০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছড়া সম্রাট সুকুমার বড়ুয়ার জন্মদিবস আজ

  • ডেস্ক রিপোর্ট :
  • আপডেট সময় ০৫:৫০:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৫১৯ বার পড়া হয়েছে

‘এমন যদি হতো

ইচ্ছে হলে আমি হতাম

প্রজাপতির মতো।’

এমন সব মজার মজার ছড়ার জনক সুকুমার বড়ুয়া। তিনি বাংলাদেশের একজন নন্দিত ছড়াশিল্পী। তার ছন্দকুশলতা, ভাবনার স্বকীয়তা এবং বিষয়ের চমক পাঠকের মনে মুহূর্তেই আনন্দ সঞ্চার করে। তিনি লিখেছেন–

অসময়ে মেহমান

ঘরে ঢুকে বসে যান

বোঝালাম ঝামেলার

যতগুলো দিক আছে

তিনি হেসে বললেন,

ঠিক আছে ঠিক আছে।

 

সুকুমার বড়ুয়ার জন্ম ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মধ্যম বিনাজুরি গ্রামে। তার বাবার নাম সর্বানন্দ বড়ুয়া এবং মা কিরণ বালা বড়ুয়া। চট্টগ্রামের গহিরা গ্রামের শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র বড়ুয়ার মেয়ে ননী বালার সাথে ১৯৬৪ সালের ২১ এপ্রিল তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। ব্যক্তিগত জীবনে সুকুমার বড়ুয়া তিন মেয়ে এবং এক ছেলের জনক।

বর্ণজ্ঞান থেকে প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি মামা বাড়ির স্কুলে পড়াশোনা করেছেন৷ এরপর বড় দিদির বাড়িতে এসে তিনি ডাবুয়া খালের পাশে ‘ডাবুয়া স্কুল’-এ ভর্তি হন৷ কিন্তু সেই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।

অল্প বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন সময় মেসে কাজ করেছেন। জীবিকা নির্বাহের জন্য একটা সময় তিনি ফলমূল, আইসক্রিম, বুট বাদাম ইত্যাদি ফেরি করে বিক্রি করেছেন৷ ১৯৬২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে চৌষট্টি টাকা বেতনের চাকরি হয় তার৷ ১৯৭৪ সালে পদোন্নতি হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কিপার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

তিনি কর্মজীবনে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছড়া রচনায় ব্যাপৃত। বিষয়-বৈচিত্র্য, সরস উপস্থাপনা, ছন্দ ও অন্তমিলের অপূর্ব সমন্বয় তার ছড়াকে করেছে স্বতন্ত্র। প্রাঞ্জল ভাষায় আটপৌঢ়ে বিষয়কেও তিনি ছড়ায় ভিন্নমাত্রা দেন। তার ছড়া একাধারে বুদ্ধিদীপ্ত, তীক্ষ্ণ, শাণিত আবার কোমলও বটে। প্রায় ৬০ বছর ধরে ছড়া লিখে সুকুমার বড়ুয়া ‘ছড়ারাজ’, ‘ছড়াশিল্পী’, ‘ছড়াসম্রাট’ ইত্যাদি নানা অভিধায় অভিষিক্ত হয়েছেন। ব্যঙ্গাত্মক, হাস্যরসাত্মক, নৈতিক শিক্ষামূলক রচনার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর রাজনৈতিক বার্তাও তার লেখায় এসেছে। ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘ভিজে বেড়াল’, ‘চন্দনা রঞ্জনার ছড়া’, ‘এলোপাতাড়ি’, ‘নানা রঙের দিন’, সুকমার বড়ুয়ার ১০১টি ছড়া, ‘চিচিং ফাঁক’, ‘কিছু না কিছু’, ‘প্রিয় ছড়া শতক’, ‘নদীর খেলা’, ছোটদের হাট, মজার পড়া ১০০ ছড়া, সুকুমার বড়ুয়ার ছড়াসম্ভার (২য় খণ্ড), ‘যুক্তবর্ণ’, ‘চন্দনার পাঠশালা’, ‘জীবনের ভেতরে বাইরে’ সুকুমার বড়ুয়ার উল্লেখযোগ্য ছড়ার বই। ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য সরকার ২০১৭ সালে সুকুমার বড়ুয়াকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সম্মাননা, অবসর সাহিত্য পুরস্কার, আনন ফাউন্ডেশন আজীবন সম্মাননা, চন্দ্রাবতী শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা তিনি পেয়েছেন।

শেয়ার করুন
আরও সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয়

সুহৃদ চৌধুরী শুধু মানুষ গড়ার কারিগর নয়, ছিলেন একজন সমাজহিতৈষী ও দক্ষ সংগঠক

You cannot copy content of this page

ছড়া সম্রাট সুকুমার বড়ুয়ার জন্মদিবস আজ

আপডেট সময় ০৫:৫০:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫

‘এমন যদি হতো

ইচ্ছে হলে আমি হতাম

প্রজাপতির মতো।’

এমন সব মজার মজার ছড়ার জনক সুকুমার বড়ুয়া। তিনি বাংলাদেশের একজন নন্দিত ছড়াশিল্পী। তার ছন্দকুশলতা, ভাবনার স্বকীয়তা এবং বিষয়ের চমক পাঠকের মনে মুহূর্তেই আনন্দ সঞ্চার করে। তিনি লিখেছেন–

অসময়ে মেহমান

ঘরে ঢুকে বসে যান

বোঝালাম ঝামেলার

যতগুলো দিক আছে

তিনি হেসে বললেন,

ঠিক আছে ঠিক আছে।

 

সুকুমার বড়ুয়ার জন্ম ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মধ্যম বিনাজুরি গ্রামে। তার বাবার নাম সর্বানন্দ বড়ুয়া এবং মা কিরণ বালা বড়ুয়া। চট্টগ্রামের গহিরা গ্রামের শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র বড়ুয়ার মেয়ে ননী বালার সাথে ১৯৬৪ সালের ২১ এপ্রিল তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। ব্যক্তিগত জীবনে সুকুমার বড়ুয়া তিন মেয়ে এবং এক ছেলের জনক।

বর্ণজ্ঞান থেকে প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি মামা বাড়ির স্কুলে পড়াশোনা করেছেন৷ এরপর বড় দিদির বাড়িতে এসে তিনি ডাবুয়া খালের পাশে ‘ডাবুয়া স্কুল’-এ ভর্তি হন৷ কিন্তু সেই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।

অল্প বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন সময় মেসে কাজ করেছেন। জীবিকা নির্বাহের জন্য একটা সময় তিনি ফলমূল, আইসক্রিম, বুট বাদাম ইত্যাদি ফেরি করে বিক্রি করেছেন৷ ১৯৬২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে চৌষট্টি টাকা বেতনের চাকরি হয় তার৷ ১৯৭৪ সালে পদোন্নতি হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কিপার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

তিনি কর্মজীবনে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছড়া রচনায় ব্যাপৃত। বিষয়-বৈচিত্র্য, সরস উপস্থাপনা, ছন্দ ও অন্তমিলের অপূর্ব সমন্বয় তার ছড়াকে করেছে স্বতন্ত্র। প্রাঞ্জল ভাষায় আটপৌঢ়ে বিষয়কেও তিনি ছড়ায় ভিন্নমাত্রা দেন। তার ছড়া একাধারে বুদ্ধিদীপ্ত, তীক্ষ্ণ, শাণিত আবার কোমলও বটে। প্রায় ৬০ বছর ধরে ছড়া লিখে সুকুমার বড়ুয়া ‘ছড়ারাজ’, ‘ছড়াশিল্পী’, ‘ছড়াসম্রাট’ ইত্যাদি নানা অভিধায় অভিষিক্ত হয়েছেন। ব্যঙ্গাত্মক, হাস্যরসাত্মক, নৈতিক শিক্ষামূলক রচনার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর রাজনৈতিক বার্তাও তার লেখায় এসেছে। ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘ভিজে বেড়াল’, ‘চন্দনা রঞ্জনার ছড়া’, ‘এলোপাতাড়ি’, ‘নানা রঙের দিন’, সুকমার বড়ুয়ার ১০১টি ছড়া, ‘চিচিং ফাঁক’, ‘কিছু না কিছু’, ‘প্রিয় ছড়া শতক’, ‘নদীর খেলা’, ছোটদের হাট, মজার পড়া ১০০ ছড়া, সুকুমার বড়ুয়ার ছড়াসম্ভার (২য় খণ্ড), ‘যুক্তবর্ণ’, ‘চন্দনার পাঠশালা’, ‘জীবনের ভেতরে বাইরে’ সুকুমার বড়ুয়ার উল্লেখযোগ্য ছড়ার বই। ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য সরকার ২০১৭ সালে সুকুমার বড়ুয়াকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সম্মাননা, অবসর সাহিত্য পুরস্কার, আনন ফাউন্ডেশন আজীবন সম্মাননা, চন্দ্রাবতী শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা তিনি পেয়েছেন।