়ে নিজেদের ধর্ম-কৃষ্টি সভ্যতাকে পর্যন্ত হারিয়ে ফেলতে বসেছিল।ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের এতদঞ্চলের অবহেলিত হারিয়ে যেতে থাকা বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীকে তাদের শিক্ষাদীক্ষা ও আর্থসামাজিক সমস্যা গভীরভাবে অবলোকন পর্যবেক্ষন করে এক সময় দৃঢ়চিত্তে প্রগাঢ় মনোবল নিয়ে হতশ্রী অসহায় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন।তাদের প্রতি সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন ।স্বীয় বার্ধক্য,শারীরকি অসুস্থতাকে গুরুত্ব না দিয়ে তিনি সীমাহীন ধৈর্য্য ধারণ করে উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর পুনর্জাগরণে মঙ্গল কামনায় বৌদ্ধ ধর্মের মূল¯্রােতে তাদের আবার ফিরে আসার অদম্য ইচ্ছাকে বাস্তবে রুপ দিতে নিররসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।তিনি উল্লেখিত জেলাসমূহে পরিভ্রমণ করে অত্র অঞ্চলের আদিবাসীদের যারা একান্তভাবে বৌদ্ধধর্মের সেই সুশীতল ছায়াতলে জীবনযাপন করতে ইচ্ছুক তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের হিতার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন ।তিনি প্রতি বছর নিয়মিত শীতকালে অবহেলিত দরিদ্র জনগনের মাঝে শতি বস্ত্র বিতরন করেন ।
শ্রদ্ধেয় ভান্তে উত্তরবঙ্গে নিম্নলিখিত কার্যক্রম সমূহ সম্পাদন করেছেন:
১/জয়পুরহাট পাঁচবিবি উপজেলার উচাই সূর্যাপুর গ্রামে উপসঙ্ঘরাজ ড: জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা।
২/জয়পুরহাট নুরপুরে উপসঙ্ঘরাজ ড: জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা ও প্রভাতী ধর্মীয় শিক্ষার প্রবর্তন ।
৩/রংপুর মিঠাপুকুর বেনুবন বিহার সংলগ্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অনাথালয় শিশুসদন প্রতিষ্ঠার্থে সাড়ে একত্রিশ শতক জমি পাঁচ লক্ষ টাকায় কিনে দান করেন ।
৪/বদরগঞ্জ নবশালবন বিহারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জমি ক্রয় করে দেন ।
৫/ঠাকুরগাঁও তক্ষশীলা বিহারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জমি ক্রয় করে দেন ।
৬/উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিহার প্রতিষ্ঠান সমূহ রক্ষার্থে সর্বপ্রথম মুষ্ঠি চাউল উত্তোলন প্রথা প্রবর্তন করেন ।
৭/খুলনার বাগেরহাট একটি বিহার ও বরিশালের আখৈলঝরায় একটি বিহার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার কাজ চলমান।

চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ পদ গ্রহণঃ

১৯৯৭ থেকে ২০০২ পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বর্ষা পশ্চিম বিনাজুরী শ্মশান বিহারে অবস্থানের পর চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সুবোধিরত্ন মহাস্থবির প্রয়ান হলে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির প্রবল ইচ্ছার কারণে চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ পদে সমাসীন হলেন। ।শুরু হলো নাগরিক জীবনের চাকচিক্যময় অধ্যায়।চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে এসেই তিনি শুরু করেন বিবিধ উন্নয়নমূলক কাজ আরম্ভ করেন।দু:খমুক্তির অন্যতম উপায় বিদর্শন সাধনা। ।এই বিহারে এসে তিনি মুক্তিকামী উপাসক উপাসিকাদের নিয়ে আরম্ভ করেন প্রতিদিন সন্ধ্যাকালীন বিদর্শন ধ্যান অনুশীলন। বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান দানবীর রাখাল চন্দ্র বড়–য়ার পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু করেন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার ও অনাথ আশ্রমের কার্যক্রম। ভান্তের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে উপাসক উপাসিকারা দ্বিগুন উতসাহে হয়ে উঠেন বিহারমুখী।শ্রদ্ধেয় ভান্তের অত্র বিহারে অবস্থানকালে বিহারের উন্নয়নমুখী বিবিধ কাজ শুরু হয়।২০০৮ সালে আরম্ভ হয় বিহারের পুন;নির্মান কাজ ।
উপসংঘরাজ পদে অভিষেকঃ

২০০৩ সালে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সাংঘিক পূন্যপুরুষ মহামান্য একাদশ সংঘরাজ পন্ডিত শাসনশ্রী মহাস্থবির মহাপ্রয়ান করলে ২৯ শে জানুয়ারী ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের পূর্বরাত্রে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ৫৭ তম অধিবেশনে মহান সংঘের সর্বসম্মতিক্রমে উপসংঘরাজ ধর্মসেন মহাস্থবির মহামান্য দ্বাদশ সংঘরাজ পদে অভিষিক্ত হন।তিনি সংঘরাজ পদে অভিষিক্ত হলে উক্ত অধিবেশনে মহাসভার উপসংঘরাজ পদ শূন্য হয়ে গেলে সে শূন্যপদে শাসনশোভন ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির মহোদয় মাননীয় উপসংঘরাজ পদে অভিষিক্ত হন।

বিদেশ ভ্রমণঃ

শাসন পথিকৃৎ ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরো দেশে বিদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় সভা সমে¥লন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হয়ে যোগদান করে মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশে আলোকিত সমাজ গঠনে মহাকারুনিক বুদ্ধের সদ্ধর্মের অমোঘ বাণী প্রচার করে যাচ্ছেন। সম্মানিত অতিথি হয়ে ভ্রমণ করেছেন বহু দেশ। তার মধ্যে ২০০৭ খৃস্টাব্দে মায়ানমার সরকারের আমন্ত্রনে মায়ানমার সফর করেন ।২০০৭ খৃস্টাব্দে সম্মানসূচক ডক্টর ডিগ্রী গ্রহনের জন্য থাই সরকারের আমন্ত্রনে থাইল্যান্ড সফর করেন। ২০০৮ খৃস্টাব্দে জাপানের রয়েল গ্র্যান্ড হল অব বুড্ডিজম এ অনুষ্ঠিত পঞ্চম বুড্ডিস্ট সামিট – ওয়ার্ল্ড বুড্ডিস্ট সুপ্রিম কনফারেন্সে যোগদান করেন।২০১১ খৃস্টাব্দে শ্রীলংকান সরকারের বিশেষ আমন্ত্রনে শ্রীলঙ্কা সফর করেন। ২০১৯ খৃস্টাব্দে ধুতাঙ্গ সাধক ভদন্ত শীলানন্দ থের ভিয়েতনাম উপাসক উপাসিকাদের আমন্ত্রনে তারই পরম গুরু হিসেবে ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের মহোদয়কে ভিয়েতনাম সফরে নিয়ে যান। এছাড়াও শ্রদ্ধেয় ভান্তে বহুবার বিভিন্ন সংস্থার আমন্ত্রনে ভারত ও থাইল্যান্ড ভ্রমন করেন।

বিভিন্ন সম্মাননা ও অভিধায় অভিষিক্তঃ

পার্বত্য চট্টগ্রামের বুদ্ধশাসন সদ্ধর্মে বনভান্তেকে উপসম্পদা দান তথা সেখানকার সমগ্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দিয়ে তিনি সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলে সদ্ধর্মাদিত্য সম্মানে ভূষিত হয়ে সেখানকার জনমানসের হৃদয় মন্দিরে মহামানব হিসেবে সর্বদা পূজিত হন।
বৌদ্ধ ধর্ম সমাজ সংস্কৃতিকে বলীয়ান বেগবান করার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে নিষ্ঠার মাধ্যমে লালন পালন করে চলেছেন প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের ।তাই ধর্মের প্রভূত শ্রীবৃদ্ধি-উন্নতিতে অবদান রাখার জন্য থাইল্যান্ডের ফরা ধর্মাধিরাজ মহামুনির উপস্থিতিতে তার কৃতিত্বের জন্য থাইল্যান্ড সরকার কর্তৃক ১৯৮১ খৃস্টাব্দে শাসন শোভন জ্ঞানভানক উপাধিতে ভূষিত হন ।
শাসন শোভন জ্ঞানভানক ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের মহোদয় সদ্ধর্ম সমাজে আত্মত্যাগ ও বিনয়ের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা কর্তৃক ২০০১ খৃস্টাব্দে মহামান্য প্রথম সংঘরাজ সারমেধ মহাস্থবিরের দ্বিশত তম জন্মবার্ষিকীতে বুদ্ধশাসনের দুর্লভ উপাধি বিনয়াচার্য অভিধায় অভিষিক্ত হন। বৌদ্ধদর্শন প্রচার প্রসারে নিরবচিছন্ন প্রচেষ্টায় অবদান রাখার জন্য মায়ানমার সরকার কর্তৃক তিনি ২০০৭ খৃস্টাব্দে মহাসদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ উপাধিতে ভূষিত হন।

এছাড়াও ২০০৭ খৃস্টাব্দে থাইল্যান্ডের মহাচুলারংকর্নরাজা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী(অনারারি পি.এইচ.ডি.) প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। সদ্ধর্মের প্রচার ও ভিক্ষুসংঘের একতায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ কর্তৃক বিশুদ্ধানন্দ স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন। বুদ্ধ দর্শন সম্পর্কে অপরিমেয় পান্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরুপ ২০১২ খৃস্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা কর্তৃক ধর্ম ভান্ডাগারিক উপাধিতে সম্মানিত হন। সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২২ সালে একুশে পদকে ভুষিত হন।  ২০২৩ মায়ানমার সরকার কর্তৃক অগ্রমহাপন্ডিত উপাধীতে ভুষিত হন।

মহামান্য ত্রয়োদশ সংঘরাজ পদে অভিষেকঃ
২০২০ সালের ২১ শে মার্চ মহামান্য দ্বাদশ সংঘরাজ ভদন্ত ধর্মসেন মহাস্থবির মহাপ্রয়ান করার পর সংঘরাজের পদ শূন্য হয়ে গেলে ২০ শে মে ২০২০ খৃস্টাব্দে,রোজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার কারকসভার সর্বসম্মতিক্রমে শাসন শোভন ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির মহোদয়কে মহামান্য ত্রয়োদশ সংঘরাজ পদে মনোনীত করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ২৫ শে মার্চ,রোজ বৃহস্পতিবার মহামান্য দ্বাদশ সংঘরাজ ভদন্ত ধর্মসেন মহাস্থবিরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পূর্বরাত্রে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ৭৩তম বার্ষিক সাধারন অধিবেশনে মহান সংঘের সর্বসম্মতিক্রমে   ত্রয়োদশ সংঘরাজ পদে অভিষেক করা হয়।

(তথ্য ও লেখা সংগ্রহ)

শেয়ার করুন
আরও সংবাদ দেখুন

সৈয়দবাড়ী ধর্ম প্রবর্তন বৌদ্ধ বিহার দ্বিতীয় ভবনের দ্বারোদ্‌ঘাটন , কর্মবীর করুণাশ্রী থের’র “মহাথের বরণ” ১৯ , ২০ ডিসেম্বর

You cannot copy content of this page

১০০ বছরে পা রাখলেন সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের

আপডেট সময় ০৪:০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ সংঘরাজ মহাসভার ত্রয়োদশ সংঘরাজ শাসন শোভন ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের’র ১০০ তম জন্মদিন আজ।

সোমবার  (১৮ নভেম্বর) ৯৯ পেরিয়ে ১০০ এ পা রাখলেন এ বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু। এ উপলক্ষে রাউজান তার সাধনপীঠ বিনাজুরী শ্মশান বিহারে বিস্তারিত কর্মসুচী গ্রহণ করা হয়েছে। এমন এক সময়ে তার জন্মদিন পালন করা হচ্ছে যখন তিনি চট্টগ্রাম নগরীর রয়েল হাসপাতালেচিকিৎসাধীন আছেন।

জন্মঃ

সমাজ সদ্ধর্ম পরিমন্ডলে কাল পরিক্রমায় কিছু কিছু বিরল ব্যক্তিত্ব বিদগ্ধ অনুভাবকের দেখা মেলে যারা নিজেদের জ্ঞান-পূত আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দূর করেন সমাজের অজ্ঞানতার অন্ধকার, আলোকিত করেন চারপাশ, মোহমুক্ত করেন মানুষকে, সবার সামনে খুলে দেন আলোকজ্জ্বল এক উদ্বেলিত এবং মহাজীবনের ঠিকানা। নিবৃতচারী প্রাতঃস্মরণীয় এই মহামনীষী হলো ধর্ম সমাজ জনকল্যাণের বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, অনাথের নাথ,বিনয়াচার্য,উপসংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাথের।

জন্ম ১৮ ই নভেম্বর ১৯২৫ খৃষ্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত উত্তর গুজরা ডোমখালি গ্রামে। তার পিতার নাম প্রেমলাল বড়ুয়া আর মাতার নাম মেনকা বালা বড়ুয়া।শৈশবে তার নাম ছিল লোকনাথ বড়ুয়া। হালদা নদীবিধৌত জনপদ প্রান্তরে তার শৈশব কাল কেটেছে নানা টানাপোড়েনে। শৈশবে মাতৃহারা হয়ে খানিকটা থমকে গেলেও পরবর্তীতে বিমাতা স্নেহলতা বড়ুয়া, ঠাকুরমা নবকুমারী বড়ুয়া এবং বাবার অপত্য স্নেহ মমতা তাকে ধীরে ধীরে যথার্থভাবে বেড়ে ওঠার সাহস শক্তি যুগিয়েছিল এবং বালক লোকনাথ পৃথিবীর পথে অপার বিস্ময় নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।

শৈশবের শিক্ষাজীবনঃ
বাল্যকালেই গ্রাম্য পাঠশালায় লোকনাথের শিক্ষাজীবন শুরু। কিছুদিন সেখানে পড়ালেখার পর তিনি বিনাজুরী নবীন এম ই স্কুলে পড়ালেখা করেন। সে সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) চরম সংকটকালে চারিদিকে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করলে বালক লোকনাথের পড়াশুনায় সাময়িক বাধা পড়ে।বাবার অসুস্থতা, সংসারের টানাপোড়েনে অনেকটা হতভম্ব হয়ে পড়েন লোকনাথ। এদিকে হঠাৎ করে ঠাকুরমার মৃত্যুতে আরও বিপর্যয়ে পড়ে যায় পুরো পরিবার। অসুস্থ বাবার বিপর্যস্থ অবস্থায় এ সময় পরিবারের পাশে দাড়ান মাতুল খগেন্দ্র লাল বড়ুয়া। উল্লেখ্য যে মাতুল খগেন্দ্র লাল সুদূর আকিয়াবে ব্যবসায় নিমগ্ন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাকে গার্হস্থ্য জীবনে বেশিদিন আটকে রাখতে পারেনি। তিনি দেশে ফিরে প্রব্রজিত হয়ে সারানন্দ শ্রমন নামে খ্যাত হন।পরবর্তীতে ভিক্ষু সারানন্দ লোকনাথের পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে তাকে পশ্চিম বিনাজুরী সোনাইর মুখ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন এবং পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ সেখান থেকেই সমাপ্ত করেন।

প্রব্রজ্যা ও মাধ্যমিক পাঠঃ

লোকনাথ বড়ুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্তির পর মামা ভিক্ষু সারানন্দের পূত সংস্পর্শে থেকে ধর্মীয় শিক্ষা আচার আচরণের প্রতি অতিমাত্রায় মনোযোগী ও নিবেদিত হয়ে পড়েন। বিহারে অবস্থানকালীন নানা ধর্মীয় কার্যক্রম, ভিক্ষুসংঘের ধর্মদেশনা ধর্মালোচনা, বিনয়সম্মত জীবনযাপন ইত্যাদি মাঙ্গলিক ক্রিয়া কর্মে তার অন্তরে সতত এক ভিন্ন অনুভূতির ক্ষেত্র গড়ে ওঠে।তার চিন্তা চেতনায় কর্মে ধর্মজগতের এক অভূতপূর্ব বাতাবরণ যেন জন্ম নিতে থাকে যা তাকে সংসার জীবনের প্রতি নিরাকৃষ্ট করে তোলে। লোকনাথের চলমান জীবনের ভিন্নতা পর্যবেক্ষণ করে মামা ভিক্ষু সারানন্দ লোকনাথ কে প্রব্রজ্যা প্রদানের কথা গুরুত্বসহকারে চিন্তা করতে লাগলেন।অতঃপর ১৯৪৪ খৃষ্টাব্দে তখনকার মহান আচার্য জোবরা সুগত বিহারের অধ্যক্ষ উপসংঘরাজ গুনালংকার মহাস্থবিরের উপাধ্যায়াত্বে লোকনাথ প্রব্রজ্যা দীক্ষা নিয়ে বুদ্ধ শাসনে প্রবেশ করেন।গুরুদেব তার নাম রাখলেন “জ্ঞানশ্রী” যার অর্থ চমৎকার জ্ঞানের সৌকর্য।প্রব্রজ্যা গ্রহনের পর শ্রমন জ্ঞানশ্রী সাধারণ শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি বহুলাংশে নিবিষ্ট হয়ে পড়েন।ধর্ম বিনয় সম্পর্কিত তার নানা জ্ঞান অন্বেষণের অদম্য ইচ্ছার ফলশ্রুতিতে পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ এ সময় খুবই চমকিত হন।তারা তার কাছে তুলে ধরেন বুদ্ধবাণীর অপার সৌকর্য। প্রব্রজ্যা গ্রহণের পর কিছুকাল গুরুর সান্নিধ্যে অবস্থানের পর গুরুদেবের আদেশে ও মির্জাপুর বাসীর আকুল প্রার্থনায় শ্রামন জ্ঞানশ্রী মির্জাপুর শান্তিধাম বিহারের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে আগমন করেন। সেখানে অবস্থান করে জরাজীর্ণ বিহারটিকে মাত্র ১১ বছরের ব্যবধানে এক মনোরম বিহারে পরিণত করেন। উল্লেখ্য এখান থেকেই প্রথম মুষ্টি চাউলের প্রথা প্রথম প্রবর্তন করেন। মুষ্টি চাউলের প্রচলন ঘটিয়ে জরাজীর্ণ বিহার পরিণত হয় মনোরম বিহারে।
মুষ্টি চাউল প্রথা এমন এক প্রথা যার মাধ্যমে এক দিকে যেমন দাতার প্রকৃত দান চেতনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বিশাল দান চেতনায় পরিনত হয় আরেকদিকে মুষ্টি চাউলের বিন্দু বিন্দু সঞ্চয় দিয়ে বিহার/প্রতিষ্ঠানের নিরন্তর উন্নয়ন সাধন সম্ভব।শ্রমন জ্ঞানশ্রী শ্রামন্য জীবনে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় পারদর্শীতার জন্য মির্জাপুর হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে এখান থেকেই প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হন।

 

উপসম্পদাঃ
১৯৪৯ খৃঃ শ্রামন জ্ঞানশ্রীর জীবনের এক পয়মন্ত সময়। এ সময় গুরু উপসংঘরাজ গুনালংকার মহাস্থবির শ্রামণ জ্ঞানশ্রীর ধর্মানুরাগ,প্রিয়শীল ধর্মীয় জীবনযাপনের নানা দিক অবলোকন করতঃ তাকে উপসম্পদায় অভিষিক্ত করার বিষয় বিবেচনা করেন।ধর্মগুরু গুনালংকার মহাস্থবিরের উপাধ্যায়াত্বে অতঃপর তাকে চাকমা রাজমহিষী কালিন্দী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক রাজানগর শাক্যমুনি বিহার সীমায় তার উপসম্পদা কর্ম সুসম্পন্ন করেন।শুরু হয় ভিক্ষুত্ব জীবন।এ সময় সীমা আচার্য ছিলেন ৬ষ্ঠ সংঘরাজ ধর্মকথিক ধর্মানন্দ মহাস্থবির, আচার্য ভদন্ত জ্ঞানীশ্বর নহাস্থবির, বিনয়াচার্য ভদন্ত বংশদ্বীপ মহাস্থবির, সত্যদর্শন প্রনেতা বিদর্শন গুরু বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির, ভদন্ত ধর্মানন্দ মহাস্থবির (রাংগুনিয়া) ,ভদন্ত আনন্দমিত্র মহাস্থবির, ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবির প্রমুখ।

কর্মবাচা আচার্য ছলেন রাজানগর শাক্যমুনি বিহারের অধ্যক্ষ রাজগুরু ভদন্ত ধর্মরত্ন মহাস্থবির।

 

ধর্মপ্রচারকঃ

বুদ্ধ বলেছেন “চরথ ভিকখবে চারিকং,বহুজন হিতায় বহুজন সুখায “
হে ভিক্ষুগন ধর্মের সুধা নিয়ে দিকে দিকে বিচরণ কর,আত্মহিত ও পরহিতার্থে ধর্মসুধা বিতরণ কর”

এই মূলমন্ত্র ধারণ করে নব উপসম্পদা প্রাপ্ত ভিক্ষু জ্ঞানশ্রী ধর্মপ্রচারের ব্রত নিয়ে ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ৬ বছর সাল পর্যন্ত মির্জাপুর শান্তিধাম বিহারে অবস্থানের পর ১৯৫৫ সালে চলে আসেন রাউজান বিমলানন্দ বিহারে।সেখানে অবস্থানকালীন তিনি প্রতি মঙ্গলবার ধর্মসুধা দান,ধর্মজ্ঞান সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা পালন করে সবার সাধুবাদ অর্জন করেন।ধর্মদানের এই উত্তম পন্থায় তিনি এখানে দায়ক দায়িকাদের নিয়ে গঠন করেন ‘জাতক পরিষদ’ নামে এক ধার্মিক মন্ডলী

পার্বত্য চট্টগ্রাম অধ্যায়:

রাউজান বিমলানন্দ বিহারে কিছুকাল অবস্থানের পর এক অনাথ পিতা ও শিক্ষার আলোর দিশারী হয়ে ভিক্ষু জ্ঞানশ্রী ১৯৫৭ সালে ধর্মপ্রচারের উদ্দ্যেশ্যে পদব্রজে পাড়ি জমান দুর্গম পার্বত্য জেলার মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়িতে।সেখানে অবস্থানকালে তিনি ছাত্রছাত্রীদের ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষা প্রদানের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠা করেন ‘জ্ঞানোদয় পালি টোল’।তিনি পালি টোল প্রতিষ্টার পর ধর্মীয় শিক্ষায় পারদর্শী শিক্ষার্থীদের মাঝে মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ প্রদান করতেন মেধা সীল।মুবাছড়িতে ভান্তের প্রিয় দায়কদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তৎকালীন চেয়ারম্যান বিন্দুকুমার খীসা আর পুরঞ্জয় মহাজন।তারা ভান্তেকে নিরক্ষর, দরিদ্র, অসহায় পার্বত্য সন্তানদের মানুষ করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন।তাদেরই সহযোগিতায় শত প্রতিকুলতার মাঝেও শুধুমাত্র ভিক্ষা কে সম্বল করে শুরু করলেন শিশু শিক্ষা পাঠ এবং অনাথ আশ্রম। ভান্তের স্মৃতিচারণ থেকে জানা তখনকার সময়ে পার্বত্য অঞ্চলের পথঘাট এতই দুর্গম ছিল যে না ছিল ভাল পথঘাট না ছিল যানবাহন।শুধু খাগড়াছড়ি পৌছতেই লেগে যেত সপ্তাহকাল!!ভান্তে সেখানে যেতেন কখনো পায়ে হেটে কখনোবা নদীপথের লঞ্চে করে,নিয়ে নিতেন সাথে করে যতটুকু সম্ভব খাবার।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের ফলে সৃষ্ট বিপুল জলরাশির ভয়াবহতায় মুবাছড়িতে ৩ বছর অবস্থানের পর ভান্তে চলে আসেন খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা বোয়ালখালী চাকমা রাজবিহারে।সেখানে তিনি রাজগুরু পদে অধিষ্ঠিত হন।উল্লেখ্য ভান্তে আসার পর উক্ত বিহারের দায়ক দায়িকাদের একতা বৃদ্ধির জন্য বিহারের নাম দশবল রাজবিহার নাম দেন যার অর্থ দশ বা সামগ্রিক শক্তির সমাহারে এই বিহার।জ্ঞানপিপাসু সদ্ধর্মাদিত্য ভদন্ত জ্ঞানশ্রী সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মোদয় পালি টোল ও পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম। আশ্রম,স্কুল,পালিটোল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে তিনি অবহেলিত পিছিয়ে পড়া আদিবাসী বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় জ্ঞানপ্রভা বৃদ্ধি উত্তরণে ও সার্বিক জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্য আনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম থেকেই ভদন্ত জ্ঞানশ্রী একে একে অনেক মেধাবী সন্তান কে নিজের আদর্শে গড়ে তুলেছেন।এখান থেকে গড়ে উঠেছেন পার্বত্য তিন দিকপাল শিষ্য ভদন্ত বিমলতিষ্য মহাথের(বোধিচারিয়া প্রতিষ্ঠাতা,ভারত),ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরঢাকা বনফুল শিশু সদন ও আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের পরিচালক),ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের(মোনঘর,রাঙামাটি পরিচালক) এবং এখান থেকেই পার্বত্য শিক্ষার মশাল তিনি প্রজ্জ্বলিত করে সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছেন।ভদন্ত জ্ঞানশ্রী এখান থেকেই শিক্ষার মশাল প্রজ্জ্বলিত করে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের হৃদয়ে চিরকালের জন্য আলোরদিশারী হয়ে রয়ে গেলেন।কথিত আছে তৎকালীন সময়ে পার্বত্য চট্টল অনাথ আশ্রমে প্রায় প্রতিনিয়ত ৬০০ জনের অধিক ছাত্র ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষায় নিয়োজিত থাকতেন।বর্তমানে পার্বত্য চট্টল আশ্রমে দায়িত্বে আছেন ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথের। তিনি বর্তমানে সরকারি ক্যপিটেসন গ্র্যান্ট নিয়ে প্রায় ১০০ জন ছাত্র নিয়ে এই আশ্রম এখনো ধরে রেখেছেন।
জ্ঞানশ্রী ও বনভান্তেঃ
বর্তমান সময়ের ভিক্ষুকূল গৌরব পূজনীয় সাধনানন্দ মহাথের’র(বনভান্তে) ভিক্ষু জীবনের প্রথম দিকের উল্লেখযোগ্য সময় জুড়ে রয়েছেন ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের। ১৯৬১ সালে ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের’র উদ্যোগে তার ধর্মগুরু উপসংঘরাজ গুনালংকার ভান্তেসহ জিনবংশ মহাথের,রাজগুরু অগ্রবংশ মহাথের,মায়ানীর অরিন্দম মহাথের,প্রিয়দর্শী,ধর্মদর্শী প্রমুখ সংঘকে দুর্গম দীঘিনালার বোয়ালখালি তে নিয়ে যান।তখনকার সময়ে যোগাযোগ প্রতিকূল পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐ অঞ্চলে পৌঁছাতে পদব্রজে কয়েকদিন সময় লেগেছিল।তাদেরকে সংগীতিকারক করে নিজে কর্মবাচা আচার্য হয়ে গুরুদেব গুনালংকার মহাথেরর উপাধ্যায়ত্বে মায়ানী নদীর উদক সীমায় বনভান্তেকে শুভ উপসম্পদা প্রদান করেন।
মোনঘরপ্রতিষ্ঠাঃ
অতঃপর বোয়ালখালী পার্বত্য চট্টল অনাথ আশ্রম থেকে নিজের হাতে গড়া শিষ্যদের দিয়ে তিনি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পার্বত্য অঞ্চলের বর্তমান বাতিঘর রাঙামাটির মোনঘর অনাথ আশ্রম। ভান্তের স্মৃতিচারণ অনুসারে মোনঘরের মূল জায়গা খানি নিজে ক্রয় করে দিয়ে হাতে গড়া শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম বিমলতিষ্য, প্রজ্ঞানন্দ, শ্রদ্ধালংকার সহ সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকের মোনঘর প্রতিষ্ঠা করেন যা সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার মশাল হয়ে জ্বলজ্বল করে বর্তমান দেদীপ্যমান।ভদন্ত জ্ঞানশ্রী পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘ ১৮ বছর অবস্থান করে সেখান কার আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার বীজ বপন করে দিয়েছেন।তিনি আদিবাসীদের নিকট প্রবাদপ্রতিম মহাপুরুষ, প্রবাদপ্রতিম মহাগুরু,আলোর দিশারী,তিনিই সদ্ধর্মাদিত্য।তিনি বিনা পার্বত্য শিক্ষার ইতিহাস অসম্পূর্ণ, তিনি বিনা আদিবাসী শিক্ষিত সমাজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসম্পূর্ণ।তৎকালীন পার্বত্য আদিবাসী সমাজ তারই শিক্ষা নির্দেশনায় এতটুকু আসতে পেরেছে।
ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের পার্বত্য অঞ্চলে একদিকে সাধারণ শিক্ষার আলো জ্বেলে দিয়েছেন আরেকদিকে বনভান্তেকে উপসম্পদা প্রদান করে আদিবাসী সমাজে পারমার্থিক মার্গের পথ সুগম করে দিয়েছেন।সর্বোপরি পার্বত্য আদিবাসী বৌদ্ধ সমাজ সর্বদিকে এই মহাপুরুষের নিকট চির ঋণী
ত্রিপিটক প্রচার বোর্ড প্রতিষ্ঠাঃকর্মযোগী ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের ১৯৬৪ খৃঃ সাহিত্যরত্ন অষ্টম সংঘরাজ শীলালংকার মহাথেরোর সাথে যৌথ ভাবে গঠন করেন ত্রিপিটক প্রচার বোর্ড যা তার এক অনন্য কীর্তি। অধুনালুপ্ত ত্রিপিটক প্রচার বোর্ড থেকে অষ্টম সংঘরাজ ও ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের’র লিখিত কালজয়ী বৌদ্ধ মনীষীদের জীবনীগ্রন্থ -বিশাখা, জীবক,আনন্দ,বৌদ্ধ নীতিমঞ্জরী আজও বৌদ্ধ সমাজে অতিমাত্রায় পঠিত ও সমাদৃত হয়ে আসছে।কর্মযোগীঃ
ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের পার্বত্য অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ১৮ বছর ধরে আলোর পথ দেখিয়ে আবার সমতলের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর জীবন ধর্মীয় চেতনা উন্মেষে কাজ করতে মনস্থ হন।সে লক্ষ্যে তিনি ১৯৭৫ খৃষ্টাব্দে পার্বত্য অঞ্চলে তার প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, অনাথ আশ্রম সমূহ ইত্যাদির দায়িত্বভার শিষ্য প্রশিষ্যদের বিশেষ করে বিমলতিষ্য ও প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুকে বুঝিয়ে দিয়ে আবার সমতলে ফিরে আসেন এবং রাউজান থানার কদলপুর সুধর্মানন্দ বিহারে অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন।
অতঃপর ১৯৭৭ খৃঃ কদলপুরে গৌরচন্দ্র যতীন্দ্র দুঃস্থ অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। বিহারের উন্নয়ন ও কর্মকাণ্ড বিস্তারের লক্ষ্যে কদলপুরে মুষ্টি চাউল উত্তোলন প্রথা পুনরায় চালু করেন।
তার কর্মউদ্যোগের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৭৬ সালে ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের বিপুল ভোটের ব্যবধানে ভদন্ত শাক্যবোধি মহাথেরকে হারিয়ে  সংঘরাজ ভিক্ষু মহামন্ডলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহামন্ডলের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার পর ঐ সময় মহামন্ডলের কাজকর্ম সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে একটি তহবিল গঠন করে দেন যেখানে তিনি নিজেই ৬ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন।
১৯৭৭ সালে বৌদ্ধ সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মীয় চেতনা সংস্কারের উন্নতি কল্পে ‘সংঘরাজ ভিক্ষু মহামন্ডল ধর্মীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠন করে বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।উক্ত শিক্ষা পরিষদেরও ৬ লক্ষ টাকার একটি তহবিল গঠন করে দেন যেখানে তিনি নিজেই ১ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন।এ সময়ে তিনি নিজস্ব আর্থিক ফান্ডে মহামন্ডল শিক্ষা পরিষদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রকাশনা ত্রৈমাসিক “ধর্মায়তন” প্রতিষ্ঠা করেন।
কদলপুরে দীর্ঘ ১১ বর্ষা অবস্থানকালীন এখানে একে একে গড়ে তুলেছেন অনাথ আশ্রম, ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার, স্কুল ইত্যাদি।কদলপুরে তার প্রতিষ্ঠিত অনাথ আশ্রম ও ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার তার জীবনের এক অনন্য সৃষ্টি। এখান থেকে বহু ছাত্র উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ ও জাতির সেবা করে যাচ্ছে আর বহু ভিক্ষু প্রশিক্ষিতে হয়ে সংঘ সমাজে নন্দিত হয়ে দিকে দিকে বুদ্ধের অমৃতবাণী প্রচারে রত রয়েছেন।তিনি তাদের সকলের শিক্ষক ও গুরু হিসেবে ভিক্ষু গৃহী উভয় সমাজের নিকট সম্মানের রাজমুকুট অর্জন করে চিরকালের জন্য হয়ে খ্যাত হয়ে গেলেন মহাগুরু,মহা আচার্য হিসেবে।সে সময়ে তার নিকট তম সহযোগী ছিলেন ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথের ও ভিক্ষু এইচ সুগতপ্রিয়।যতদিন কদলপুর ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার থাকবে ততদিন এই তিন মহামনীষী অমর হয়ে থাকবেন।

১৯৮৬ সালে ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরো কদলপুর থেকে চলে আসলেন গুরুর জন্মজনপদ জোবরা গ্রামে। জোবরা সুগত বিহারের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব নিয়ে ১৯৮৭ সালে গুরুর নামে প্রতিষ্ঠা করলেন গুনালংকার বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম।উক্ত অনাথ আশ্রমে তিনি নিজ অর্থে প্রায় ১২ গন্ডা জমি ক্রয় করে দেন।উক্ত আশ্রমে বহুসংখ্যক বৌদ্ধ অনাথ ছাত্র লেখাপড়ায় উচ্চশিক্ষিত হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।ভিক্ষুজীবনের মূল্যবান ৩ টি বর্ষা তিনি জোবরা সুগত বিহারে অবস্থান করে ১৯৮৯ সালে মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহারে অধ্যক্ষ হলেন।বিহারের দায়িত্ব নিয়ে তিনি শুরু করে দিলেন বিহার উন্নয়নের।তখনকার সময় তিনি বিস্কুটের ১ টি করে টিন ও নারিকেলের মালা(মুষ্টি চাউল নেওয়ার) পাড়ার ছেলেদের তোলার দায়িত্ব দিতেন।সে মুষ্টি চাউল সংগ্রহ করে তারা ভান্তের কাছে জমা দিতো।কথিত আছে মুষ্টি চাউল প্রথা শুরু করেছিলেন বর্তমান তরুন কর্মবীর ভিক্ষু ভদন্ত বোধিমিত্র ভান্তের পিতা প্রয়াত মনোরঞ্জন বড়ুয়ার কাছ থেকে মুষ্টি সংগ্রহ করে।মুষ্টি চাউলের বিক্রয় লব্ধ অর্থ দিয়ে মির্জাপুর গৌতমাশ্রমে ভিক্ষু নিবাস ও সিংহ শয্যা বুদ্ধমূর্তির কক্ষ নির্মাণ করতে সক্ষম হলেন ঊনারই শিষ্য শাসনানন্দ ভিক্ষুকে দিয়ে।গৌতমাশ্রম বিহারে দায়ক দায়িকাদের মধ্যে চালু করেন প্রাতঃ ও সন্ধ্যা বন্দনা।অতঃপর ঢাকায় অবস্থানরত ভদন্ত শান্তপদ ভান্তের প্রয়ান হলে মির্জাপুর গৌতমাশ্রমে ২ বর্ষা অবস্থান করে চলে যান ঢাকা মেরুল বাড্ডা বৌদ্ধ বিহারে ঢাকায়।

এই কালজয়ী মহাপুরুষ সংঘের নির্দেশে মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহারে ২ বর্ষা অবস্থান করেন।তৎকালীন মহাসভার মহাসচিব ভদন্ত শান্তপদ মহাথের পূর্বে এই বিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন।শান্তপদ ভান্তে ঢাকায় অবস্থানহেতু ঊনার মৃত্যুতে ১৯৯১ সালে ঢাকা মেরুল বাড্ডা বিহারের হাল ধরেন ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের।সংঘের নির্দেশে ডোমখালি থেকে প্রিয় শিষ্য শাসনানন্দ ভিক্ষুকে রেখে গেলেন মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহারের দায়িত্বে।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ বর্ষাবাস তিনি ঢাকা বাড্ডা আন্তর্জাতিক বিহারে অবস্থান করেন।সেখানেও তিনি তার কর্মপ্রচেষ্টা দ্বারা দাতা প্রতি একহাত/১ ফুট করে টাকা নিয়ে উক্ত বিহারের অবকাঠামো বৃদ্ধি করেন যা এখনো লোকে মুখে শুনা যায় তার সদিচ্ছার কথা।
উত্তরবঙ্গে ধর্মাভিযানঃ
নব্বইয়ের দশকে রাজধানী ঢাকার মেরুল বাড্ডা বিহারে অধ্যক্ষ থাকাকালীন থাকাকালীন উত্তরবঙ্গের কোন একজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ভান্তের সাথে পরিচয় হয় এবং তার সাথে আলাপকালে বুঝতে পারেন
যে তারা আদিতে বৌদ্ধ ছিল কিন্তু কালের নিষ্ঠুর ইতিহাসে তারা তাদের নিজস্ব বৌদ্ধ ধর্ম হারিয়ে গিয়েছিল।অতঃপর এই মহামানব উত্তরবঙ্গের বৌদ্ধ ধর্মের অতীত ইতিহাস ইতিহাস,ঐতিহ্য,সংস্কৃতির হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তৎপর হন।তিনি এতদঞ্চলের অবহেলিত হারিয়ে যেতে থাকা বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীকে তাদের শিক্ষায় দীক্ষা ও আর্থ সামাজিক সমস্যা গভীরভাবে অবলোকন পর্যবেক্ষণ করে এ সময় দৃঢ় চিত্তে প্রগাঢ় মনোবল নিয়ে হতশ্রী অসহায় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর পাশে গিয়ে দাড়ালেন।তাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের হিতার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।প্রতিবছর অবহেলিত দরিদ্র জনগণের মাঝে বস্ত্র কম্বল, বিনামূল্যে ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করেন।সেখানে একে একে গড়ে তুলেছেন অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিহার ও অনাথ আশ্রম।সেগুলোর মধ্যে উচাই জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার,নূরপুর জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার, জয়পুর সেখানে একে একে গড়ে তুলেছেন অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিহার ও অনাথ আশ্রম।সেগুলোর মধ্যে উচাই জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার,নূরপুর জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার, জয়পুরহাট অন্যতম। মিঠাপুকুর বেনুবন বিহারের সংলগ্ন অবকাঠামো উন্নয়নে শিশু সদন অনাথালয় প্রতিষ্ঠাতার্থে সাড়ে একত্রিশ শতক জমি প্রায় ৫ লক্ষ টাকা মূল্যে খরিদ করে দিয়েছেন। এছাড়াও রংপুর, বদরগঞ্জ,নবশালবন বিহার,ঠাকুরগাঁও তক্ষশিলা বিহারের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্যও জায়গা খরিদ করে দেন।উত্তরবঙ্গের আদি বৌদ্ধদের ঢাকায় অবস্থানকালে আবিষ্কার করতে পারলেও তিনি যখন চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করেন সে সময়ে উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।

বিশ্বশান্তি প্যাগোডায়ঃ

১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ বর্ষাবাস ঢাকায় অবস্থান শেষে ১৯৯৫ সালে সংঘের নির্দেশে ঢাকা থেকে চলে এলেন চট্টগ্রামে বিশ্বশান্তি প্যাগোডার হাল ধরার জন্য।বিশ্বশান্তি প্যাগোডার ভার নিয়ে সেখানে প্যাগোডা নির্মাণের জন্য ব্রতী হলেন।কিন্তু উন্নয়নে পারিপার্শ্বিক হাজারো সমস্যার কারণে মাত্র ২ বর্ষাবাস যাপন শেষে বিনাজুরী বাসীদের একান্ত আগ্রহে ১৯৯৭ সালে পুনরায় চলে আসতে হলো তার অনেক স্মৃতি ধন্য বিনাজুরী শ্মশান বিহারে। বিনাজুরীঃ
মহান আচার্য জ্ঞানশ্রী মহাথের ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বশান্তি প্যাগোডায় অবস্থানের পর ১৯৯৭ সালে চলে আসেন তার স্মৃতি ধন্য স্থান পশ্চিম বিনাজুরী শ্মশান বিহারে যেখানে দায়ক দায়িকারা তাকে আজীবন অধ্যক্ষের আসনে পূজা করেন।
বিনাজুরী এসেই বিনাজুরী শ্মশান বিহারকে নবরুপে সংস্কার করেন।এখানে ও একে একে প্রতিষ্ঠা করেছেন বিনাজুরী ধর্মকথিক অনাথ আশ্রম,পশ্চিম বিনাজুরী উচ্চ বিদ্যালয়,বিনাজুরী জ্ঞানশ্রী আন্তর্জাতিক ভাবনা কেন্দ্র ও বৃদ্ধাশ্রম।
শীলগুনে বিভূষিত,বিনয়ালঙ্কৃত এই মহান কর্মযোগী মহাপুরুষটি অনাথ ছেলেদের অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকতে যেন সহ্য করতে পারেন না।
তাই তো তার কর্মবহুল জীবনে যেখানেই অবস্থান করেছেন সেখানেই অনাথ ছেলেদের জন্য রেখে দিয়েছেন আশ্রয় আর তাদের জন্য হৃদয়ে রেখে দিয়েছেন অপার স্নেহ ও মৈত্রী।

তাই ১৯৯৪ সালে পশ্চিম বিনাজুরীতে প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মকথিক অনাথ আশ্রম যেখান থেকে হাজার হাজার অনাথ ছেলে ও অন্যান্য ছাত্র শিক্ষা লাভ করে জীবনে উন্নতি লাভ করেছে এবং ভান্তের সব সময় তারা ভান্তের খোঁজ খবর নেন ও কৃতজ্ঞ পূজা নিবেদন করতে আসেন।বিনাজুরী আশ্রমে প্রশিক্ষনার্থী ভিক্ষু শ্রমন দের দৈনন্দিন ব্রতকর্ম,বিনয়শীল জীবন আচরণ, নিয়মিত পিন্ডাচরন চালু করেছেন।এই বিনাজুরী ধর্মকথিক অনাথ আশ্রম ও ভিক্ষু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেন দ্বিতীয় কদলপুর ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার।বর্তমানে এই আশ্রমের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন তারই প্রিয় শিষ্য ভদন্ত শাসনানন্দ মহাথের।তিনিও আদিবাসী ছেলেদের সন্তানের মতই লালন পালন করেন। এখান থেকেই ভান্তের আদর্শে দীক্ষিত ও শিক্ষালাভ করে হাজার হাজার ভিক্ষু শ্রমন হয়ে দিকে দিকে ধর্মপ্রচারে রত আছেন।ভান্তের আর্থিক বদান্যতায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে পশ্চিম বিনাজুরী উচ্চ বিদ্যালয় যেখানে ভান্তে প্রতিষ্ঠা কালীন সময়েও এককালীন ১ লাখ টাকারও অধিক দান দিয়ে স্কুলের প্রতিষ্ঠা তহবিল কে শক্তিশালী করে দিয়েছেন।বর্তমানে পশ্চিম বিনাজুরী উচ্চ বিদ্যালয় বিনাজুরী অঞ্চলে অন্যতম একটি শিক্ষা বিদ্যাপীঠ। এখান থেকেই প্রতি বছর বিনাজুরী আশ্রমের ছাত্র সহ এলাকার হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা শেষে জীবনে উন্নতি করেছে।প্রতিষ্ঠা করেছেন জ্ঞানশ্রী আন্তর্জাতিক ভাবনা কেন্দ্র যা বর্তমান সময়ে কাজ চলমান।২০১১ সালে বিনাজুরী শ্মশান বিহারে অনুষ্ঠিত হয় শ্রদ্ধেয় ভান্তের আন্তর্জাতিক মানের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠান এবং তার জীবনের সমস্ত দান দক্ষিণার সঞ্চয় দিয়ে বুদ্ধ শাসনের কল্যাণের জন্য বিনাজুরী তে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ বুদ্ধ শাসন কল্যাণ ট্রাস্ট।

উত্তরবঙ্গে ধর্মাভিযানঃ

ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের ১৯৯১-১৯৯৪ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ হিসেবে অবস্থান করেন। ঐ সময় হতে উত্তরবঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের অতীত ঐতিহ্য,সভ্যতা,সংস্কৃতির হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তৎপর হন।ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরোর জীবনের অন্যতম মহান কীর্তি সুদূর উত্তরবঙ্গের রংপুর,দিনাজপুর,রাজশাহী,বগুড়া,জয়পুরহাট,ঠাকুরগাঁও,সিরাজগঞ্জ,নওগাঁর প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবলুপ্তপ্রায় বৌদ্ধজনগোষ্ঠীকে অতীত ঐতিহ্যের বৌদ্ধধর্মের সুশীতল ছায়াতলে পুনরায় আনয়নকরত উত্তরবঙ্গের হারানো বৌদ্ধ কৃষ্টি ঐতিহ্যকে আবার বিশ্বসমক্ষে উপস্থাপন করা।ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এক সময় বরেন্দ্রভূমি খ্যাত এ অঞ্চলসমূহে বৌদ্ধ ধর্মের বিজয় পতাকা সগৌরবে উড্ডীন ছিলো। কিন্তু রাষ্ট্রবিপ্লব এবং হতদরিদ্্র অবস্থার প্রেক্ষিতে সেই গর্বিত বৌদ্ধ সমাজের সোনালী দিনগুলো এক সময় অপসৃত হয়ে পড়ে।তাদের উত্তর পুরুষেরাও কালের এ করালগ্রাসের ঘৃন্য থাবা হতে নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি নানা সামাজিক অর্থনৈতিক বৈষয়িক কারনে। কালক্রমে তারা বিভিন্ন আদিবাসীদের সংস্কারের সাথে অসহায়ভাবে যুক্ত হয়ে নিজেদের ধর্ম-কৃষ্টি সভ্যতাকে পর্যন্ত হারিয়ে ফেলতে বসেছিল।ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের এতদঞ্চলের অবহেলিত হারিয়ে যেতে থাকা বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীকে তাদের শিক্ষাদীক্ষা ও আর্থসামাজিক সমস্যা গভীরভাবে অবলোকন পর্যবেক্ষন করে এক সময় দৃঢ়চিত্তে প্রগাঢ় মনোবল নিয়ে হতশ্রী অসহায় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন।তাদের প্রতি সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন ।স্বীয় বার্ধক্য,শারীরকি অসুস্থতাকে গুরুত্ব না দিয়ে তিনি সীমাহীন ধৈর্য্য ধারণ করে উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর পুনর্জাগরণে মঙ্গল কামনায় বৌদ্ধ ধর্মের মূল¯্রােতে তাদের আবার ফিরে আসার অদম্য ইচ্ছাকে বাস্তবে রুপ দিতে নিররসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।তিনি উল্লেখিত জেলাসমূহে পরিভ্রমণ করে অত্র অঞ্চলের আদিবাসীদের যারা একান্তভাবে বৌদ্ধধর্মের সেই সুশীতল ছায়াতলে জীবনযাপন করতে ইচ্ছুক তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের হিতার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন ।তিনি প্রতি বছর নিয়মিত শীতকালে অবহেলিত দরিদ্র জনগনের মাঝে শতি বস্ত্র বিতরন করেন ।
শ্রদ্ধেয় ভান্তে উত্তরবঙ্গে নিম্নলিখিত কার্যক্রম সমূহ সম্পাদন করেছেন:
১/জয়পুরহাট পাঁচবিবি উপজেলার উচাই সূর্যাপুর গ্রামে উপসঙ্ঘরাজ ড: জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা।
২/জয়পুরহাট নুরপুরে উপসঙ্ঘরাজ ড: জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা ও প্রভাতী ধর্মীয় শিক্ষার প্রবর্তন ।
৩/রংপুর মিঠাপুকুর বেনুবন বিহার সংলগ্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অনাথালয় শিশুসদন প্রতিষ্ঠার্থে সাড়ে একত্রিশ শতক জমি পাঁচ লক্ষ টাকায় কিনে দান করেন ।
৪/বদরগঞ্জ নবশালবন বিহারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জমি ক্রয় করে দেন ।
৫/ঠাকুরগাঁও তক্ষশীলা বিহারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জমি ক্রয় করে দেন ।
৬/উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিহার প্রতিষ্ঠান সমূহ রক্ষার্থে সর্বপ্রথম মুষ্ঠি চাউল উত্তোলন প্রথা প্রবর্তন করেন ।
৭/খুলনার বাগেরহাট একটি বিহার ও বরিশালের আখৈলঝরায় একটি বিহার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার কাজ চলমান।

চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ পদ গ্রহণঃ

১৯৯৭ থেকে ২০০২ পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বর্ষা পশ্চিম বিনাজুরী শ্মশান বিহারে অবস্থানের পর চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সুবোধিরত্ন মহাস্থবির প্রয়ান হলে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির প্রবল ইচ্ছার কারণে চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ পদে সমাসীন হলেন। ।শুরু হলো নাগরিক জীবনের চাকচিক্যময় অধ্যায়।চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে এসেই তিনি শুরু করেন বিবিধ উন্নয়নমূলক কাজ আরম্ভ করেন।দু:খমুক্তির অন্যতম উপায় বিদর্শন সাধনা। ।এই বিহারে এসে তিনি মুক্তিকামী উপাসক উপাসিকাদের নিয়ে আরম্ভ করেন প্রতিদিন সন্ধ্যাকালীন বিদর্শন ধ্যান অনুশীলন। বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান দানবীর রাখাল চন্দ্র বড়–য়ার পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু করেন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার ও অনাথ আশ্রমের কার্যক্রম। ভান্তের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে উপাসক উপাসিকারা দ্বিগুন উতসাহে হয়ে উঠেন বিহারমুখী।শ্রদ্ধেয় ভান্তের অত্র বিহারে অবস্থানকালে বিহারের উন্নয়নমুখী বিবিধ কাজ শুরু হয়।২০০৮ সালে আরম্ভ হয় বিহারের পুন;নির্মান কাজ ।
উপসংঘরাজ পদে অভিষেকঃ

২০০৩ সালে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সাংঘিক পূন্যপুরুষ মহামান্য একাদশ সংঘরাজ পন্ডিত শাসনশ্রী মহাস্থবির মহাপ্রয়ান করলে ২৯ শে জানুয়ারী ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের পূর্বরাত্রে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ৫৭ তম অধিবেশনে মহান সংঘের সর্বসম্মতিক্রমে উপসংঘরাজ ধর্মসেন মহাস্থবির মহামান্য দ্বাদশ সংঘরাজ পদে অভিষিক্ত হন।তিনি সংঘরাজ পদে অভিষিক্ত হলে উক্ত অধিবেশনে মহাসভার উপসংঘরাজ পদ শূন্য হয়ে গেলে সে শূন্যপদে শাসনশোভন ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির মহোদয় মাননীয় উপসংঘরাজ পদে অভিষিক্ত হন।

বিদেশ ভ্রমণঃ

শাসন পথিকৃৎ ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরো দেশে বিদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় সভা সমে¥লন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হয়ে যোগদান করে মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশে আলোকিত সমাজ গঠনে মহাকারুনিক বুদ্ধের সদ্ধর্মের অমোঘ বাণী প্রচার করে যাচ্ছেন। সম্মানিত অতিথি হয়ে ভ্রমণ করেছেন বহু দেশ। তার মধ্যে ২০০৭ খৃস্টাব্দে মায়ানমার সরকারের আমন্ত্রনে মায়ানমার সফর করেন ।২০০৭ খৃস্টাব্দে সম্মানসূচক ডক্টর ডিগ্রী গ্রহনের জন্য থাই সরকারের আমন্ত্রনে থাইল্যান্ড সফর করেন। ২০০৮ খৃস্টাব্দে জাপানের রয়েল গ্র্যান্ড হল অব বুড্ডিজম এ অনুষ্ঠিত পঞ্চম বুড্ডিস্ট সামিট – ওয়ার্ল্ড বুড্ডিস্ট সুপ্রিম কনফারেন্সে যোগদান করেন।২০১১ খৃস্টাব্দে শ্রীলংকান সরকারের বিশেষ আমন্ত্রনে শ্রীলঙ্কা সফর করেন। ২০১৯ খৃস্টাব্দে ধুতাঙ্গ সাধক ভদন্ত শীলানন্দ থের ভিয়েতনাম উপাসক উপাসিকাদের আমন্ত্রনে তারই পরম গুরু হিসেবে ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের মহোদয়কে ভিয়েতনাম সফরে নিয়ে যান। এছাড়াও শ্রদ্ধেয় ভান্তে বহুবার বিভিন্ন সংস্থার আমন্ত্রনে ভারত ও থাইল্যান্ড ভ্রমন করেন।

বিভিন্ন সম্মাননা ও অভিধায় অভিষিক্তঃ

পার্বত্য চট্টগ্রামের বুদ্ধশাসন সদ্ধর্মে বনভান্তেকে উপসম্পদা দান তথা সেখানকার সমগ্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দিয়ে তিনি সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলে সদ্ধর্মাদিত্য সম্মানে ভূষিত হয়ে সেখানকার জনমানসের হৃদয় মন্দিরে মহামানব হিসেবে সর্বদা পূজিত হন।
বৌদ্ধ ধর্ম সমাজ সংস্কৃতিকে বলীয়ান বেগবান করার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে নিষ্ঠার মাধ্যমে লালন পালন করে চলেছেন প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের ।তাই ধর্মের প্রভূত শ্রীবৃদ্ধি-উন্নতিতে অবদান রাখার জন্য থাইল্যান্ডের ফরা ধর্মাধিরাজ মহামুনির উপস্থিতিতে তার কৃতিত্বের জন্য থাইল্যান্ড সরকার কর্তৃক ১৯৮১ খৃস্টাব্দে শাসন শোভন জ্ঞানভানক উপাধিতে ভূষিত হন ।
শাসন শোভন জ্ঞানভানক ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের মহোদয় সদ্ধর্ম সমাজে আত্মত্যাগ ও বিনয়ের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা কর্তৃক ২০০১ খৃস্টাব্দে মহামান্য প্রথম সংঘরাজ সারমেধ মহাস্থবিরের দ্বিশত তম জন্মবার্ষিকীতে বুদ্ধশাসনের দুর্লভ উপাধি বিনয়াচার্য অভিধায় অভিষিক্ত হন। বৌদ্ধদর্শন প্রচার প্রসারে নিরবচিছন্ন প্রচেষ্টায় অবদান রাখার জন্য মায়ানমার সরকার কর্তৃক তিনি ২০০৭ খৃস্টাব্দে মহাসদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ উপাধিতে ভূষিত হন।

এছাড়াও ২০০৭ খৃস্টাব্দে থাইল্যান্ডের মহাচুলারংকর্নরাজা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী(অনারারি পি.এইচ.ডি.) প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। সদ্ধর্মের প্রচার ও ভিক্ষুসংঘের একতায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ কর্তৃক বিশুদ্ধানন্দ স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন। বুদ্ধ দর্শন সম্পর্কে অপরিমেয় পান্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরুপ ২০১২ খৃস্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা কর্তৃক ধর্ম ভান্ডাগারিক উপাধিতে সম্মানিত হন। সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২২ সালে একুশে পদকে ভুষিত হন।  ২০২৩ মায়ানমার সরকার কর্তৃক অগ্রমহাপন্ডিত উপাধীতে ভুষিত হন।

মহামান্য ত্রয়োদশ সংঘরাজ পদে অভিষেকঃ
২০২০ সালের ২১ শে মার্চ মহামান্য দ্বাদশ সংঘরাজ ভদন্ত ধর্মসেন মহাস্থবির মহাপ্রয়ান করার পর সংঘরাজের পদ শূন্য হয়ে গেলে ২০ শে মে ২০২০ খৃস্টাব্দে,রোজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার কারকসভার সর্বসম্মতিক্রমে শাসন শোভন ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির মহোদয়কে মহামান্য ত্রয়োদশ সংঘরাজ পদে মনোনীত করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ২৫ শে মার্চ,রোজ বৃহস্পতিবার মহামান্য দ্বাদশ সংঘরাজ ভদন্ত ধর্মসেন মহাস্থবিরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পূর্বরাত্রে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ৭৩তম বার্ষিক সাধারন অধিবেশনে মহান সংঘের সর্বসম্মতিক্রমে   ত্রয়োদশ সংঘরাজ পদে অভিষেক করা হয়।

(তথ্য ও লেখা সংগ্রহ)