ফটিকছড়ি উপজেলার অন্তর্গত ১৮ নং ধর্মপুর ইউনিয়নের ফরাঙ্গীরখীল গ্রামবাসীদের উদ্যোগে গৌতম মনি বৌদ্ধ বিহারে ধুতাংগ সাধক ভদন্ত ডঃ এফ দীপংকর মহাথের’র জন্মভূমিতে ৫২তম জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে শুক্রবার (১মার্চ) ভোর ৭টায় ধর্মীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ৭.৩০ মিনিটে পিন্ডচরণ শুরু হয়। দশদিন ব্যাপী বিশ্বের সকল প্রাণীসহ সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের মঙ্গল সুখ কামনা করে অষ্ঠপরিষ্কার, সংঘদান,পিন্ডচরণ,একক দেশনা,নগর ভ্রমণ, পাশ্ববর্তী গ্রামে ধর্ম দেশটা প্রদান ও বিদর্শন ভাবনা সহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলে। এরপর দূর দূরান্ত থেকে আগত হাজার হাজার পুণ্যাথীদের পদচারণায় বাদ্য যন্ত্র সহকারে রাজকীয়ভাবে ফরাঙ্গীরখীল সাত দিন্না মহাশ্মশান ভাবনা কেন্দ্র থেকে বিহার মঞ্চ প্রাঙ্গণে আগমন করেন ভদন্ত ডঃ এফ দীপংকর মহাথের।
সকাল ও বিকাল দুই পর্বের অনুষ্ঠানে পবিত্র ত্রিপিটক থেকে মঙ্গলাচরণ পাঠ করেন যথাক্রমে ভদন্ত ডঃ এফ দীপংকর মহাথের ছোট ভাই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সেমন্ত বড়ুয়া ও পিপ্পলি শ্রামণ। সকাল থেকেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় দীপঙ্কর ভান্তের নিজ জন্ম জনপদ ফরাঙ্গীরখীল গ্রাম। এসময় ফরাঙ্গীরখীল গৌতমমনি বৌদ্ধ বিহারে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না, চতুর্দিকে হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ডঃ দীপংকর মহাথের ভান্তের ফরাঙ্গীরখীল গ্রাম। ফ্রান্স প্রবাসী শিল্পী ইকন বাবুর কথায়, প্রিয়ন্তী বড়ুয়া ও তার সহযোগী দল এবং শিল্পী সাধন বড়ুয়া, হারমোনিয়ামে জনি বড়ুয়া ও তবলায় রূপক বড়ুয়ার উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে বিশ্বের শান্তি ও গুরুভান্তের সাধনা জীবনের শতায়ু ও নীরোগ দীর্ঘায়ু কামনায় ৫২ টি শান্তির পায়রা অবমুক্ত করেন। কেক কেটে পুষ্প স্তবক প্রদান করার পর সমাজকে উজ্জীবিত করার মানসে জীবিত অবস্থায় ভদন্ত ডঃ এফ দীপংকর মহাথের মাতা পুটি রানী বড়ুয়ার মুখে আহার তুলে দেন ডঃ এফ দীপংকর মহাথের ।
অধ্যাপক মানিক বড়ুয়া ও যিশু বড়ুয়ার সাবলীল সঞ্চালনায় পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন বাবু রতন বড়ুয়া ও বৃষ্টি বড়ুয়া।অষ্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিনিধিগণ পুষ্প দিয়ে ভদন্ত ডঃ এফ দীপংকর মহাথেরকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় ভদন্ত ডঃ এফ দীপংকর মহাথেরর মাতাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, শিক্ষক দুলাল কান্তি বড়ুয়া ও লায়ন নিপু বড়ুয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, বান্দরবান আর্য গুহা ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারের প্রধান দায়ক প্রসন্ন তঞ্চঙ্গ্যা ও প্রধান সেবিকা হ্যাপি চাকমা। ধর্মের জন্য নিজের জীবন কেন উৎসর্গ করেছেন? এবং বৌদ্ধ ধর্মের মূল মেসেজটা কি? এই দুই প্রশ্ন করেন প্রশ্নোত্তর পর্বে দৈনিক আজাদী ফটিকছড়ি প্রতিনিধি সাংবাদিক মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন ও কোরিয়া-বাংলা প্রেস ক্লাবের ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক অসীম বিকাশ বড়ুয়া।পরে ভদন্ত ডঃ এফ দীপংকর মহাথের দীর্ঘ আলোচনায় উত্তর প্রদান করেন এবং আগত পুণ্যার্থীদের প্রতি বিভিন্ন ধর্মোপদেশ প্রদান করেন।
তিনি বলেন,মানব জীবন তথা সংসার জীবন দুঃখময়, আমি যাবতীয় দুঃখ থেকে মুক্তির জন্য সর্বোপরি নির্বাণ সাক্ষাৎ করার জন্য যাবতীয় সুখ তথা ভোগরাজ্য ত্যাগ করেছি।আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করার লোভনীয় প্রস্তাব গ্রহণ না করে গভীর অরণ্যে তপস্যা করার জন্য চলে এসেছি গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তিত ও প্রশংসিত ধুতাঙ্গ ব্রত জীবনে।
সকাল,দুপুর ও বিকেল এই তিন পর্বের অনুষ্ঠান শেষে রাত ৮টায় বায়ান্নটি মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে ৫২টি আকাশ প্রদীপ ফানুস উত্তোলন করে। এসময় ভক্তরা নাচে গানে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠার পর ৫২ টি আতশবাজি পোড়ানো সহ বিশিষ্ট বুদ্ধ কীর্তনীয়া বিকাশ দত্ত ও টেলিভিশন শিল্পী কবিয়াল নিরঞ্জন ঘোষের পাল্টা কীর্তনের চলে রাত জুড়ে।এ সময় ভদন্ত ডঃ এফ দীপংকর মহাথের ও অনুষ্ঠানের সার্বিক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজয় বড়ুয়া,উত্তম বড়ুয়া ,জিতন বড়ুয়া,বিপন বড়ুয়া,রুবেল বড়ুয়া,রিপন বড়ুয়া,সাগর বড়ুয়া,আশিক বড়ুয়া তীর্থ,ইমন বড়ুয়া,সৌরভ বড়ুয়া,টনি বড়ুয়া,সৌরভ বড়ুয়া পাপ্পু,প্রান্ত বড়ুয়া,শ্রীমান বড়ুয়া ,রিমন বড়ুয়া ও শাওন বড়ুয়া নয়ন সহ অনেক সদস্য।
পরিশেষে ২০২৭ সালে আরো মহাসমারোহে ভদন্ত ডঃ এফ দীপংকর মহাথের জন্মদিন পালন করার ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মাস্টার দুলাল কান্তি বড়ুয়া, রতন বড়ুয়া,লায়ন নিপু কান্তি বড়ুয়া ও প্রবাসী ভাগ্যধর বড়ুয়া কানু সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে ডঃ এফ দীপংকর মহাথের ভান্তের ৫২ তম জন্মদিন অনুষ্ঠান সমাপ্তি হয়।