প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ক্রম বিবর্তনের মধ্য দিয়ে ১০০০০-৬০০ খৃীঃ পূর্বের মানুষের জীবনধারা, রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থা পরিবর্তন সূচিত হতে থাকে। বৈদিক যুগ ১০০০ খৃীঃ পূর্বে ‘বর্ণাশ্রম’ প্রথা সুস্পষ্ট রূপ ধারণ করে। চতুর্বর্ণ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র প্রথা সুস্পষ্ট রূপ ধারণ করে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় কর মুক্ত ছিল। বৈশ্য ও শূদ্র করদাতা। তখন ব্রাহ্মণদের অত্যাচার বৃদ্ধি পেতে থাকে। ব্রাহ্মণদের আচার অনুষ্ঠান যজ্ঞের প্রাধান্য লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যায়। ‘বর্ণাশ্রম’ প্রথার আড়ালে শোষণ বৃদ্ধি পায়। ব্রাহ্মণরা ক্রীতদাসীর নামে নারীদের লাভ করতে মরিয়া হয়ে উঠে। অঙ্গ রাজ্যের শাসকগণ বাধ্য হয়ে ১০০০০ ক্রীতদাসী ব্রাহ্মণদের ভোগের জন্য দিয়েছিল। এইসব অনাচারের প্রতিবাদ হল ধর্ম আন্দোলন। সৃষ্টি হয় ব্রাহ্মণবাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বর বিরোধী ধর্ম আন্দোলন। জৈনধর্ম ও বুদ্ধ ধম্ম। এই ধর্ম গুলো উপনিষদের চিন্তাধারার উত্তরসূরি ছিল, কিন্ত ব্রাহ্মণ ধর্মের বৈদিক ঈশ্বর, দেবদেবীর অস্তিত্ব ও ব্রাহ্মণ আধিপত্যকে অস্বীকার করেছিল। এর ফল স্বরূপ রাজগৃহ, চম্পা, কৌশাম্বী, বেনারস, শ্রাবস্তীর মতন বিশটি নগর গঙ্গা অববাহিকায় ৭০০-৬০০ খৃীঃ পূর্বে গড়ে উঠে। এবং জৈনধর্ম অনুসারে ৩৬৩ টি নতুন ধর্মমত এবং বৌদ্ধ সূত্রানুসারে ৬২টি নতুন ধর্মমত গড়ে উঠে।
ঋগ্ বৈদিক যুগে দেবতাদের পিতা ‘দ্যৌ’ ও মাতা ‘পৃথিবী’ । এখানে দেবতাদের রাজার প্রয়োজন হয়, সৃষ্টি হয় ইন্দ্র। আগের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেবতা বরুণের নিম্ন গামী হয়। বরুণ ইন্দ্রের কাছে পরাজিত। ইন্দ্র ছিল অসুর ও দৈত্যদের যুদ্ধের সেনাপতি। যে ইন্দ্রকে ঋগ্ বেদে বলা হচ্ছে ধ্বংসকারী কলহপ্রিয় অনৈতিক দেবতা, তাই তার অপর নাম পুরন্দর, তিনি আবার সুখাদ্য ও সোমরসে আসক্তিযুক্ত। ইন্দ্রের কর্ম কৃতি নিয়ে ঋগ্ বেদে ২৫০টি স্তোত্র রচিত আছে। এরপর সব দেবতাদের অসুরের দৈত্যদের উপর এক প্রভাবশালী দেবতার প্রয়োজন হলো। সৃষ্টি হলো শিব। এই যুগে ব্রহ্মা বা প্রজাপতি ছিল দেবতাদের প্রধান। বিষ্ণু বরুণের স্থান দখল করলো। অনার্য সংস্কৃতির প্রভাবে রুদ্র আর শিব অভিন্ন হয়ে উঠলো।
সুতারাং ঐতিহাসিক পেক্ষাপট বিচারে বুদ্ধ ধম্মে ঈশ্বর সমন্ধে অবস্থান, স্বর্গ নরকের ব্যাখ্যা বা জন্মান্তরবাদ ঐ সময়ের ধম্ম আন্দোলনের ফসল। তা অবশ্যম্ভাবী ছিল।সুতরাং বুদ্ধ ধম্মে দেবতাদের টানাটানি, আহ্বান, বিহারে দেবতাদের মুর্তি এসবের গুরুত্ব আছে কি। কারণ ব্রাহ্মণ্যবাদের এসবের বিরুদ্ধেই বৈদিক যুগের ধর্ম আন্দোলন। সুতরাং বুদ্ধ ধম্মকে যুক্তি, ঐতিহাসিক ঘটনার পেক্ষাপট ও বাস্তবতার আলোকে জানতে ও বুঝতে হবে। অন্ধ বিশ্বাস থেকে নয়।
লেখক: কথা সাহিত্যিক, কবি ও প্রাবন্ধিক