বাংলাদেশ, ভারত ছাপিয়ে এবার বুদ্ধ সংকীর্তন করতে ফ্রান্স আসছেন দেশের প্রথম মহিলা বৌদ্ধ কীর্তনীয়া জুসি বড়ুয়া।
রবিবার (২৮ মে ) স্থানীয় সময় বিকালে ইন্টারন্যাশনাল বুড্ডিস্ট কাউন্সিল অব ফ্রান্সের উদ্যোগে প্যারিসের ফ্রান্সের প্যারিসের প্যালেস টু টরসির একটা হলরুমে বুদ্ধ পূর্ণিমা অনুষ্ঠানে বুদ্ধ সংকীর্তন পরিবেশন করবেন।
এছাড়া প্যারিসের স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ তার সাথে অংশ নেবেন।
তিনি আজ ২৪ মে ভোরে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্রাইটে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।
জুসি বড়ুয়া তথাগত অনলাইনকে বলেন, দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে বুদ্ধ কীর্তন কে সমাদৃত করার লক্ষ্যে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে যাচ্ছি। বুদ্ধ কীর্তনের শিরোমনি শ্রদ্ধেয় শাক্যমিত্র বড়ুয়া গেয়েছেন “আমি বুদ্ধের নামে সংকীর্তনে সারাটি বিশ্ব ঘুরিবো”” আমিও সেই মন্ত্রে আজ ফ্রান্সে বুদ্ধ কীর্তন পরিবেশন করতে যাচ্ছি। এই অনুভূতি গুলো ভাষায় হয়তো প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
জুসি বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি অতীত অতীত জন্মের পূন্যপারমীর ফলে আমি এমন দূর্লভ সুযোগ লাভ করেছি। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়িয়ে এবার ফ্রান্সে যাচ্ছি বুদ্ধ কীর্তন শোনাতে।
তিনি আরো বলেন, আমার লক্ষ্য হলো দেশে বলুন, প্রবাসে বলুন– যেই সকল নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা আছে তারা অনুভব করুক বুদ্ধ কীর্তন সুধা। তারা জানুক — কি আছে বুদ্ধ কীর্তনে, বুদ্ধ কীর্তন গাইলে কতটা উপকৃত হবে এই সমাজ, অন্যান্য গানের পাশাপাশি বুদ্ধ কীর্তন চর্চ্চা করুক সকলে এবং প্যারিসেও এক ঝাঁক তরুণী বুদ্ধ কীর্তন গাইবে একি মঞ্চে আমার সাথে। আমি ভাবতে পারিনি কখনো- যে বুদ্ধ কীর্তনের জন্য অন্যান্য গান ছেড়েছি সেই বুদ্ধ কীর্তন আজ আমাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দাড় করাবে। আমি স্বার্থক,আমার প্রচেষ্টা স্বার্থক। বাকি পথ বুদ্ধ সংকীর্তন মুখে নিয়েই মৃত্যু বরণ করতে চাই।
একটা সময় ছেলে মেয়েরা বুদ্ধ কীর্তন বললে লজ্জা পেতো, এটা আবার কোন বিষয় হলো নাকি- এমনো শুনেছিলাম। আর এখন বুদ্ধ কীর্তন গাইতে সকলেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং গর্ববোধ করে।
উল্লেখ্য, দেশের বর্তমান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে কীর্তনীয়া হিসেবে সুপরিচিত নাম জুসি বড়ুয়া। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কধুরখীলে জন্মজাত এই শিল্পী মাত্র ৯ বছর বয়সে স্থানীয় মিঠু চৌধুরীর কাছে সর্বপ্রথম গানের তালিম নেওয়া শুরু করেন। এরপর প্রায় ৪ বছর ওস্তাদ মিহির লালার কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নেন। তবে নবম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মঞ্চে গান গাওয়া শুরু। বিভিন্ন মঞ্চের পাশাপাশি জুসি বড়ুয়াকে গ্রামের কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হতো, বিশেষ করে অনেক শিল্পীর মাঝে সবসময় দর্শকদের চাহিদা থাকতো প্রথমে ধর্মীয় গান দিয়ে শুরু করতে হবে। তাই তার ধর্মীয় গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হতো। এভাবে অনেক কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে ধর্মীয় গান গাইতে গাইতে তিনি বৌদ্ধ ধর্মীয় গান শেখার প্রতি মনোনিবেশ করেন।
সকলের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে এখন গানের অন্য সব মাধ্যম ছেড়ে শুধুমাত্র বুদ্ধ কীর্তনকে ধ্যান ও জ্ঞান হিসবে নিয়েছেন এ বৌদ্ধ কীর্তনিয়া।