বাংলাদেশ সংঘরাজ মহাসভার ত্রয়োদশ সংঘরাজ শাসন শোভন ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের’র ১০০ তম জন্মদিন আজ।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) ৯৯ পেরিয়ে ১০০ এ পা রাখলেন এ বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু। এ উপলক্ষে রাউজান তার সাধনপীঠ বিনাজুরী শ্মশান বিহারে বিস্তারিত কর্মসুচী গ্রহণ করা হয়েছে। এমন এক সময়ে তার জন্মদিন পালন করা হচ্ছে যখন তিনি চট্টগ্রাম নগরীর রয়েল হাসপাতালেচিকিৎসাধীন আছেন।
জন্মঃ
সমাজ সদ্ধর্ম পরিমন্ডলে কাল পরিক্রমায় কিছু কিছু বিরল ব্যক্তিত্ব বিদগ্ধ অনুভাবকের দেখা মেলে যারা নিজেদের জ্ঞান-পূত আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দূর করেন সমাজের অজ্ঞানতার অন্ধকার, আলোকিত করেন চারপাশ, মোহমুক্ত করেন মানুষকে, সবার সামনে খুলে দেন আলোকজ্জ্বল এক উদ্বেলিত এবং মহাজীবনের ঠিকানা। নিবৃতচারী প্রাতঃস্মরণীয় এই মহামনীষী হলো ধর্ম সমাজ জনকল্যাণের বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, অনাথের নাথ,বিনয়াচার্য,উপসংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাথের।
জন্ম ১৮ ই নভেম্বর ১৯২৫ খৃষ্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত উত্তর গুজরা ডোমখালি গ্রামে। তার পিতার নাম প্রেমলাল বড়ুয়া আর মাতার নাম মেনকা বালা বড়ুয়া।শৈশবে তার নাম ছিল লোকনাথ বড়ুয়া। হালদা নদীবিধৌত জনপদ প্রান্তরে তার শৈশব কাল কেটেছে নানা টানাপোড়েনে। শৈশবে মাতৃহারা হয়ে খানিকটা থমকে গেলেও পরবর্তীতে বিমাতা স্নেহলতা বড়ুয়া, ঠাকুরমা নবকুমারী বড়ুয়া এবং বাবার অপত্য স্নেহ মমতা তাকে ধীরে ধীরে যথার্থভাবে বেড়ে ওঠার সাহস শক্তি যুগিয়েছিল এবং বালক লোকনাথ পৃথিবীর পথে অপার বিস্ময় নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।
শৈশবের শিক্ষাজীবনঃ
বাল্যকালেই গ্রাম্য পাঠশালায় লোকনাথের শিক্ষাজীবন শুরু। কিছুদিন সেখানে পড়ালেখার পর তিনি বিনাজুরী নবীন এম ই স্কুলে পড়ালেখা করেন। সে সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) চরম সংকটকালে চারিদিকে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করলে বালক লোকনাথের পড়াশুনায় সাময়িক বাধা পড়ে।বাবার অসুস্থতা, সংসারের টানাপোড়েনে অনেকটা হতভম্ব হয়ে পড়েন লোকনাথ। এদিকে হঠাৎ করে ঠাকুরমার মৃত্যুতে আরও বিপর্যয়ে পড়ে যায় পুরো পরিবার। অসুস্থ বাবার বিপর্যস্থ অবস্থায় এ সময় পরিবারের পাশে দাড়ান মাতুল খগেন্দ্র লাল বড়ুয়া। উল্লেখ্য যে মাতুল খগেন্দ্র লাল সুদূর আকিয়াবে ব্যবসায় নিমগ্ন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাকে গার্হস্থ্য জীবনে বেশিদিন আটকে রাখতে পারেনি। তিনি দেশে ফিরে প্রব্রজিত হয়ে সারানন্দ শ্রমন নামে খ্যাত হন।পরবর্তীতে ভিক্ষু সারানন্দ লোকনাথের পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে তাকে পশ্চিম বিনাজুরী সোনাইর মুখ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন এবং পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ সেখান থেকেই সমাপ্ত করেন।
প্রব্রজ্যা ও মাধ্যমিক পাঠঃ
লোকনাথ বড়ুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্তির পর মামা ভিক্ষু সারানন্দের পূত সংস্পর্শে থেকে ধর্মীয় শিক্ষা আচার আচরণের প্রতি অতিমাত্রায় মনোযোগী ও নিবেদিত হয়ে পড়েন। বিহারে অবস্থানকালীন নানা ধর্মীয় কার্যক্রম, ভিক্ষুসংঘের ধর্মদেশনা ধর্মালোচনা, বিনয়সম্মত জীবনযাপন ইত্যাদি মাঙ্গলিক ক্রিয়া কর্মে তার অন্তরে সতত এক ভিন্ন অনুভূতির ক্ষেত্র গড়ে ওঠে।তার চিন্তা চেতনায় কর্মে ধর্মজগতের এক অভূতপূর্ব বাতাবরণ যেন জন্ম নিতে থাকে যা তাকে সংসার জীবনের প্রতি নিরাকৃষ্ট করে তোলে। লোকনাথের চলমান জীবনের ভিন্নতা পর্যবেক্ষণ করে মামা ভিক্ষু সারানন্দ লোকনাথ কে প্রব্রজ্যা প্রদানের কথা গুরুত্বসহকারে চিন্তা করতে লাগলেন।অতঃপর ১৯৪৪ খৃষ্টাব্দে তখনকার মহান আচার্য জোবরা সুগত বিহারের অধ্যক্ষ উপসংঘরাজ গুনালংকার মহাস্থবিরের উপাধ্যায়াত্বে লোকনাথ প্রব্রজ্যা দীক্ষা নিয়ে বুদ্ধ শাসনে প্রবেশ করেন।গুরুদেব তার নাম রাখলেন “জ্ঞানশ্রী” যার অর্থ চমৎকার জ্ঞানের সৌকর্য।প্রব্রজ্যা গ্রহনের পর শ্রমন জ্ঞানশ্রী সাধারণ শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি বহুলাংশে নিবিষ্ট হয়ে পড়েন।ধর্ম বিনয় সম্পর্কিত তার নানা জ্ঞান অন্বেষণের অদম্য ইচ্ছার ফলশ্রুতিতে পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ এ সময় খুবই চমকিত হন।তারা তার কাছে তুলে ধরেন বুদ্ধবাণীর অপার সৌকর্য। প্রব্রজ্যা গ্রহণের পর কিছুকাল গুরুর সান্নিধ্যে অবস্থানের পর গুরুদেবের আদেশে ও মির্জাপুর বাসীর আকুল প্রার্থনায় শ্রামন জ্ঞানশ্রী মির্জাপুর শান্তিধাম বিহারের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে আগমন করেন। সেখানে অবস্থান করে জরাজীর্ণ বিহারটিকে মাত্র ১১ বছরের ব্যবধানে এক মনোরম বিহারে পরিণত করেন। উল্লেখ্য এখান থেকেই প্রথম মুষ্টি চাউলের প্রথা প্রথম প্রবর্তন করেন। মুষ্টি চাউলের প্রচলন ঘটিয়ে জরাজীর্ণ বিহার পরিণত হয় মনোরম বিহারে।
মুষ্টি চাউল প্রথা এমন এক প্রথা যার মাধ্যমে এক দিকে যেমন দাতার প্রকৃত দান চেতনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বিশাল দান চেতনায় পরিনত হয় আরেকদিকে মুষ্টি চাউলের বিন্দু বিন্দু সঞ্চয় দিয়ে বিহার/প্রতিষ্ঠানের নিরন্তর উন্নয়ন সাধন সম্ভব।শ্রমন জ্ঞানশ্রী শ্রামন্য জীবনে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় পারদর্শীতার জন্য মির্জাপুর হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে এখান থেকেই প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হন।
উপসম্পদাঃ
১৯৪৯ খৃঃ শ্রামন জ্ঞানশ্রীর জীবনের এক পয়মন্ত সময়। এ সময় গুরু উপসংঘরাজ গুনালংকার মহাস্থবির শ্রামণ জ্ঞানশ্রীর ধর্মানুরাগ,প্রিয়শীল ধর্মীয় জীবনযাপনের নানা দিক অবলোকন করতঃ তাকে উপসম্পদায় অভিষিক্ত করার বিষয় বিবেচনা করেন।ধর্মগুরু গুনালংকার মহাস্থবিরের উপাধ্যায়াত্বে অতঃপর তাকে চাকমা রাজমহিষী কালিন্দী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক রাজানগর শাক্যমুনি বিহার সীমায় তার উপসম্পদা কর্ম সুসম্পন্ন করেন।শুরু হয় ভিক্ষুত্ব জীবন।এ সময় সীমা আচার্য ছিলেন ৬ষ্ঠ সংঘরাজ ধর্মকথিক ধর্মানন্দ মহাস্থবির, আচার্য ভদন্ত জ্ঞানীশ্বর নহাস্থবির, বিনয়াচার্য ভদন্ত বংশদ্বীপ মহাস্থবির, সত্যদর্শন প্রনেতা বিদর্শন গুরু বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির, ভদন্ত ধর্মানন্দ মহাস্থবির (রাংগুনিয়া) ,ভদন্ত আনন্দমিত্র মহাস্থবির, ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবির প্রমুখ।
কর্মবাচা আচার্য ছলেন রাজানগর শাক্যমুনি বিহারের অধ্যক্ষ রাজগুরু ভদন্ত ধর্মরত্ন মহাস্থবির।
ধর্মপ্রচারকঃ
এই মূলমন্ত্র ধারণ করে নব উপসম্পদা প্রাপ্ত ভিক্ষু জ্ঞানশ্রী ধর্মপ্রচারের ব্রত নিয়ে ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ৬ বছর সাল পর্যন্ত মির্জাপুর শান্তিধাম বিহারে অবস্থানের পর ১৯৫৫ সালে চলে আসেন রাউজান বিমলানন্দ বিহারে।সেখানে অবস্থানকালীন তিনি প্রতি মঙ্গলবার ধর্মসুধা দান,ধর্মজ্ঞান সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা পালন করে সবার সাধুবাদ অর্জন করেন।ধর্মদানের এই উত্তম পন্থায় তিনি এখানে দায়ক দায়িকাদের নিয়ে গঠন করেন ‘জাতক পরিষদ’ নামে এক ধার্মিক মন্ডলী
পার্বত্য চট্টগ্রাম অধ্যায়:
ত্রিপিটক প্রচার বোর্ড প্রতিষ্ঠাঃকর্মযোগী ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের ১৯৬৪ খৃঃ সাহিত্যরত্ন অষ্টম সংঘরাজ শীলালংকার মহাথেরোর সাথে যৌথ ভাবে গঠন করেন ত্রিপিটক প্রচার বোর্ড যা তার এক অনন্য কীর্তি। অধুনালুপ্ত ত্রিপিটক প্রচার বোর্ড থেকে অষ্টম সংঘরাজ ও ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের’র লিখিত কালজয়ী বৌদ্ধ মনীষীদের জীবনীগ্রন্থ -বিশাখা, জীবক,আনন্দ,বৌদ্ধ নীতিমঞ্জরী আজও বৌদ্ধ সমাজে অতিমাত্রায় পঠিত ও সমাদৃত হয়ে আসছে।কর্মযোগীঃ
ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের পার্বত্য অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ১৮ বছর ধরে আলোর পথ দেখিয়ে আবার সমতলের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর জীবন ধর্মীয় চেতনা উন্মেষে কাজ করতে মনস্থ হন।সে লক্ষ্যে তিনি ১৯৭৫ খৃষ্টাব্দে পার্বত্য অঞ্চলে তার প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, অনাথ আশ্রম সমূহ ইত্যাদির দায়িত্বভার শিষ্য প্রশিষ্যদের বিশেষ করে বিমলতিষ্য ও প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুকে বুঝিয়ে দিয়ে আবার সমতলে ফিরে আসেন এবং রাউজান থানার কদলপুর সুধর্মানন্দ বিহারে অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন।
কদলপুরে দীর্ঘ ১১ বর্ষা অবস্থানকালীন এখানে একে একে গড়ে তুলেছেন অনাথ আশ্রম, ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার, স্কুল ইত্যাদি।কদলপুরে তার প্রতিষ্ঠিত অনাথ আশ্রম ও ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার তার জীবনের এক অনন্য সৃষ্টি। এখান থেকে বহু ছাত্র উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ ও জাতির সেবা করে যাচ্ছে আর বহু ভিক্ষু প্রশিক্ষিতে হয়ে সংঘ সমাজে নন্দিত হয়ে দিকে দিকে বুদ্ধের অমৃতবাণী প্রচারে রত রয়েছেন।তিনি তাদের সকলের শিক্ষক ও গুরু হিসেবে ভিক্ষু গৃহী উভয় সমাজের নিকট সম্মানের রাজমুকুট অর্জন করে চিরকালের জন্য হয়ে খ্যাত হয়ে গেলেন মহাগুরু,মহা আচার্য হিসেবে।সে সময়ে তার নিকট তম সহযোগী ছিলেন ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথের ও ভিক্ষু এইচ সুগতপ্রিয়।যতদিন কদলপুর ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার থাকবে ততদিন এই তিন মহামনীষী অমর হয়ে থাকবেন।
১৯৮৬ সালে ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরো কদলপুর থেকে চলে আসলেন গুরুর জন্মজনপদ জোবরা গ্রামে। জোবরা সুগত বিহারের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব নিয়ে ১৯৮৭ সালে গুরুর নামে প্রতিষ্ঠা করলেন গুনালংকার বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম।উক্ত অনাথ আশ্রমে তিনি নিজ অর্থে প্রায় ১২ গন্ডা জমি ক্রয় করে দেন।উক্ত আশ্রমে বহুসংখ্যক বৌদ্ধ অনাথ ছাত্র লেখাপড়ায় উচ্চশিক্ষিত হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।ভিক্ষুজীবনের মূল্যবান ৩ টি বর্ষা তিনি জোবরা সুগত বিহারে অবস্থান করে ১৯৮৯ সালে মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহারে অধ্যক্ষ হলেন।বিহারের দায়িত্ব নিয়ে তিনি শুরু করে দিলেন বিহার উন্নয়নের।তখনকার সময় তিনি বিস্কুটের ১ টি করে টিন ও নারিকেলের মালা(মুষ্টি চাউল নেওয়ার) পাড়ার ছেলেদের তোলার দায়িত্ব দিতেন।সে মুষ্টি চাউল সংগ্রহ করে তারা ভান্তের কাছে জমা দিতো।কথিত আছে মুষ্টি চাউল প্রথা শুরু করেছিলেন বর্তমান তরুন কর্মবীর ভিক্ষু ভদন্ত বোধিমিত্র ভান্তের পিতা প্রয়াত মনোরঞ্জন বড়ুয়ার কাছ থেকে মুষ্টি সংগ্রহ করে।মুষ্টি চাউলের বিক্রয় লব্ধ অর্থ দিয়ে মির্জাপুর গৌতমাশ্রমে ভিক্ষু নিবাস ও সিংহ শয্যা বুদ্ধমূর্তির কক্ষ নির্মাণ করতে সক্ষম হলেন ঊনারই শিষ্য শাসনানন্দ ভিক্ষুকে দিয়ে।গৌতমাশ্রম বিহারে দায়ক দায়িকাদের মধ্যে চালু করেন প্রাতঃ ও সন্ধ্যা বন্দনা।অতঃপর ঢাকায় অবস্থানরত ভদন্ত শান্তপদ ভান্তের প্রয়ান হলে মির্জাপুর গৌতমাশ্রমে ২ বর্ষা অবস্থান করে চলে যান ঢাকা মেরুল বাড্ডা বৌদ্ধ বিহারে ঢাকায়।
বিশ্বশান্তি প্যাগোডায়ঃ
তাই ১৯৯৪ সালে পশ্চিম বিনাজুরীতে প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মকথিক অনাথ আশ্রম যেখান থেকে হাজার হাজার অনাথ ছেলে ও অন্যান্য ছাত্র শিক্ষা লাভ করে জীবনে উন্নতি লাভ করেছে এবং ভান্তের সব সময় তারা ভান্তের খোঁজ খবর নেন ও কৃতজ্ঞ পূজা নিবেদন করতে আসেন।বিনাজুরী আশ্রমে প্রশিক্ষনার্থী ভিক্ষু শ্রমন দের দৈনন্দিন ব্রতকর্ম,বিনয়শীল জীবন আচরণ, নিয়মিত পিন্ডাচরন চালু করেছেন।এই বিনাজুরী ধর্মকথিক অনাথ আশ্রম ও ভিক্ষু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেন দ্বিতীয় কদলপুর ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার।বর্তমানে এই আশ্রমের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন তারই প্রিয় শিষ্য ভদন্ত শাসনানন্দ মহাথের।তিনিও আদিবাসী ছেলেদের সন্তানের মতই লালন পালন করেন। এখান থেকেই ভান্তের আদর্শে দীক্ষিত ও শিক্ষালাভ করে হাজার হাজার ভিক্ষু শ্রমন হয়ে দিকে দিকে ধর্মপ্রচারে রত আছেন।ভান্তের আর্থিক বদান্যতায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে পশ্চিম বিনাজুরী উচ্চ বিদ্যালয় যেখানে ভান্তে প্রতিষ্ঠা কালীন সময়েও এককালীন ১ লাখ টাকারও অধিক দান দিয়ে স্কুলের প্রতিষ্ঠা তহবিল কে শক্তিশালী করে দিয়েছেন।বর্তমানে পশ্চিম বিনাজুরী উচ্চ বিদ্যালয় বিনাজুরী অঞ্চলে অন্যতম একটি শিক্ষা বিদ্যাপীঠ। এখান থেকেই প্রতি বছর বিনাজুরী আশ্রমের ছাত্র সহ এলাকার হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা শেষে জীবনে উন্নতি করেছে।প্রতিষ্ঠা করেছেন জ্ঞানশ্রী আন্তর্জাতিক ভাবনা কেন্দ্র যা বর্তমান সময়ে কাজ চলমান।২০১১ সালে বিনাজুরী শ্মশান বিহারে অনুষ্ঠিত হয় শ্রদ্ধেয় ভান্তের আন্তর্জাতিক মানের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠান এবং তার জীবনের সমস্ত দান দক্ষিণার সঞ্চয় দিয়ে বুদ্ধ শাসনের কল্যাণের জন্য বিনাজুরী তে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ বুদ্ধ শাসন কল্যাণ ট্রাস্ট।
উত্তরবঙ্গে ধর্মাভিযানঃ
২/জয়পুরহাট নুরপুরে উপসঙ্ঘরাজ ড: জ্ঞানশ্রী বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা ও প্রভাতী ধর্মীয় শিক্ষার প্রবর্তন ।
৩/রংপুর মিঠাপুকুর বেনুবন বিহার সংলগ্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অনাথালয় শিশুসদন প্রতিষ্ঠার্থে সাড়ে একত্রিশ শতক জমি পাঁচ লক্ষ টাকায় কিনে দান করেন ।
৪/বদরগঞ্জ নবশালবন বিহারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জমি ক্রয় করে দেন ।
৫/ঠাকুরগাঁও তক্ষশীলা বিহারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জমি ক্রয় করে দেন ।
৬/উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিহার প্রতিষ্ঠান সমূহ রক্ষার্থে সর্বপ্রথম মুষ্ঠি চাউল উত্তোলন প্রথা প্রবর্তন করেন ।
৭/খুলনার বাগেরহাট একটি বিহার ও বরিশালের আখৈলঝরায় একটি বিহার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার কাজ চলমান।
চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ পদ গ্রহণঃ
২০০৩ সালে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সাংঘিক পূন্যপুরুষ মহামান্য একাদশ সংঘরাজ পন্ডিত শাসনশ্রী মহাস্থবির মহাপ্রয়ান করলে ২৯ শে জানুয়ারী ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের পূর্বরাত্রে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ৫৭ তম অধিবেশনে মহান সংঘের সর্বসম্মতিক্রমে উপসংঘরাজ ধর্মসেন মহাস্থবির মহামান্য দ্বাদশ সংঘরাজ পদে অভিষিক্ত হন।তিনি সংঘরাজ পদে অভিষিক্ত হলে উক্ত অধিবেশনে মহাসভার উপসংঘরাজ পদ শূন্য হয়ে গেলে সে শূন্যপদে শাসনশোভন ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির মহোদয় মাননীয় উপসংঘরাজ পদে অভিষিক্ত হন।
বিদেশ ভ্রমণঃ
শাসন পথিকৃৎ ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরো দেশে বিদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় সভা সমে¥লন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হয়ে যোগদান করে মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশে আলোকিত সমাজ গঠনে মহাকারুনিক বুদ্ধের সদ্ধর্মের অমোঘ বাণী প্রচার করে যাচ্ছেন। সম্মানিত অতিথি হয়ে ভ্রমণ করেছেন বহু দেশ। তার মধ্যে ২০০৭ খৃস্টাব্দে মায়ানমার সরকারের আমন্ত্রনে মায়ানমার সফর করেন ।২০০৭ খৃস্টাব্দে সম্মানসূচক ডক্টর ডিগ্রী গ্রহনের জন্য থাই সরকারের আমন্ত্রনে থাইল্যান্ড সফর করেন। ২০০৮ খৃস্টাব্দে জাপানের রয়েল গ্র্যান্ড হল অব বুড্ডিজম এ অনুষ্ঠিত পঞ্চম বুড্ডিস্ট সামিট – ওয়ার্ল্ড বুড্ডিস্ট সুপ্রিম কনফারেন্সে যোগদান করেন।২০১১ খৃস্টাব্দে শ্রীলংকান সরকারের বিশেষ আমন্ত্রনে শ্রীলঙ্কা সফর করেন। ২০১৯ খৃস্টাব্দে ধুতাঙ্গ সাধক ভদন্ত শীলানন্দ থের ভিয়েতনাম উপাসক উপাসিকাদের আমন্ত্রনে তারই পরম গুরু হিসেবে ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথের মহোদয়কে ভিয়েতনাম সফরে নিয়ে যান। এছাড়াও শ্রদ্ধেয় ভান্তে বহুবার বিভিন্ন সংস্থার আমন্ত্রনে ভারত ও থাইল্যান্ড ভ্রমন করেন।
বিভিন্ন সম্মাননা ও অভিধায় অভিষিক্তঃ
এছাড়াও ২০০৭ খৃস্টাব্দে থাইল্যান্ডের মহাচুলারংকর্নরাজা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী(অনারারি পি.এইচ.ডি.) প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। সদ্ধর্মের প্রচার ও ভিক্ষুসংঘের একতায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ কর্তৃক বিশুদ্ধানন্দ স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন। বুদ্ধ দর্শন সম্পর্কে অপরিমেয় পান্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরুপ ২০১২ খৃস্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা কর্তৃক ধর্ম ভান্ডাগারিক উপাধিতে সম্মানিত হন। সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২২ সালে একুশে পদকে ভুষিত হন। ২০২৩ মায়ানমার সরকার কর্তৃক অগ্রমহাপন্ডিত উপাধীতে ভুষিত হন।
মহামান্য ত্রয়োদশ সংঘরাজ পদে অভিষেকঃ
২০২০ সালের ২১ শে মার্চ মহামান্য দ্বাদশ সংঘরাজ ভদন্ত ধর্মসেন মহাস্থবির মহাপ্রয়ান করার পর সংঘরাজের পদ শূন্য হয়ে গেলে ২০ শে মে ২০২০ খৃস্টাব্দে,রোজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার কারকসভার সর্বসম্মতিক্রমে শাসন শোভন ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির মহোদয়কে মহামান্য ত্রয়োদশ সংঘরাজ পদে মনোনীত করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ২৫ শে মার্চ,রোজ বৃহস্পতিবার মহামান্য দ্বাদশ সংঘরাজ ভদন্ত ধর্মসেন মহাস্থবিরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পূর্বরাত্রে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ৭৩তম বার্ষিক সাধারন অধিবেশনে মহান সংঘের সর্বসম্মতিক্রমে ত্রয়োদশ সংঘরাজ পদে অভিষেক করা হয়।
(তথ্য ও লেখা সংগ্রহ)