দীর্ঘ প্রায় শত বছর সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালে পাক ভারত স্বাধীনতা লাভ করে সৃষ্টি হয় দুটি পৃথক রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। ভারতের পশ্চিম মুসলিম অধ্যুষিত অংশ পশ্চিম পাকিস্তান এবং এর প্রায় দেড় হাজার মাইল পূর্বে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট অঞ্চল পূর্ববঙ্গকে নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান এ দু’ প্রদেশকে নিয়ে গড়ে তোলা হয় পাকিস্তান নামক দেশ। দেশ বিভাগের পর থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে অর্থাৎ ১৯৭১ সালে পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান বরাবরই পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক শাসিত হয়ে আসছিল। শাসনের নামে তারা পূর্ব-পাকিস্তানীদের করেছে শোষণ নিপীড়ন এমনকি মুখের মাতৃভাষাকেও তারা স্তদ্ধ করে দিতে চেয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের জাতি ধর্ম নিবিশেষে ছাত্র জনতার প্রতিবাদের মুখে তাদের সেই হীন চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠি বাঙালিদের উপর সকল ক্ষেত্রে এমনভাবে নিপীড়ন শুরু করলো যে বাঙালিরা অনন্যেপায় হয়ে স্বাধিকার আন্দোলন করতে বাধ্য হলো। স্বাধিকার আন্দোলন অবশেষে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ লাভ করলো। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বীরদীপ্ত আহবান ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- এ অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত জাতি ধর্ম নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ বণিতা ঐক্যবদ্ধ হলো ১৯৭১ সালে ২৫মার্চ নরঘাতক পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে নিরীহ বাঙালি জাতির উপর ঝাপিয়ে পড়লো। আর পরদিন ২৬ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলো। শত্রæকে প্রতিহত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর পক্ষ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা কর হলো। শত্রæকে প্রতিহত করার জন্য বাঙালি ছাত্র জনতা সকল স্তরের মানুষ অস্ত্র হাত তুলে নিল। শুরু হলো স্বাধীনতা সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে বাঙালি বৌদ্ধরাও নিজেদের সম্পৃক্ত করে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। লেখনী ও শব্দ সৈনিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেন বিপ্রদাস বডুয়া, সুব্রত বডুয়া প্রমুখ।
বাঙালি বৌদ্ধরা মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাংশে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলায় বসবাসরত একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী অবস্থানগত ও সংখ্যাগত কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বিচরণ ক্ষেত্র সীমিত পরিসরে সীমাবদ্ধ হলেও আনুপাতিক হারে তাদের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। নেতৃত্বের অভাব থাকলেও তারা ব্রিটিশ শাসনামল থেকে প্রগতিশীল আন্দোলনেকে সমর্থন করেছে এবং সাধ্যমত ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় অনেক বাঙালি বৌদ্ধ যুবক অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেছে অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন, লুণ্ঠিত হয়েছে, বৌদ্ধদের ধন সম্পদ, অগ্নিদগ্ধ হয়েছে হাজার হাজার ঘর বাড়ি. নিগৃহীত লাঞ্চিত ও ধর্ষিত হয়েছে শত শত বৌদ্ধ তরুণী। এসব অত্যাচার নিপীড়ন থেকে গৈরিক বসনধারী বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও রেহাই পায়নি। অনেক বিহার লুুন্ঠিত হয়েছে, অপহৃত হয়েছে বহু মূল্যবান বুদ্ধমূর্তি। এসময়ে অনেক বৌদ্ধ জনসাধারণ আত্মরক্ষা করার জন্য আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হয়েছে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বার্মা (মিয়ানমার) ও ভারতে।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের বাঙালি বৌদ্ধদের গৌরবময় আত্মত্যাগের ইতিহাস এখনো রচিত হয়নি। ১৯৯৮ সাল বাংলা একাডেমি থেকে ড. প্রণব কুমার বডুয়া (মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বৌদ্ধ সম্প্রদায়), জ্যোতিঃপাল মহাথের (বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে) এবং বিশুদ্ধানন্দ মহাথের (রক্তঝরা দিনগুলি) ব্যতীত মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বৌদ্ধ স¤প্রদায় অংশগ্রহণ ও অবদান সম্পর্কে আর কোন গ্রন্থ রচিত হয়নি। এছাড়া কয়েকটি গ্রন্থ ও সাময়িক পত্র এবং অন্যান্য জনের দু’একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ছাড়া তেমন উলেখযোগ্য কোন তথ্যপূর্ণ ইতিহাস প্রকাশিত হয়নি। এ ব্যাপারে আরো গভীর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বৌদ্ধদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস প্রকাশিত হলে বৌদ্ধ স¤প্রদায় এবং তাদের উত্তর প্রজন্ম নিঃসন্দেহে আত্মশ্লাঘা বোধ করবে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ কিংবা পাকসেনা ও রাজাকার আলবদর কর্তৃক নির্যাতিত বৌদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা
দীপক বডুয়া পিতা – মৃত বিজয়শ্রী বডুয়া, উখিয়া, কক্সবাজার (২৭ মার্চ প্রতিরোধ যুদ্ধে চট্টগ্রাম ডি সি হিলের পাদদেশে চেরাগী পাহাড়ের কাছে শহীদ হন। তিনি প্রথম একাত্তরের বৌদ্ধ শহীদ)।
জিনানন্দ ভিক্ষু গ্রাম – আধাঁরমানিক, রাউজান, চট্টগ্রাম। (তিনি পটিয়া থানার পাঁচরিয়া গন্ধকুটি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন। স্বাধীনতার দুইদিন আগে রাজাকার কর্তৃক নিহত হন)।
সুধীর বডুয়া পিতা – মৃত নীরেন্দ্র লাল বডুয়া গ্রাম – আবুরখীল রাউজান, চট্টগ্রাম (ইপিআর বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং ময়মনসিংহ ৯ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে শহীদ হন)।
পংকজ বডুয়া পিতা – সুরেন্দ্র লাল বডুয়া, গ্রাম হিংগলা, রাউজান, চট্টগ্রাম, (চট্টগ্রাম ১০ ডিসেম্বর থানার মোহাম্মদ আলীর হাটে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন)।
বিকাশ বডুয়া পিতা – মৃত দ্রোন কুমার বডুয়া, গ্রাম-খৈয়াখালী, রাউজান, চট্টগ্রাম। (সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন)।
শুক্লধর বডুয়া গ্রাম – দমদমা, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
মৃণাল কান্তি বডুয়া গ্রাম – জোরালগঞ্জ, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
দুলাল কান্তি বডুয়া গ্রাম – হিংগলা, রাউজান, চট্টগ্রাম।
ঝন্টু বডুয়া পিতা – অর্জুন বডুয়া গ্রাম আধাঁরমানিক, রাউজান, চট্টগ্রাম।
আনন্দ প্রসাদ বডুয়া গ্রাম – আবুরখীল, রাউজান, চট্টগ্রাম।
বাগীশ্বর বডুয়া (প্রধান শিক্ষক) গ্রাম – আবুরখীল, রাউজান, চট্টগ্রাম।
আনন্দ বডুয়া গ্রাম – পারুয়া, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
মৃণাল কান্তি বডুয়া পিতা – সতীশচন্দ্র বডুয়া, সোনাপাহাড়, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
শশাঙ্ক মোহন বডুয়া গ্রাম – মেরেংলোয়া, রামু, কক্সবাজার। (৯ মে হানাদার বাহিনী আওয়ামীলীগের কর্মী হওয়ার কারণে সুপারি গাছের সাথে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে)।
রমেশ বডুয়া (শিক্ষক) গ্রাম – গহিরা, রাউজান, চট্টগ্রাম।
উমেশ চন্দ্র বডুয়া গ্রাম – গহিরা, রাউজান, চট্টগ্রাম।
বীরবাহু বডুয়া(প্রধান শিক্ষক) গ্রাম – করলডাঙ্গা, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
সুমতি রঞ্জন বডুয়া (শিক্ষক) গ্রাম – শাকপুরা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম (১০ ডিসেম্বর পাকসেনাদের গুলিতে নিহত হন)।
ধূর্জ্জটি প্রসাদ বডুয়া গ্রাম – শাকপুরা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম (জেএসআই চট্টগ্রাম বন্দর, ২০ এপ্রিল পাকসেনা কর্তৃক শাকপুরাস্থ তপোবন বিহারে শহীদ হন)।
রমেশ চন্দ্র বডুয়া গ্রাম – শাকপুরা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম (২০ এপ্রিল পাক সেনাদের গুলিতে নিহত হন)।
সুনীল বডুয়া গ্রাম – বৈদ্যপাড়া বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।
বিভূতি বডুয়া গ্রাম – বেতাগী, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
কামিনী বডুয়া গ্রাম – রামু মেরেংলোয়া, রামু কক্সবাজার।
মনোরঞ্জন সিংহ পিতা – বিপিন সিংহ, গ্রাম-আলীশ্বর, লাকসাম, কুমিলা। (২১ নভেম্বর পাকবাহিনীর কনভয় আক্রমন করতে গিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন)।
মিলন বডুয়া গ্রাম – মোগলটুলি বডুয়া পাড়া, মোগলটুলি, চট্টগ্রাম।
মনীন্দ্র লাল বডুয়া গ্রাম – হলদিয়া পালং, উখিয়া, কক্সবাজার।
শশী কুমার বডুয়া পিতা – মৃত সীননাথ বডুয়া, কক্সবাজার, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।
ক্ষীরোধ মোহন বডুয়া গ্রাম – মানিকপুর, চকরিয়া, কক্সবাজার।
সুনীল বডুয়া গ্রাম – সরোয়াতলী, চট্টগ্রাম।
অনিল বডুয়া গ্রাম – ডাবুয়া, চট্টগ্রাম।
সুশীল বডুয়া গ্রাম – বৈদ্যপাড়া, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।
বিজয় রতন বডুয়া গ্রাম – দমদমা, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
মনোহরি বডুয়া গ্রাম – মায়ানী, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
রাসবিহারী বডুয়া গ্রাম – মায়ানী, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
যোগেশ চন্দ্র বডুয়া গ্রাম – মায়ানী, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
সুধাংশু বডুয়া গ্রাম – মায়ানী, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
নাইদবাসী বডুয়া গ্রাম – মায়ানী, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
বেনীমাধব বডুয়া গ্রাম – জোবরা, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
দেবাশোক বডুয়া গ্রাম – মোগলটুলী, চট্টগ্রাম।
মিলন বডুয়া গ্রাম – পাহাড়তলী মহামুনি, রাউজান, চট্টগ্রাম।
নীরদ বরণ বডুয়া গ্রাম – পাহাড়তলী মহামুনি, রাউজান, চট্টগ্রাম।
রূপায়ন বডুয়া গ্রাম – নোয়াপাড়া, রাউজান, চট্টগ্রাম।
বাদল বডুয়া গ্রাম – পাহাড়তলী, রাউজান, চট্টগ্রাম।
ভট্ট বডুয়া পিতা – কালীধন বডুয়া, উখিয়া, কক্সবাজার।
দীপক বডুয়া গ্রাম – আব্দুল্লাহপুর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
জ্ঞানেন্দ্র বডুয়া (সদরঘাট) গ্রাম – রাউজান, চট্টগ্রাম।
সুধাংশু বডুয়া গ্রাম – হাইদচকিয়া, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
কামিনী বডুয়া গ্রাম – রামু, কক্সবাজার।
জীবন বডুয়া গ্রাম – কৌশল্যার বাগ, কোমলগঞ্জ, নোয়াখালী।
টুনু বডুয়া গ্রাম – কৌশল্যার বাগ, কোমলগঞ্জ, নোয়াখালী।
বীরেন্দ্র লাল বডুয়া গ্রাম – কৌশল্যার বাগ, কোমলগঞ্জ, নোয়াখালী।
চারুবালা বডুয়া গ্রাম – আবুরখীল, রাউজান, চট্টগ্রাম।
সারদা বডুয়া গ্রাম – গহিরা, রাউজান, চট্টগ্রাম।
ভবেশ চন্দ্র বডুয়া পিতা – মৃত বিপিন চন্দ্র বডুয়া, গ্রাম-সাদেকনগর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
বুদ্ধ কিঙ্কর বডুয়া গ্রাম – দমদমা, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
সুকোমল বডুয়া (শিক্ষক) রাঙ্গামাটি সদর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
রূপায়ন বডুয়া গ্রাম – গুজরা নোয়াপাড়া, রাউজান, চট্টগ্রাম।
সুধীর রঞ্জন বডুয়া কর্ণফুলী পেপার মিল, চন্দ্রঘোনা। (২৯ এপ্রিল শহীদ হন)
সুপতি রঞ্জন বডুয়া গ্রাম-রাউজান, চট্টগ্রাম। চীফ ফাইনেন্সিয়াল এডভাইজার রেলওয়ে বোর্ড, ১৬ এপ্রিল গ্রেফতার হন পাক নৌবাহিনী কর্তৃক এবং ১৭ এপ্রিল তাঁকে সার্কিট হাউজে হত্যা করা হয়।
সঞ্চয়ন বড়য়া গ্রাম – রাউজান, উপজেলা- রাউজান, চট্টগ্রাম।
প্রভাস কুসুম বডুয়া পিতা- অসিতী রঞ্জন বডুয়া, গ্রাম – ইছামতি, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বিশ্বাবদ্যালয়ের প্রকৌশলী। (২১ এপ্রিল পাকবাহিনী তাঁর সার্সন রোডস্থ বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে)।
চিত্তরঞ্জন বডুয়া গ্রাম – জোয়ারা, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম। (টিএÐটি, ২৯ এপ্রিল শহীদ হন)।
তড়িৎ কান্তি বডুয়া গ্রাম – রাউজান, চট্টগ্রাম। (টিএÐ টি, ২৯ এপ্রিল শহীদ হন)।
হীরেন্দ্র লাল বডুয়া চন্দ্রঘোনা পেপার মিলে কর্মরত ছিলেন। (২৯ এপ্রিল শহীদ হন)।
পরাগ বডুয়া গ্রাম – সাতবাড়িয়া, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম। (২৯ এপ্রিল শহীদ হন)।
ধর্মদর্শী বডুয়া টি এন্ড টিতে চাকুরীত ছিলেন। (২৯ এপ্রিল শহীদ হন)।
সুবিমল বডুয়া টি এÐ টিতে চাকুরীরত ছিলেন। (২৯ এপ্রিল শহীদ হন)।
সুনীল মুৎসুদ্দি আওয়ামীলীগের রাঙ্গামাটি থানা কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।
চিত্ত রঞ্জন বডুয়া গ্রাম – রাউজান, উপজেলা- রাউজান, চট্টগ্রাম।
ভবেশ বডুয়া গ্রাম – জানারখীল সাদেক নগর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
নিপুন কান্তি বডুয়া ইলিয়াস বিল্ডিং, চকবাজার, চট্টগ্রাম। (৩ মে তুলে নিয়ে পাকসেনারা হত্যা করে)
সত্যরঞ্জন বডুয়া গ্রাম – রাউজান, উপজেলা- রাউজান, চট্টগ্রাম।
বিধুভূষণ বডুয়া গ্রাম – মাদার্শা, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
রমেশ চন্দ্র বডুয়া গ্রাম – মাদার্শা, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
সুভাষ বডুয়া গ্রাম – মাদার্শা, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
বঙ্কিম বডুয়া গ্রাম – মাদার্শা, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
ননীগোপাল বডুয়া গ্রাম – লাখেরা, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
নীলকমল বডুয়া গ্রাম – কধুরখীল, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।
মিনা বডুয়া গ্রাম – দমদমা, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
ভূপেন্দ্র লাল বডুয়া গ্রাম – চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম।
সুরেন্দ্র লাল বডুয়া গ্রাম – চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম।
তপন কুমার বডুয়া গ্রাম – চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম।
মনীন্দ্র লাল বডুয়া গ্রাম – চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম।
কামিনী বডুয়া গ্রাম – গহিরা, হাটহজার, চট্টগ্রাম।
সুকোমল বডুয়া গ্রাম – দমদমা, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
বীরেন্দ্র লাল বডুয়া
মনোরঞ্জন সিংহ গ্রাম – বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী।
গ্রাম – দত্তপুর, কুমিল্লা।
বিমল বডুয়া পিতা – মৃত মনমোহন কড়–য়া, গ্রাম – নানুপুর, ফটিকছড়ি।
সমীরণ বডুয়া গ্রাম – পান্থশালা মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম।
হিমাংশু বডুয়া গ্রাম – বরমা, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।
সঞ্চয় ভূষণ বডুয়া বন্দরে চাকুরিরত ছিলেন।
হীরেন্দ্র লাল বডুয়া বন্দরে চাকুরিরত ছিলেন।
এস. আর. বডুয়া বন্দরে চাকুরিরত ছিলেন।
ভি. পি. বডুয়া বন্দরে চাকুরিরত ছিলেন।
বি. এস. বডুয়া বন্দরে চাকুরিরত ছিলেন।
কৃষ্ণ প্রসাদ বডুয়া রামু, কক্সবাজার।
সাধন বডুয়া গ্রাম – ঢেমশা, সাতকানিয়া।
মিলন বডুয়া বড় হাতিয়া, সাতকানিয়া।
রনজিত বডুয়া মিয়াপুর, নোয়াখালী।
সুশান্ত বডুয়া ইছামতি, রাঙ্গুনিয়া।
কাজল বডুয়া ইছামতি, রাঙ্গুনিয়া।
অনুজ কুমার বডুয়া হাইদচকিয়া, ফটিকছড়ি।
ধীমান বডুয়া রামু, কক্সবাজার।
অরবিন্দু বডুয়া রামু, কক্সবাজার।
নিপুল কান্তি বডুয়া গ্রাম – ঘাটচেক, রাঙ্গুনিয়া।
মহান মুক্তিযুদ্ধে মহাসংঘনায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাথের এবং দশম সংঘরাজ পÐিত জ্যোতিঃপাল মহাথের অনন্য অসাধারণ অবদান রাখেন। বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামে বাঙালি বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ প্রধানত দুই ভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। প্রথমত: দেশের অভ্যন্তরে বৌদ্ধদের জান মাল রক্ষায় প্রয়াত মহাসংঘনায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরর নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ মিশনারী কাজ, দ্বিতীয়ত: মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠন ও সমর্থন লাভে সংঘরাজ পÐিত জ্যোতিঃপাল মহাথের বহির্বিশ্বের বৌদ্ধদেশসমূহ পরিভ্রমণ। উল্লেখ্য যে এ দুইজন মহান সাংঘিক ব্যক্তিত্ব কৃতকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ পÐিত জ্যোতিঃপাল মহাথের মহান একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক এবং সংঘনায়ক বিশদ্ধানন্দ মহাথের, ভাষাকন্যা প্রতিভা মুৎসুদ্দি, কবিয়াল ফণী ভূষণ বডুয়া এবং এবং কথাসাহিত্যিক বিপ্রদাশ বডুয়া মহান একুশে পদক লাভ করেছেন।
চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর আদিবাসী বীরাঙ্গনা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বৌদ্ধদের অবদান ছিল অপরিসীম। মানব ইতিহাসে সংঘটিত অজ¯্র গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে স্বল্পতম সময়ে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ নিহত ও ধর্ষিত হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিয্ুেদ্ধ পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক। এদেশের বাঙালি জনগোষ্ঠী ছাড়াও হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে বাঙালি বডুয়া বৌদ্ধ, আদিবাসী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বহু নর-নারী। বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ স্বতস্ফূত ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। বাঙালি বডুয়া বৌদ্ধ, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অনেক বৌদ্ধ নর-নারীরা মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অনেক নারী বীরঙ্গনা রয়েছে। তাঁরা নিরবে নিভৃতে তাদের গøানি মাথায় নিয়ে দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষে নিবেদিত ছিলেন।
ইতিহাসে দেখা যায়, বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেই পাকসেনা এবং এদেশীয় দোসরদের দ্বারা আহত ও নিহত হয়েছেন; আবার অনেকে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও ধর্ষিত হয়েছেন। সেই ভয়ানক দিনের কথা মনে করলে এখনো অনেকে শিহরিত হয়ে যান। বাঙালি বডুয়া বৌদ্ধ অনেকে নিহত ও ধর্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আদিবাসী বৌদ্ধ নারীরা নির্যাতিত, নিপিড়িত ও ধর্ষিত হয়েছিল অধিক। অনেক নারী আত্মসম্মানবোধ আর সামাজিক লোক লজ্জার ভয়ে নির্যাতিত, নিপীড়িত কিংবা ধর্ষিত হয়েও প্রকাশ করেননি। এমন বৌদ্ধ নারীর সংখ্যাও নিহাত কম নয়। আদিবাসী বীরাঙ্গনা বৌদ্ধ নারীদের নিয়ে কাজ করেছেন সুরমা জাহিদ। তিনি ‘এই সংগ্রামে আমিও আদিবাসী বীরাঙ্গনা’শিরোনামে অন্বেষা প্রকাশন থেকে ২০১৪ সালে তাঁর গবেষণা কর্ম প্রকাশ করেছেন। তাঁর এ গবেষণা গ্রন্থে আদিবাসী বীরাঙ্গনা নারীদের কথা, অভিমত, নির্যাতনের চালচিত্র পর্যালোচনা করেছেন। আদিবাসী বীরাঙ্গনাদের সেই পাশবিক নির্যাতনের কথা এখনো মানুষকে পীড়িত করে। নি¤েœ কয়েকজন আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বৌদ্ধ বীরাঙ্গনার নাম ও পরিচয় তুলে ধরা হলো।
কক্সবাজারের আদিবাসী বৌদ্ধ বীরঙ্গনা থোঁঞো তনচংঙ্গ্যা, চেনচেন্নু রাখাইন, এবং স্বর্ণ কুমারী ত্রিপুরা। পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির জক্কুনী ত্রিপুরা, হেমাঙ্গিনী ত্রিপুরা, বিজলী সাঁওতাল, রাজবেলা সাওতাল। পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান এর হামে চিং মার্মা, কৃষ্ণপুটি তনচংঙ্গ্যা প্রমুখ। পার্বত্য চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি জেলায় ধর্ষিত আদিবাসী বীরাঙ্গনারা হলেন- আভা মার্মা, লামাচ মার্মা, চেন্দাউ মার্মা প্রমুখ। দীর্ঘ সময় পরে হলেও আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৌদ্ধ বীরাঙ্গনাদের মূল্যায়ন ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা প্রয়োজন।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠির স্বাধীনতা স্বজাত্যবোধের চিরায়ত ধর্মীয় ধারায় কালে কালে প্রগতিশীল আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান ছিল অপরিসীম। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বৌদ্ধদের অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনতা লাভের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। বৌদ্ধরা এদেশের ভূমিজ সন্তান। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের অংশগ্রহণ, বহির্বিশ্বের বৌদ্ধ রাষ্ট্রসমূহ হতে সমর্থন আদায় ও অনন্য অবদান স্মরণীয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বৌদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। সরকার বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বৌদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা, স্বীকৃতি প্রদান, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সহায়তা প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার এত বছর পরও বৌদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের úূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি।
বাঙালি বডুয়া বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধাদের সামগ্রিক মূল্যায়ন, কর্মের সঈকৃতি, সম্মাননার জন্য জাতীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। এখনো বৌদ্ধ মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন ভাবে হতাশা ও অসহায় অবস্থায় রয়েছে। এ গবেষণাকর্মে চট্টগ্রামের বাঙালি বডুয়া বৌদ্ধ মুক্তিযোদ্ধদের মধ্যে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, সহায়তা দান, নৈতিক সমর্থন ও কূটনীতিক সহযোগিতা দিয়েছে তাদের অবদান ও মুক্তিযোদ্ধদের একটি সংক্ষিপ্ত নামের তালিকা প্রণয়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সাথে শহীদ বৌদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বিবরণও প্রদান করা হয়েছে। তবে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে বৌদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণ ও অবদান বিষয়ে ক্রোশপত্র প্রকাশ করা প্রয়োজন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ভূমিকা পালন করা এবং সমাজকর্মে অবদান রাখার জন্যে রাষ্ট্রীয় মহান স্বাধীনতা পদক ও মহান একুশে পদক লাভ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর পরেও বাঙালি বডুয়া বৌদ্ধ সম্প্রদায় মনে করেন তাদের এ অনন্য অসাধারণ অবদানের যোগ্য মূল্যায়ন হওয়া উচিত। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ এ পর্যন্ত বৌদ্ধদের মধ্যে কেউ কেউ সম্মান লাভ করলেও আরো অধিকভাবে দেশ মাতৃকার জন্য উৎসর্গীত, স্বদেশপ্রেমী মানুষের মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন।