বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বৌদ্ধ নেতা, একুশে পদক প্রাপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া (৭৯) আর নেই। অনিচ্চা বত সাংখারা…..
বুধবার (১৬ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২.৪৫ মিনিটে রাজধানীর ল্যাব-এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
কয়েকদিন আগে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হন। একটু সুস্থবোধ করলে তাকে ল্যাব-এইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
তিনি দুই মেয়ে, নাতি-নাতনি, আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া রাউজান উপজেলার আবুরখীল এই গ্রামের এক সভ্রান্ত বৌদ্ধ পরিবারে সমাজ সেবক কৈলাশ বড়ুয়া ও মল্লিকা বড়ুয়ার গর্ভে জম্ম নেন । ডাক নাম ছিল বটু। প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু আবুরখীল অমিতাভ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৫২ সালে । তার প্রতিভা দেখে বিদ্যালয়ের মৌলভী শিক্ষক নতুন নামকরন করেন বিকিরন প্রসাদ বড়ুয়া । সেই থেকে বিকিরন আলো ছড়াতে থাকে সর্বক্ষেত্রে । এরপর আবুরখীল অমিতাভ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ।১৯৬৫সালে একই কলেজ থেকে পদার্থ বিদ্যায় স্নাতক সম্মান পাশ করেন ।১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি পাশ করেন ।১৯৭৫ সালে পোষ্ট এমএসসি এসোসিয়েটশীপ ডিপ্লোমা নেন ভারতের কোলাকাত সাহা ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এর উপর ।১৯৮২ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইস ডি করেন।
এরপর শুরু হয় শিক্ষকতা জীবন আবুরখীল অমিতাভ উচ্চ বিদ্যলয় , কক্সবাজার কলেজ, রাংগুনীয়া কলেজ , চট্টগ্রাম কলেজ , সরকারী সিটি কলেজ, সহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন ১৯৮৪সালে । ডক্টর বড়ুয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও পালন করেন । ২০১০সালে প্রফেসর হিসেবে অবসর গ্রহন করেন । ড. বড়ুয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশেষ অবদান রাখেন , তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ।
তিনি বিশ্বের অনেক জায়গায় শিক্ষা , গবেষনা , সম্মেলন , পদার্থবিদ্যা ও সিম্পোজিয়ামে যোগদান করেন ।তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য , জাপান, কানাডা, কোরিয়া , থাইল্যান্ড, রাশিয়া , ইতালী , শ্রীলংকা ।
তিনি বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘের একজন নেতা হিসেবে বিশ্বের অনেক বৌদ্ধ রাষ্ট্রের আমন্ত্রনে বিভিন্ন সম্মেলনে ও যোগদান ও বক্তব্য প্রদান করেন ।
আবুরখীলের কৃতি সন্তান ড. বড়ুয়া মানবতা , ধর্ম ও সমাজকর্ম শিক্ষার জন্য অনেক পুরস্কারে সম্মানিত হন । উল্লেখ যোগ্য পুরস্কার, সম্মাননা গুলোর মধ্যে আছেন বিভাগীয় সমাজকল্যান ফেডারেশন কতৃক রাউজান উপজেলার শ্রেষ্ঠ সমাজকর্মী ১৯৮৮ সালে ।দক্ষিন কোরিয়া থেকে সার্টিফিকেট অব মেরিট , আবুরখীল কতৃক দেশবন্ধু, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান পরিষদ স্বর্নপদক, ঢাকা মাদার তেরেসা গবেষনা পরিষদ কতৃক মাদার তেরেসা মেমোরিয়াল এ্যাওয়ার্ড, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কতৃক ২০১৭সালে একুশে সম্মাননা সহ দেশে বিদেশে প্রায় অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভুষিত হয়েছেন এই শিক্ষাবিদ ।
তিনি অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্য হিসেবে জড়িত আছেন । উল্লেখ যোগ্য প্রতিষ্টান গুলোর মধ্যে গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন আবুরখীল জনকল্যান সমিতি বাংলাদেশ , আবুরখীল জনকল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয় , ধর্মরাজিক উচ্চ বিদ্যালয় ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য , প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অগ্রসার বালিকা মহাবিদ্যালয় , বৃহত্তর চট্টগ্রাম বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষনা পরিষদেরর সভাপতি, প্রাক্তন সভাপতি বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্ঠি প্রচার সংঘ যুব , অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ মুসলিম , হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্ঠান ঐক্য পরিষদ ।
ড. বড়ুয়া বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন এবং অনুবাদ করেন । তার মধ্যে প্রিয়ানন্দ মহাজীবন , পরিপূর্নতা ও মুক্তি, সমতা ও শান্তি , বিজ্ঞান বিষয়ক বই বিজ্ঞানালো সহ আরো বেশ কিছু বই রয়েছে ।
সহধর্মীনি ছিলেন সরকারী কলেজের অধ্যাপিকা পরবর্তিতে সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহন করেন । প্রফেসর প্রীতিকনা বড়ুয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন প্রফেসর বড়ুয়া একি গ্রামের আরেক সভ্রান্ত বৌদ্ধ পরিবারের সাথে । কিছুদিন আগে বড়ুয়ার স্ত্রী মারা যান । তারপর ও সেই শোক কাটিয়ে মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত । শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করেন।
তিনি সারাটি জীবন শিক্ষা, সমাজ ও মানবতার জন্য কাজ করেছেন সমাজের নিবেদিত প্রান হয়ে ।